কমলগঞ্জে নারীকে গ্রেফতারের পর ভাঙ্গচুর-লুটপাটঃশিশুসহ ৪ নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ

    0
    205

    এসআই প্রত্যাহারঃআটক-৪

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৬জুন,শাব্বির এলাহীঃ জমির মালিকানার বিরোধকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে হয়রানীমূলক মামলা দিয়ে দুই নারীকে গ্রেফতার করে নেওয়ার পর প্রকাশ্য দিবালোকে ভাড়াটে লোকসহ হামলা চালিয়ে দুটি ঘর ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়। শিশু কন্যাসহ ৪ নারীর শ্লীলতাহানি ঘটিয়ে নগদ অর্থসহ মালামাল লুটে নেওয়া হয়। দুই নারীকে গ্রেফতারের পর থানার এক উপ-পরিদর্শকের ঈশারায় এসব সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

    এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ৪ জনকে আটক করা হয়েছে এবং অভিযুক্ত এসআইকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম দফা ও শুক্রবার সকাল ১১টায় দ্বিতীয় দফা এসব ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

    সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় শ্রীরামপুর গ্রামে মুজিবুন নেছা (৫৫)-র বাড়ির দুটি টিন শেডের মাটির দেয়ালের ঘর ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলা হয়েছে। বাড়ির ভিতরের চার সীমানার গাছ গাছালি কেটে ফেলা হয়েছে। নির্যাতিতা সুমেনা বেগম বলেন, তার শ্বশুড়ের পূর্বপুরুষদের জমির মালিকানা দাবি করে পাশ্ববর্তী সুফিয়ান, কামরুল, হান্নানদের সাথে দীর্ঘ দিনের বিরোধ চলছিল।

    প্রতিপক্ষের লোকেরা প্রাণনাশের হুমকি দিলে কিছুদিন আগে তারা থানায় একটি আবেদনও করেন। অভিযোগ তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় হয়রানীমূলক মামলা দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে কমলগঞ্জ থানার এসআই আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল বাড়ির মুজিবুন নেছা (৫৫) ও তার বোন মুহিবুন নেছা (৪২)কে গ্রেফতার করে নেয়।

    এর পরপরই দারোগার ইশারায় প্রতিপক্ষের সুফিয়ান, কামরুল, হান্নান, মন্টু, ইছুব, মিনার, নূর মিয়ার সাথে মৌলভীবাজার থেকে কয়েকজন ভাড়াটেসহ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালিয়ে দু’টি ঘর মাটির সাথে মিশে দেয়। শুক্রবার সকাল ১১টায় তারা আবারও হামলা চালিয়ে সুমেনা বেগম (২৫), রেজিয়া বেগম (৪৫), মাদ্রাসা ছাত্রী তৌফিকা বেগম (১২) ও শিশু রিফতি (৬) কে শ্লীলতাহানি ও মারধোর করে। এসময়ে নতুন ঘর নির্মাণের জন্য বিদেশ থেকে আসা নগদ টাকা ও সুমেনার কানের স্বর্নের দুল লুটে নেওয়া হয়। ঘরের ভিতরে রাখা ইফতার সামগ্রী পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়া হয়।

    খবর পেয়ে শুক্রবার দুপুরে শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক মতিউর রহমান ও কমলগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল আজিজ ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে হামলার ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসী বলেন, রহস্যজনক কারণে থানা কর্তৃপক্ষ নতুন মামলা গ্রহন করে একজন এসআইকে দিয়ে দুই নারীকে গ্রেফতার করে বাড়িঘর ভাঙ্গচুর ও নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে।

    এ ঘটনায় অভিযুক্ত এসআই আব্দুল আজিজকে প্রত্যাহার করে মৌলভীবাজার সদরে নেয়া হয় এবং দুইজনকে আটক করা হয়। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে মৌলভীবাজারের নাবগত পুলিশ সুপার  মো: শাহ জালাল, সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো: আশরাফুল আলম শুক্রবার বিকাল ৩টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে করেন।

    ঘটনাস্থলে থাকা কমলগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল আজিজ বলেন, বৃহস্পতিবার একটি মামলায় এ বাড়ির দুই নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে পরে কিভাবে এ হামলা হয়েছে তা বুঝতে পারছেন না। তিনি কাউকে ঈশারাও দেননি বাড়িতে হামলা চালানোর জন্য।

    কমলগঞ্জ থানার ওসি মো: এনামুল হক বলেন, প্রতিপক্ষের অভিযোগে দুই নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। দুই পক্ষের মাঝে বিরোধ থাকায় হয়ত হামলার ঘটনাটি ঘটেছে। এখন নির্যাতিতা পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার বিকেলে আরো দুইজনকে আটক করা হয়েছে।

    মৌলভীবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো: আশরাফুল আলম শুক্রবার বিকেলে জানান, শ্রীরামপুর গ্রামের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কমলগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল আজিজকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে আনা হয়েছে। এ ঘটনার জোর তদন্তপূর্বক হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।