কমলগঞ্জে শিক্ষার হালঃছুটি নিয়ে ১ বছর ধরে শিক্ষক বিদেশে !

    0
    190

    “৪বছর ধরে ডেপুটেশনে আরেক শিক্ষকঃঅফিসে বসেই দায়িত্ব পালন করছেন কর্মকর্তারা”

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৭ফেব্রুয়ারী,শাব্বির এলাহী, কমলগঞ্জঃ বুধবার উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের সতিঝিরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১০ টায় সরেজমিনে দেখা যায়, একজন শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে এসেছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শমশেরনগর ক্লাস্টারের সভায় চলে গেছেন। অপর দুই শিক্ষিকা থাকলেও সকাল ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত কাউকে বিদ্যালয়ে আসতে দেখা যায়নি। এই বিদ্যালয় প্রায় তিনশত ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। ৭ জন শিক্ষকের স্থলে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৪ জন শিক্ষক।

    অথচ এই স্কুলে শিক্ষার্থীর অনুপাতে ৯ শিক্ষক প্রয়োজন। দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য রয়েছে। এই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সালমা বেগম বিগত বছরের ৩০ মার্চ থেকে চিকিৎসার ছুটি নিয়ে শিক্ষা অফিসকে না জানিয়ে এখন পর্যন্ত বিদেশে (স্পেন) অবস্থান করছেন।

    আরেকজন সহকারী শিক্ষিকা সাদিয়া আহমেদ দীর্ঘ চার বছর ধরে ডেপুটেশনে কামুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (১৫০০ বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প) শিক্ষকতা করছেন। বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়ে দায়িত্বরত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কিংবা সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কেউই পরিদর্শনে আসেননি। সতিঝিরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের কারণে মারাতœকভাবে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলেন জানান বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রুহেল আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, শিক্ষক সংকটের বিষয়টি বারবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোন ফল হয়নি।

    কেছুলোটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত ছয় মাসেও কেউ পরিদর্শনে আসেননি। চৈতন্যগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩জন শিক্ষক থাকলেও প্রধান শিক্ষক তাঁর বাবার শ্রাদ্ধ আর অন্য দু’জন ছুটিতে থাকায় একজন পুল শিক্ষক দিয়েই চলছে পাঠদান। দীর্ঘদিন ধরে এই বিদ্যালয়েও কেউ পরিদর্শন করতে আসেননি। এছাড়াও ভেড়াছড়া, ভরতপুর, আদমপুরসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে কেউ পরিদর্শন করেননি। ৩য় দফায় জাতীয়করণকৃত ধূপাটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষা কর্মকর্তা পরিদর্শনে যাননি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে কিছুই জানানো হয় না, যতটুকু সম্ভব নিজেদেরই খোঁজ নিয়ে জেনে নিতে হয়।

    শ্রীসূর্য্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে দু’শিক্ষিকার পরস্পর বিরোধী অভিযোগ নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার সরেজমিনে আসলেও এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে ওই বিদ্যালয়ে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী বিতর্কিত এই দুই শিক্ষকের অন্যত্র বদলীক্রমে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, অধিকাংশ বিদ্যালয়ের পরিদর্শন খাতা অফিসে নিয়েই স্বাক্ষর করে দিয়ে দেয়া হয়। তাছাড়া অনেক শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেন দুপুরে। কেউ কেউ উপজেলা শিক্ষা অফিসে আসা যাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ফলে শিক্ষার্থীদের যথারীতি পাঠদান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

    অভিভাবকরা জানান, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান, পানীয় জলের সমস্যা, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনুপস্থিতি এসব বিষয়ে দেখভালের দায়িত্ব থাকলেও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা হঠাৎ কোন প্রয়োজন ছাড়া নিয়মিত কোন বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন না।

    বিদ্যালয় পরিদর্শন বিষয়ে জানতে চেয়ে উপজেলার রানীর বাজার ও শমশেরনগর ক্লাস্টারের দায়িত্বরত সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাফিউর নূর এর মোবাইল ফোনে কয়েক দফা চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

    নবাগত উপজেলা শিক্ষা অফিসার গকুল চন্দ্র দেবনাথ ছুটিতে থাকায় এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মনোরমা দেবী বলেন, এখন খেলাধূলাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম থাকায় শিক্ষকদের কিছুটা অনুপস্থিতি থাকতে পারে। তাছাড়া শিক্ষিকা সালমা বেগম মেডিকেলে ছুটি নিয়ে বাইরে থাকায় তার বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে এবং রিপোর্টও করা হয়েছে। তবে নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হয় বলে তিনি জানান।