কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের ভিড়

    0
    284

    আমারসিলেট24ডটকম,২৮ডিসেম্বর,শাব্বির এলাহীমৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে টানা ৩দিনের ছুটিতে দেশী বিদেশী পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের শুভ বড়দিন বৃহষ্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত হাজার হাজার পর্যটক প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্য লাঊয়াছড়ায় বেড়াতে আসেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নৈসর্গের অপরূপ এ প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো দেখতে ছুটে এসেছিলেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার লোকজন। বৃহষ্পতিবার বড়দিনের ছুটি থেকে শনিবার পর্যন্ত পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান দেখার পাশাপাশি পর্যটকরা কমলগঞ্জের চা বাগান, খাসিয়া পুঞ্জি, মণিপুরী ললিতকলা একাডেমী, মাধবপুর লেক, দলই সীমান্তে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিস্তম্ভ দেখার পাশাপাশি পর্যটকরা মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের চেয়েও অপূর্ব সুন্দর হামহাম জলপ্রপাত দেখতে সেখানে ভিড় করেন।

    পশুপাখি ও পোকা-মাকড়ের ঝিঁ ঝিঁ শব্দ, বানরের ভেংচি, এক গাছ থেকে অন্যগাছে উল¬ুকের ছোটাছুটি এ হচ্ছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের চির-চেনা দৃশ্য। নিস্তব্ধতা ভেদ করে ঝিঁ ঝিঁ পোকার অদ্ভুদ একটানা শব্দ শুনতে শুনতে পর্যটকরা হারিয়ে যান প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এ গহীন অরণ্যে। খুঁজে পান ব্যতিক্রমী আনন্দ। প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্যরে এ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ‘ট্রপিক্যাল রেইন ফরেস্ট’ হিসেবে খ্যাত। শিক্ষা, গবেষণা, ইকো-টুরিজমসহ ভ্রমণ বিলাসীদের কাছে চিত্ত বিনোদনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্পটও হয়ে উঠেছে এ উদ্যান। দেশ-বিদেশের পশু-পাখি প্রেমীরা এখানে ছুটে আসেন। কালের বিবর্তনে বদলে গেছে লাউয়াছড়ার সামগ্রিক চিত্র।

    দেশের অন্যতম বৃহৎ বিনোদন স্পট ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গত কয়েক বছর থেকে রেকর্ডসংখ্যক দেশী-বিদেশী পর্যটক ও ভ্রমণ পিপাসুদের সমাবেশ ঘটছে। এক সময় এখানে হাতে গোনা দর্শক পর্যটকদের আগম ঘটতো। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারও রেকর্ডসংখ্যক বিনোদন পিয়াসী মানুষ ছুটে আসছেন চিরসবুজ এ বনের শ্যামল প্রান্তরে। লাউয়াছড়ার বনে রয়েছে তিনটি প্রাকৃতিক ফুট ট্রেইল বা পায়ে হাঁটা পথ। এরমধ্যে একটি ৩ ঘন্টার, একটি ১ ঘন্টার ও অপরটি ৩০ মিনিটের পথ। পর্যটকরা ইকো-ট্যুর গাইডের সাহয্য নিয়ে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে উদ্যানটি ঘুরে দেখতে পারেন। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এখন শুধু পর্যটকদের স্থান নয়; এ উদ্যান এখন এক জীবন্ত ও প্রাকৃতিক গবেষণাগার। গবেষণার জন্য এখানে বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষকরাও আসছেন। বিচিত্র এ প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীববৈচিত্র, ইকো-ট্যুরিজম এবং শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্র হিসেবে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এখন অদ্বিতীয়। পর্যটকদের সুবিধার্থে এখানে নির্মিত হয়েছে তথ্যকেন্দ্র, ইকো-কটেজ, ফুট ট্রেইল, ইকো-রেস্তোরা প্রভৃতি। লাউয়াছড়ায় জমে উঠেছে পর্যটকদের মিলনের সেতু বন্ধন।

    শনিবার দুপুরে আলাপকালে সুনামগঞ্জ থেকে স্বপরিবারে লাউয়াছড়ায় বেড়াতে আসা পর্যটক চাকুরীজীবি সোহেল আহমদ, হবিগঞ্জের ব্যবসায়ী শরীফ আলী, আল আমীন, গৃহিনী লিমা আক্তার, কলেজ ছাত্রী সুফিয়া বেগম জানান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের অপরূপ প্রকৃতির অপরুপ নান্দনিক দৃশ্য তাদের মুগ্ধ করেছে। গহীন অরণ্যে বেড়াতে তারা নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্ধ্য বোধ করেন। কুমিল¬ার এনওজিও কর্মী সফিকুল ইসলাম, ব্যবসায়ী আবু মো. সায়েম, কলেজ ছাত্রী নিপা আক্তার বলেন, লাউয়াছড়ার গহীন বনে বেড়াতে পেরে তারা খুবই আনন্দিত।

    লাউয়াছড়া বন বিট অফিসার মাহমুদ হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, টানা ছুটিতে গত ৩দিনে লাউয়াছড়ায় টিকেট খাতে আয় হয়েছে প্রায় এক লক্ষ টাকা।

    বন্যপ্রাণী ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষা করা সহ পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকলে পর্যটন শিল্পে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে চলে যাবে বলে অভিজ্ঞমহলের অভিমত।