কমলগঞ্জে সিএনজি চালক জলিলের খুনিদের দ্রুত গ্রেফতারের

    0
    552

    দাবিতে ফুঁসে উঠেছে পরিবহন শ্রমিক,চালকসহ এলাকাবাসী

    শাব্বির এলাহী,কমলগঞ্জ: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে সিএনজি চালক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জলিল মিয়ার খুনিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবীতে ফুঁসে উঠেছে পরিবহন শ্রমিক,চালকসহ এলাকাবাসী।গত ৪ মার্চ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টায় শমশেরনগর সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গাড়িতে গ্যাস ভর্তি নিয়ে কথা কাটাকাটি ও উত্তেজনার সময় সিএনজি চালক জলিল মিয়া প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এ ঘটনায় নিহত চালকের বড় ভাই খলিল মিয়া বাদি হয়ে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গোলাম কিবরিয়া শফি, তার দুইভাইসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জনকে আসামী করে কমলগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত চালক জলিল মিয়া আলীনগর ইউনিয়নের আলীনগর বস্তির মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস মিয়া ওরপে লাল মিয়ার ছেলে।কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান বলেন, এ মামলায় পুলিশ ইতিপূর্বে এজাহারভূক্ত একজন আসামীকে গ্রেফতার করেছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশী জোর তৎপরতা চলছে। কিন্তু প্রধান আসামী বিএনপি নেতা গোলাম কিবরিয়া শফি ও তার ভাই গোলাম রব্বানী তৈমুরসহ অন্যান্যদের গ্রেফতার না করায় নিহত জলিলের স্বজন,পরিবহন শ্রমিক ও এলাকাবাসী চরম ক্ষুব্দ। গত শনিবার(১৩ মার্চ) তিন ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে সহ¯্রাধিক সিএনজি চালক ও পরিবহন শ্রমিক। শমশেরনগর-কমলগঞ্জ শ্রমিক সমম্বয় কমিটির আয়োজনে এদিন সকাল ৯টায় থেকে শমশেরনগর চৌমুহনায় তিন ঘন্টা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন চলাকালে রাস্তার চতুর্দিকে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীসাধারণ।
    শমশেরনগর চৌমুহনা সিএনজি-অটোরিক্সা চালক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল গণির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সারফিন আহমদের পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিএনজি-অটোরিক্সা চালক সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমদ, আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাদশা, শমশেরনগর বণিক কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল মালিক বাবুল, সাংবাদিক শাহীন আহমদ, সিএনজি-অটো চালক সমিতি কমলগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মো. আলমাছ মিয়া, পরিবহন শ্রমিক নেতা নূরুল ইসলাম, শেখ রাজু আহমদ, জসিম উদ্দীন প্রমুখ। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সিএনজি চালক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জলিল মিয়া(২৬) কে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়।আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অভিযুক্ত আসামীদের গ্রেফতার করা না হলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলে হুশিয়ারি দেন।
    এদিকে গত রোববার(৭ মার্চ) বিকেলে আব্দুল জলিল এর বাড়িতে গিয়ে পরিবার সদস্যদেরকে শান্তনা দেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) সংসদ সদস্য ও সাবেক চিফ হুইপ, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ। এ সময় তিনি পরিবার সদস্যদের শান্তনা দেন এবং নিহতের পিতা মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস মিয়া ওরফে লাল মিয়ার হাতে নগদ ২০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান করেন।এ সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সিএনজি চালককে নির্মমভাবে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুত আসামীদের গ্রেফতার করে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার দাবী জানান। মামলার তদন্তকারী অফিসার কমলগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক ফজলে এলাহী বলেন, সিএনজি অটোচালক হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত আসামী কমলগঞ্জ পৌর এলাকার দক্ষিণ কুমড়াকাপন এলাকার মৃত আকরাম হোসেনের ছেলে আলম হোসেন (৩৫) কে গত শনিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে ভানুগাছ রেলস্টেশন এলাকা থেকে থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রোববার সকালে মৌলভীবাজার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।প্রকাশ্যে মানুষজনের সামনে নির্মমভাবে ছুিরকাঘাত করে সিএনজি অটো চালককে খুন করার ঘটনায় গত শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া সরেজমিন ঘটনাস্থল শমশেরনগর সিএনজি ফিলিং স্টেশন এলাকা পরিদর্শন করে প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরপর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া নিহতের বাড়িতে গিয়ে শোক সন্তপ্ত পরিবার সদস্যদের সমবেদনা জ্ঞাপন করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতকরণে পুলিশি সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার জাকারিয়া বলেন, কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। আসামী যতবড় প্রভাবশালী হউক না কেন পুলিশ থাকে গ্রেফতার করবে। সাধারন মানুষে উদ্যেশ্যে স্বজনদের আশ^াস প্রদান করে বলেন, দ্রুত সময়ে আসামীদের গ্রেফতার করা হবে। এ সময় পুলিশ সুপার তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নগদ ৫ হাজার টাকা নিহত পরিবার সদস্যদের হাতে তুলে দেন।
    কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান বলেন, গত শুক্রবার রাতে নিহত সিএনজি অটো চালক জলিল মিয়ার বড় ভাই খলিল মিয়া বাদি হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় এজাহারনামীয় আসামী আলম হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। এ মামলায় আসামী করা হয়েছে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গোলাম কিবরিয়া শফিকে। তার সাথে পর্যায়ক্রমে রয়েছে সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া শফির ছোট ভাই জেলা যুবদলের নেতা গোলাম রব্বানী তৈমুর, তার ভাই কমলগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর গোলাম মুগ্নি মুহিত, সাইফুর রহমান ও আলম হোসেন। এছাড়া আরও ৫/৬ জন অজ্ঞাতনামা আসামী রয়েছে।