কমলগঞ্জে ৩০নভেম্বর মণিপুরীদের রাস উৎসব সীমিত পরিসরে

    0
    494

    জহিরুল ইসলাম.স্টাফ রিপোর্টার: বৃহত্তর সিলেটের ক্ষদ্র নৃ-তাত্ত্বিক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্যতম বিশ্বনন্দিত সাংস্কৃতিক ধারক মণিপুরী সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা সোমবার ৩০ নভেম্বর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরের অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কমলগঞ্জের আদমপুর ও মাদবপুর এলাকার মুণিপুরী পাড়ায় জমকালো আয়োজনে রাস লীলা উৎসবটি আয়োজন করা হয়।করোনার কারনে এবার ঘটবে না লক্ষাধীক দশর্নার্থী আগমন,থাকবে না অন্যান্য সময়ের মত জনস্রোত। প্রতিবছর এ উৎসবে প্রায় ২ লক্ষাধিক দশর্নার্থীর সমাগম ঘটে বলে আয়োজকরা জানান। এবছর কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড় মন্ডপে পূর্ণ হচ্ছে ১৭৮তম রাস উৎসব। মাধবপুরের রাসমেলার আয়োজক হচ্ছে মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘ। মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়।

    সোমবার দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য।রাতে জোড়া মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। তুমুল হৈচৈ, আনন্দ উৎসাহ ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনীর মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মের অবতার পুরুষ শ্রী কৃষ্ণ ও তার সখি রাধার লীলাকে ঘিরে এই একটি দিন বছরের আর সব দিন থেকে ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে কমলগঞ্জবাসীর জন জীবনে। মুণিপুরী নৃত্যের সাথে রাসলীলার নিত্য অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।তা উপভোগ করতে দেশও বিদেশের বিভিন্ন দর্শনার্থী উপস্থিত হন কমলগঞ্জের মনিপুরী পাড়ায়।কমলগঞ্জের আদমপুর ও মাধবপুর এলাকায় রয়েছে মনিপুরী কমপ্লেক্স।২টি স্থানের প্রতিবছর জমকালো আয়োজনে উৎসবটি তবে এটি এবার সীমিত আকারে। কমলগঞ্জের আদমপুর মুনিপুরী পাড়ায় এবারের রাস উৎসবে প্রতি বছর শারদ পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠিত এরাসলীলায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে, আসেন দেশ বিদেশের দর্শনার্থীরা। প্রতি বছর নির্ধারিত তিথিতে এরাসলীলা উদযাপন করা হয়।রাসলীলা উৎসবে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা দীর্ঘ ১ মাস থেকে ওজার (গুরুজী) কাছ থেকে নৃত্য প্রশিক্ষণ নেন। রাসনৃত্যও গোলাকার ম-পে কখনও একক,কখনও দ্বৈত এবং কখনও দলবেঁধে পরিবেশিত হয়।রাসনৃত্যের মূল বিষয় বস্তু হলো রাধা ও তার সখাদের নিয়ে। এ নৃত্যে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের শুরু, মান-অভিমান এবং শেষে মিলন দেখানো হয়।

    সন্ধ্যার পর শুরু হয় রাসপূর্ণিমার রাসলীলা বা রাসনৃত্য।রাস নৃত্য পরিবেশনা করে মণিপুরি কুমারী মেয়েরা।রাস নৃত্যের সময়ও পলয় পরা হয়।পলয় পোশাকের মাথার উপরিভাগের নাম ‘কোকুতম্বি’। রাসপূর্ণিমায় রাসলীলা উৎসবের শুরুটা হয় গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য দিয়ে।এ নৃত্য হয় সকালে।যারা রাখাল নৃত্য করে, তারা প্রথমে ম-পে গোল হয়ে গোপী ভোজন করে। গোপী ভোজন হল বিভিন্ন সবজি দিয়ে রান্না করা তরকারি ও ভাত।এ খাবার খেয়েই রাখাল নৃত্য শুরু করে শিল্পীরা।সকালে শুরু হয়ে রাখাল নৃত্য একটানা চলে বিকেল পর্যন্ত। মণিপুরি শিশু-কিশোররা এ নৃত্য পরিবেশন করে।যারা নৃত্য করে, তারা এক ধরনের বিশেষ পোশাক পরে। ঝলমলে এ বিশেষ পোশাকের নাম ‘পলয়’।এ পোশাকের পরিকল্পনা করেছিলেন রাজা ভাগ্যচন্দ্র। রাখাল নৃত্যের মূল বিষয় বস্তু হলো কৃষ্ণ ও তার সাথীদের নিয়ে। গোলাকার  মণ্ডপে কখনও একক, কখনও দ্বৈত এবং কখনও দল বেঁধে এ নৃত্য পরিবেশিত হয়। রাখাল নৃত্যের পাশাপাশি দিনভর চলতে থাকে মণিপুরিদের নিজস্ব সংস্কৃতির কর্মকাণ্ড।

    কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক ও কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফুর রহমান বলেন, রাসোৎসবে নিরাপত্তার জন্য দুই জায়গাতেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অন্ষ্ঠুানে নিরাপত্তায় পুলিশের তিন স্তরের ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। তবে এবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিাধ মেনে সীমিত পরিসরে ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে মণিপুরী রাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলার অনুমতি দেয়া হয়নি। লোকসমাগম সীমিত করা হবে।

    ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে মণিপুরের মহারাজ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে যে নৃত্যগীতের প্রবর্তন করেন তাই রাস নৃত্য। মহারাজার মৃত্যু ১০০ বছর পরে মহারাজ চন্দ্রকীর্তির শাসনামলে গোটা রাস নৃত্য আচৌকা,বৃন্দাবন, খুডুম্বা, গোস্ট, গোস্ট বৃন্দাবন, আচৌবা বৃন্দাবনসহ নানা ভঙ্গির পর্যায়ে পড়েছে। রাসপূর্ণিমায় রাসলীলা উৎসবের শুরুটা হয় গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য দিয়ে।এ নৃত্য হয় সকালে।যারা রাখাল নৃত্য করে, তারা প্রথমে মণ্ডপে গোল হয়ে গোপী ভোজন করে। গোপী ভোজন হল বিভিন্ন সবজি দিয়ে রান্না করা তরকারি ও ভাত।এ খাবার খেয়ে রাখাল নৃত্য শুরু করে শিল্পীরা।সকালে শুরু হয়ে রাখাল নৃত্য একটানা চলে বিকেল পর্যন্ত। মণিপুরি শিশু-কিশোররা এ নৃত্য পরিবেশন করে। যারা নৃত্য করে, তারা এক ধরনের বিশেষ পোশাক পরে।ঝলমলে এবিশেষ পোশাকের নাম ‘পলয়’।এ পোশাকের পরিকল্পনা করেছিলেন রাজা ভাগ্যচন্দ্র।রাখাল নৃত্যের মূল বিষয় বস্তু হলো কৃষ্ণ ও তার সাথীদের নিয়ে।গোলাকার মণ্ডপে কখনও একক, কখনও দ্বৈত এবং কখনও দল বেঁধে এ নৃত্য পরিবেশিত হয়। রাখাল নৃত্যের পাশাপাশি দিনভর চলতে থাকে মণিপুরিদের নিজস্ব সংস্কৃতির কর্মকা-। মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ ও আদমপুর মহারাস উদ্যাপন কমিটির অন্যতম নেতা ইবুংহাল সিংহ শ্যামল বলেন,এটি আমাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব রাসলীলাকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সীমিত পরিসরে ধর্মীয় বিধানমতেই রাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে।

    অন্যদিকে ১৯৮৬ সাল থেকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায় আয়োজন করছে পৃথক রাসমেলার। আদমপুরে পাশাপাশি দুটি স্থানে হবে রাস উৎসব। আদমপুর জোড়া মন্ডপ ও মণিপুরী কালচারেল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে। এখানেও থাকবে যথারীতি রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা। তবে মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া ও মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায় আলাদা স্থানে আয়োজন করলেও উৎসবের অন্ত:স্রোত, রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থনা সবই একই। উৎসবের ভেতরের কথা হচ্ছে বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম এমনটিই দাবী উৎসব পালনকারীদের।