ওয়াহাবি-মতবাদে বিশ্বাসীদের বিপদজন নেতা সালমান!

    0
    231

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১১জানুয়ারী: সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও ডেপুটি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যক্তি’ বলে মন্তব্য করেছে ব্রিটেনের দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট। দৈনিকটি তাকে ক্ষমতা-প্রিয়, আগ্রাসী ও উচ্চাভিলাষী বলেও অভিহিত করেছে।

    বিল ল’-এর লেখা এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিন সালমান ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যে পাশবিক যুদ্ধ শুরু করেছেন তা শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তিনি ২৯ বছর বয়স্ক এই সৌদি প্রিন্সকে ক্ষমতা-প্রেমিক বলেও উল্লেখ করেন। বিল লিখেছেন, ‘সৌদি রাজতান্ত্রিক সরকার এখন তার আঞ্চলিক শত্রু ইরানের বিরুদ্ধে মধ্যযুগীয় নাইট বা উচ্চাভিলাষী যুদ্ধবাজদের মতই বিপজ্জনক তৎপরতা চালাচ্ছে। আর এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে এমন এক ব্যক্তি যে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হওয়ার জন্য দৃশ্যত খুব তাড়াহুড়া করছেন। … সমালোচকরা বলছেন, প্রিন্স (ডেপুটি যুবরাজ) সালমান অনেক অর্থ-সম্পদ জমিয়েছেন, কিন্তু অর্থ নয় ক্ষমতাই তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তার বাবা ৭৯ বছর বয়স্ক সালমান যখন গত বছরের জানুয়ারিতে সৌদি সিংহাসনে বসেন তখনই তিনি অসুস্থ। তাই পুত্রের ওপর খুব বেশি নির্ভর করতে বাধ্য হন তিনি। স্মৃতি-বিভ্রাটসহ নানা ধরণের মানসিক রোগের শিকার রাজা সালমান দিনের মাত্র কয়েক ঘণ্টা কাজে মনোযোগ দিতে পারেন। তাই বাবার প্রহরী এই পুত্র তথা বিন সালমানই হচ্ছেন সৌদি আরবের প্রকৃত রাজা।”

    ইন্ডিপেন্ডেন্টের এই নিবন্ধে বিল আরও জানিয়েছেন, সালমান রাজা হওয়ার পর কয়েক মাসের মধ্যেই বিন সালমানের ক্ষমতা নাটকীয়ভাবে বাড়ানো হয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পাশাপাশি জাতীয় জ্বালানী কোম্পানি আর্মাকো’র প্রধান হন প্রিন্স বিন সালমান। এ ছাড়াও হন শক্তিশালী নতুন সংস্থা অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন বিষয়ক পরিষদের প্রধান এবং এরই সুবাদে পান সব মন্ত্রণালয়ের ওপর নজরদারির ক্ষমতা। সৌদির জন-বিনিয়োগ তহবিলেরও দায়িত্ব পান বিন সালমান। তাকে ডেপুটি যুবরাজ বলে ঘোষণা করা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বী যুবরাজ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মাদ বিন নায়েফের ওপর তার কর্তৃত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

    ইয়েমেনের শিয়া হুথি মুসলমানদের নেতৃত্বাধীন জনপ্রিয় আনসারউল্লাহ আন্দোলনকে দমনের জন্য দেশটির ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় সৌদি সরকার। এ প্রসঙ্গে বিল লিখেছেন, এ যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় বিন সালমানকে যাতে তার বীরত্বটা ফুটে উঠে। তারা ভেবেছিল অতি দ্রুত ও খুব সহজেই বিজয়ী হবেন বিন সালমান এবং (ওয়াহাবি-মতবাদে বিশ্বাসীদের অপব্যবহারের ক্ষেত্রে সফল) আধুনিক সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা দাদা ইবনে সৌদের মতই সফল হবেন নাতি। কিন্তু ইরানের সমর্থিত দুর্ধর্ষ হুথিরা (সৌদি সামরিক হস্তক্ষেপের জবাবে) যে ২০০৯ সালে সৌদি বন্দর জিজান দখল করে বসেছিল তা যেন ভুলে গেছেন অনভিজ্ঞ নতুন সৌদি সরকার। সাত কোটি ডলার অর্থ দেয়ার পরই তারা ওই বন্দর ছেড়ে দেয়। হুথিরা আলকায়দার মোকাবেলায় একটি বড় শক্তি হওয়ায় তারা সৌদি আরবের জন্য প্রত্যক্ষ হুমকিও ছিল না। প্রায় এক বছর ধরে নির্বিচার বিমান ও বোমা হামলা চালিয়ে ইয়েমেনের অবকাঠামো ধ্বংস করেছে সৌদি সরকার। কিন্তু এখনও ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও দেশটির উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ হুথিদের দখলেই রয়েছে। আলকায়দা ও সমমনা কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠী বোমা মেরে হুথিদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার দৃঢ়-প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছে।

    বিল জানিয়েছেন, সৌদি রাজ-পরিবারের অনেকেই দাম্ভিক বিন সালমানের আচরণে ক্ষুব্ধ। তারা রাজা সালমান ও মুহাম্মাদ বিন নায়েফকে ক্ষমতাচ্যুত করারও আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এইসব আহ্বানে কোনো কাজ হয়নি। এখন প্রশ্ন হল, বিন সালমানের হঠকারী স্বভাব কি তাকে ইরানের সঙ্ঘে সংঘাতে নামাতে পারে? আর সেটা কখন ঘটবে সেটাই এখন দেখার বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন বিল। তিনি লিখেছেন: সৌদি ডেপুটি যুবরাজ হয়ত দাদার মত নানা সামরিক অভিযানে সফল হওয়ার কথা ভাবছেন। হয়তো তিনি ইরানের ওপর বিমান হামলাও চালাতে পারেন। #