কমলগঞ্জে ভেঙ্গে যাওয়া ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত

    0
    220

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,৩০জুন,শাব্বির এলাহী,কমলগঞ্জঃ জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে টানা ভারী বৃষ্টিতে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ধলাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে আদমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ তিলকপুর গ্রাম এলাকায় ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে চারটি গ্রামের বসত বাড়ি ও ফসলি জমি নিমজ্জিত করেছিল। পরবর্তীতে একে একে তিন দফা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে এ ভাঙ্গন এলাকা দিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করলে ফসলি জমির সাথে সবগুলো বাড়িতে ২ থেকে ৩ ফুট পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত ছিল।

    সরকারীভাবে দক্ষিণ তিলকপুর গ্রামের ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ উন্নয়নে কাজ করার কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছা শ্রমে কাজ করে ভেঙ্গে যাওয়া ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামত শুরু করেন। ঈদের ছুটি আসা গ্রামের চাকুরীজীবিরা, কলেজ পড়ুয়া ছাত্র সবাই মিলে ২৮ জুন থেকে প্রায় ২০০ লোক মিলে বস্তায় বালু ভরে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামত করতে শুরু করেন।
    বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) বেলা দুইটায় দক্ষিণ তিলকপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের কৃষক, শ্রমিক, চাকুরীজীবি, কলেজ ছাত্র সবাই মিলে প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামতরে কাজ করছেন। আর এ কাজে এগিয়ে আসেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দীন।

    জানা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন সম্প্রতি বিতরণকৃত ভিজিএফ চালের খালি ২০০ বস্তা, প্যানেল চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দীন তার মৎস খামারে মাছের খাবারের খালি আরও ৩০০ বস্তা দিয়ে সহায়তা করেন। নির্বাহী কর্মকর্তার মুঠোফোনে আলাপে পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দু বিজয় শঙ্কর চক্রবর্তী আরও ১০০০ খালি বস্তা দিয়ে সহায়তা করেন। তাছাড়া গ্রামবাসীরা নিজেরাও ২ টা থেকে শুরু করে ৫টি করে বস্তা নিয়ে আসেন।
    বাঁধ এলাকায় দেখা যায় কেউ কেউ খালি বস্তা বালু ভর্তি করছেন। আর যুবক ও ছাত্ররা এসব বালু ভর্তি বস্তা নিয়ে বাঁধের কাছে স্থাপন করছেন। কাজের সুবিধার্থে আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বৃহস্পতিবার দুপুরের সবার খাবারের ব্যবস্থা করেন।
    ইউপি সদস্য মো: হেলাল উদ্দীনও স্বেচ্ছাশ্রমে কর্মরত গ্রামবাসীরা জানান, এ বাঁধ ভেঙ্গে গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তিনবার দক্ষিণ তিলকপুর গ্রামের ১৩০ বাড়ি, উত্তল তিলকপুর গ্রামের ৮৫টি বাড়ি, ঘোড়ামারা গ্রামের ১৫০টি বাড়ি ও হুমেরজান গ্রামের ১০০টি সব মিলিয়ে ৪৬৫ টি বাড়িসহ চারটি গ্রামের ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছিল। আবহাওয়ার অবস্থায় বোছা যায় আরও টানা বৃষ্টিপাত হতে পারে। তখন আবারও এ ভাঙ্গন এলাকা দিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করে চারটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ চিন্তা ভাবনায় গ্রামবাসীরা মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামত কাজ শুরু করেন।
    স্বেচ্ছঅশ্রমে কাজে যোগ দেওয়া ঈদের ছুটিতে আসা পুলিশ সদস্য সাইফুর রহমান, সেনা বাহিনীর সদস্য জসিম উদ্দীন, ঢাকা সুপ্রীম কোর্টের অপিস সহকারী জাহাঙ্গীর হোসেন, সেনা সদস্য আব্দুস শহীদ, প্রাথমিক শিক্ষক আরিশ উদ্দীন, কলেজ ছাত্র আবুল হোসেন ও সাব্বির আহমদ বলেন, নিজেদের বাড়ি ঘর, ফসল রক্ষার তাগিদে তারা স্বেচ্ছাশ্রমে প্রতিরক্ষা বাঁধ রক্ষার কাজে যোগ দিয়েছেন। এখানে সবাই খুবই আন্তরিকভাবে গত দুই দিন ধরে কাজ করছে। উপজেলঅ নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ যারাই তাদের এ কাজে সহায়তা করছেন তাদের সবাইকে গ্রামবাসীরা ধন্যবাদ জানান।
    আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন, দক্ষিণ তিলকপুর গ্রামের ৬০০ ফুট ভাঙ্গন এলাকা সরকারীভাবে মেরামত করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তার আগে আরও কয়েক দফা ধলাই নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ভাবনায় গ্রামবাসীদের সিদ্ধান্তের প্রতি তিনি সম্মান জানিয়ে তাদের সাথে কাজে সহায়তা করতে এসেছেন।
    কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, গ্রামবাসীরা নিজেদের রক্ষায় নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রমে এত বড় কাজ শুরু করেছে তা শুনে তিনিও বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে এসে তাদের কাজে সহায়তা করেছেন। তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলায় তিনি ১০০০ খালি বস্তা পাঠিয়েছেন। তাছাড়া আগামী প্রতিরক্ষা বাঁধ রক্ষায় স্থায়ীভাবে কি কাজ করা যায় তা নিয়ে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেছেন।
    পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দু বিজয় শঙ্কর চক্রবর্তী এ প্রতিনিধিকে মুঠোফোনে বলেন, এটি একটি ভাল কাজ। এজন্য কাজে অংশগ্রহনকারী গ্রামবাসীদের ধন্যবাদ জানাতে হয়। তিনিও খালি বস্তা দিয়ে সহায়তা করেছেন। আগামী শুষ্ক মৌসুম ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ রক্ষা বা উন্নয়নে কোন কাজ করতে পারবে না। ইতিমধই দুটি প্রস্তাবনা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে। তা অনুমোদন হলে পরবর্তীতে কাজ শুরু হবে।