আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৬নভেম্বর,আলী হোসেন রাজন: মধ্যরাত থেকে ভোর রাত পর্যন্ত শ্রীশ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলানুসরণ, সকাল থেকে সন্ধ্যা রাখাল নৃত্য, নট সংকীর্তন, গুণীজন সংবর্ধনা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শেষ হলো মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুরের জোড়াম-প ও আদমপুরের সানাঠাকুর ম-পে রাতভর রাঁধাকৃষ্ণের এই রাস অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার সন্ধ্যায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে রাস অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
এবার প্রথমবারের মত মৈতৈ মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকেরা আদমপুর এলাকায় পৃথক দুটি স্থানে এবং কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর (শিববাজার) জোড়াম-প প্রাঙ্গণে মণিপুরীরা মহারাসলীলার আয়োজন করে। মাধবপুরে বিষ্ণুপ্রিয়া ও আদমপুরে মৈতৈ সম্প্রদায় এই রাসের আয়োজন করে।
পৃথক দুটি স্থানেই মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মহারাত্রির আনন্দের পরশ পেতে আসা হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দেশী-বিদেশী পর্যটক, বরেণ্য জ্ঞাণী-গুণী লোকজনসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে গোটা উৎসব অঙ্গন।
শ্রীশ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলানুকরণ উৎসব উপলক্ষে বুধবার সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনটি কদম গাছের তলে রাখাল নৃত্য (গোষ্ঠলীলা) অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় গুণীজন সংবর্ধনা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত নট সংকীর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ বুধবার রাত ১২টা থেকে জোড়াম-পে শুরু হয় শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা। এই মহারাসলীলা কয়েক ঘন্টাব্যাপী চলতে চলতে বৃহষ্পতিবার ঊষালগ্ন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, রস থেকে ‘রাস’ শব্দের উৎপত্তি। ‘রাস’ হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের সর্বোত্তম মধুর রস। অতএব ‘রাসলীলা’ বলতে শ্রীকৃষ্ণ তার হলাদিনী শক্তি শ্রীরাধা ও অন্যান্য গোপীগনের সহিত যে লীলা-খেলা করেছেন তাকেই বুঝায়। মণিপুরী সমাজে প্রচলিত রাজনৃত্যকে ৬ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো ঃ- ১. শারদীয় মহারাস ২. বসন্তু রাস ৩. নিত্য রাস ৪. কুঞ্জ রাস ৫. গোপী রাস ৬. উদখুল রাস। এর মধ্যে শারদীয় মহারাস হচ্ছে বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা সংঘটিত লীলা সমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলেই একে মহারাস লীলা বলা হয়ে থাকে।
প্রতিবছর শারদীয় পূর্ণিমা তিথিতে এই মহারাস লীলানুকরনের আয়োজন করা হয়ে থাকে।