কমলগঞ্জে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চা শিল্প:উৎপাদন হ্রাসের আশঙ্কা

    0
    284

    কাঁচা চা আর ছায়াবৃক্ষ পাচার হওয়ায় পুরো হচ্ছে না নিরিখ

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৭আগস্ট,শাব্বির এলাহী:‘এখন পাতি তোলার ভরা মওসুমে আমাদের ওজন ঠিক হওয়ার কথা সেখানে সারাদিন পাতি তোলেও আমাদের নিরিখ (২০ কেজি) পুরো হচ্ছে না। চা বাগানের সেকশন থেকে প্রতি রাতেই কাঁচা চা পাতা চুরি হয়ে যাচ্ছে। সাহেব, বাবু, মেম্বার প ায়েতকে বলে কোন কাজ হচ্ছে না। চকিদারের সহযোগীতায় কাঁচা চা পাতা চুরি হচ্ছে আর বিভিন্ন মালিকানা বাগানে এগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। একইভাবে চা বাগান থেকে গাছও চুরি হয়ে যাচ্ছে।’ কথাগুলো বলেন, ডানকান ব্রাদার্স শমশেরনরগর এর ফাঁড়ি কানিহাটি বাগানের লক্ষিয়া রবিদাস, জানকি রবিদাস, মিনা মৃধা, সীমা রিকিয়াশনসহ কয়েকজন পাতি উত্তোলনকারী নারী শ্রমিক।

    চা বাগান অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ডানকান ব্রাদার্স শমশেরনগর ও এর ফাঁড়ি দেওছড়া, কানিহাটিসহ চা বাগানের বিভিন্ন সেকশন থেকে ব্যাপকহারে ছায়াবৃক্ষ ও কাঁচা চা পাতা পাচার হচ্ছে বলে শ্রমিকরা অভিযোগ তোলেছেন। চা বাগানের শ্রমিকরা বলেন, রাতের আঁধারে বাগানের বিভিন্ন সেকশন বা টিলা থেকে একটি চক্র বাগানের কতিপয় চকিদার ও কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাজষে ছায়াবৃক্ষ হিসাবে প্রতিনিয়ত মুল্যবান গাছগাছালি চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছে।

    অন্যদিকে কাঁচি দিয়ে চা গাছের কচি ডাল কেটে বস্তা ভর্তি করে স্তুপ করার পর ভোর রাতে ট্রাক যোগে মালিকানাধীন অন্যান্য বাগানে পাচার করা হয়। বাগানের বাইরের একটি সিন্ডিকেট চক্রের সাথে প্রতি রাতেই কাঁচা চা পাতা ও মূল্যবান গাছ চুরির ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় সচেতন শ্রমিক ও প ায়েত কমিটির লোকজন বলেন, এসব বাগান থেকে ছায়াবৃক্ষ ও চা পাতা চুরির ফলে মহিলা শ্রমিকরা নিরিখ পুরো করতে পারছে না। তাছাড়া উৎপাদনও ভাল হচ্ছে না। ফলে উৎপাদন হ্রাসসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ চা শিল্প এখন ক্রমাম্বয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে।

    অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার ডানকান ব্রাদার্সের চাতলাপুর, শমশেরনগর, আলীনগর ও এর ফাঁড়ি চা বাগান এবং এনটিসির কুরমা, চাম্পারায় চা বাগান থেকে ব্যাপকহারে ছায়াবৃক্ষ চুরি হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ট্রাকযোগে প্রতিরাতে কাঁচা চা পাতা চুরির ঘটনাও ঘটছে। শমশেরনগর ও এর ফাঁড়ি দেওছড়া, আলীনগর ও এর ফাঁড়ি কামারছড়া, সুনছড়া চা বাগান থেকে অব্যাহতহারে গাছ চুরির ফলে বৃক্ষ শুন্য হয়ে পড়ছে চা বাগান সমুহ। ছায়াবৃক্ষ কমে যাওয়ায় বিনষ্ট হচ্ছে চা গাছ। অন্যদিকে চা গাছের কচি ডাল কেটে ফেলায় দ্রুত নতুন পাতা গজাতে পারছে না। ফলে পাতি উত্তোলনও করা সম্ভব নয়।

    উপজেলার এনটিসি’র কুরমা, চাম্পারায় চা বাগান থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল চা বাগান ম্যানেজমেন্ট ও শ্রমিকদের জিম্মি করে নিয়মিতহারে গাছ চুরি করে নিচ্ছেন। শমশেরনগরের ফাঁড়ি দেওছড়া ডিভিশনের কয়েকটি সেকশন ঘুরে চা শ্রমিক, সেকশনের পাহারাদার ও দায়িত্বরত কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৬টি সেকশনের সবকটি সেকশন থেকে গাছ চুরির হরিলুট চলছে। চা বাগানের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গাছ পাচারের অভিযোগে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে থানায় সুনির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।

    কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিকার নেওয়া যাচ্ছে না। চা বাগান থেকে ব্যাপকহারে গাছ কেটে পাচার হওয়ায় চা শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের সন্মুখীন হচ্ছে বলে স্থানীয় সচেতন মহল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন।