কমলগঞ্জে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীর আগুনে ঝলসে মৃত্যু !

    0
    504

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১১আগস্ট,শাব্বির এলাহীঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে শর্মিলী নামের এক ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামে।

    জানা যায়, কান্দিগাঁও গ্রামের কনর মিয়ার মেয়ে স্থানীয় তেতইগাঁও রশিদ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী শর্মিলী আক্তার সাথে আদকানি গ্রামের সাবউদ্দিন আহমদ ওরফে আকল মিয়ার ছেলে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের অনার্স (১ম বর্ষ) গণিত এর ছাত্র শাওন আহমদ (১৮) সাথে দীর্ঘ দিন ধরে প্রেম দেয়া নেয়া চলছিল।

    এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রায় ৬ মাস পূর্বে ভালাবাসার টানে শাওন বাড়ি ছেড়ে চলে আসে শর্মিলীর কাছে। এক পর্যায়ে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক (সামাজিক ভাবে) তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এর নিকট থেকে বয়স বাড়িয়ে একটি জন্মনিবন্ধন কার্ড আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। চেয়ারম্যান আইননুযায়ী বয়স কম থাকায় তা প্রদান করেনি। শাওন ঘর জামাই হিসাবে শর্মিলীদের বাড়িতে বসবাস করছিল। বিয়ের পর তাদের ভালাবাসার সুখের সংসার ভাল চলছিল।

    গত সোমবার (৩ আগষ্ট) রাত ৯ঘটিকায় শর্মিলী নিজ ঘরে পড়াশুনা করা অবস্থায় হঠাৎ আগুনের বাতি থেকে পড়নের কাপড়ে আগুন লেগে যায়। স্থানীয়রা ও শাওন মসজিদ থেকে বের হয়ে চিৎকার শুনতে পারলে দৌড়ে বাড়িতে গিয়ে চাদর দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়, এর ভিতরে ঝলসে যায় শরীর।

    আহত অবস্থায় শর্মিলীকে প্রথমে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২দিন থাকার পর অবস্থার আরও অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (৬ আগষ্ট) রাতে মৃত্যু হয়। শুক্রবার (৭ আগষ্ট) নিজ বাড়ি কান্দিগাঁও গ্রামের কবর স্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।

    শর্মিলীর পিতা কনর মিয়া এ প্রতিনিধিকে কান্না জড়ি কন্ঠে জানান, ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। আমার পরিবারও ছিলেননা। মেয়েটা কিভাবে যে আগুনে পুড়লো বুঝতে পারছিনা।

    শর্মিলী স্বামী শাওন আহমদ এ প্রতিনিধিকে জানান, ঘটনার সময় আমি মসজিদে নামাজ পড়তে যাই। নামাজ শেষে চিৎকার শুনে দৌড়ে বাড়িতে গিয়ে দেখি শর্মিলীর গায়ে আগুন। আমি সাথে সাথে আগুন নিভাতে সক্ষম হই। পরে তাকে নিয়ে হাসপাতালে যাই। শর্মিলী আমাকে জানিয়েছে, পড়ার সময় আগুনের বাতি থেকে হঠাৎ আগুন লেগে এ ঘটনা ঘটে।

    শাওন এর পিতা সাবউদ্দিন ওরফে আকল মিয়া জানান, আমার ছেলে মৌলভীবাজার সরকারী কলেজে অনার্স (১ম বর্ষে) চলতি বছরে পরীক্ষা দিয়েছে। প্রায় ৬ মাস পূর্বে কান্দিগাঁও গ্রামের কনর মিয়ার মেয়ের সাথে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক সামাজিক ভাবে তাদের বিয়ে হয়। ছেলে ঘর জামাই হিসাবে মেয়ের বাড়িতে থাকতো। বিয়েতে আমার ইচ্ছা ছিল না। আমি বলেছিলাম তাদের মধ্যে যখন প্রেম ভালাবাসা রয়েছে, পূর্ণ বয়স হলে বিয়ে হবে। তারপরও ছেলে আমার বাড়ি থেকে চলে গিয়ে বিয়ে করলো। আমি তাদেরকে মনে প্রাণে দোয়া করেছি তারা সুখে থাকুক। এরই মধ্যে মেয়ের দূর্ঘটনা ঘটে গেল।

    এ ঘটনার পর কনর মিয়া আমার ছেলেকে তাদের বাড়িতে না আসার জন্য বলায় গত ৯ আগষ্ট রোববার শাওন বাড়িতে চলে আসে। ভালাবাসার মানুষটি হারিয়ে শাওন এখন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছে।

    সোমবার ১০ আগষ্ট মুঠোফোনে আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদ ভূঁইয়া আগুনে জ্বলে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন।