ওয়ার্কার্স পার্টির আন্তর্জাতিক সেমিনার

    0
    211

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৯মেঃ ‘দক্ষিণ এশিয়ায় সা¤্রাজ্যবাদ ও মৌলবাদবিরোধী লড়াই’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে উপমহাদেশের কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ উপমহাদেশকে ঘিরে নয়া চক্রান্ত বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে। এই অ লের দেশগুলোতে উগ্র ধর্মীয় সশস্ত্র জঙ্গিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা করে তারা এখানে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়ার মতো উদাহরণ তৈরি করতে চায়। ভূ-রাজনৈতিক কারণে ভারতীয় উপমহাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অ লে প্রভাব বিস্তারের মধ্য দিয়ে তারা চীন থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অ লে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তৎপর।

    দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থেই এই সা¤্রাজ্যবাদী চক্রান্ত এবং তাদের সহযোগী উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদকে পরাস্ত করতে হবে। এর জন্য এই অ লের জনগণের ঐক্য বেশি জরুরি। এর পাশাপাশি এই দেশগুলোর রাজনৈতিক শক্তি বিশেষ করে কমিউনিস্ট বামপন্থীদের একযোগে কাজ করার এখনই সময়। সা¤্রাজ্যবাদ ও জঙ্গিবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নিতে যত দেরি হবে, ততই বিপদ বাড়বে।

    আজ ২৯ মে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এই আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন করে। উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কমরেড অমল সেন এর জন্মশতবার্ষিকীর বছরব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

    বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। বক্তব্য রাখেন ভারতের রাজ্যসভার সদস্য ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি-মার্কসবাদী (সিপিআইএম) এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড সুরাভারাম সুধাকর রেড্ডি, সর্বভারতীয় ফরওয়ার্ড ব্লকের জাতীয় সম্পাদকম-লীর সদস্য কমরেড শ্যামল রায়, সিপিআইএম এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড গৌতম দাস, পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইমদাদ কাজী, শ্রীলংকার জনতা বিমুক্তি পার্টি (জেভিপি) এর আন্তর্জাতিক বিভাগের সদস্য কমরেড ড. নালিন্দা জয়াতিসা এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। এছাড়া নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (ইউএমএল) এর চেয়ারম্যান কমরেড কে পি শর্মা ওলি’র প্রেরিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়।

    সেমিনারে কমরেড রাশেদ খান মেনন বলেন, উপমহাদেশের দেশগুলোর জনগণের অগ্রগতির প্রশ্নে সা¤্রাজ্যবাদ ও মৌলবাদ হলো সাধারণ সমস্যা। বাংলাদেশে আমরা মৌলবাদী শক্তিকে পরাস্ত করেছি। কিন্তু তারা এখানকার প্রশাসন, ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত করেছে। সা¤্রাজ্যবাদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে তারা আবারো ক্ষমতায় ফিরে আসতে চাইছে। কিন্তু অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অভিযাত্রার লড়াই অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়ে তাদের ফিরে আসার পথ আমাদের চিরতরে বন্ধ করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

    কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি মৌলবাদ ও সা¤্রাজ্যবাদকে অত্যন্ত বিপজ্জনক আখ্যা দিয়ে বলেন, এরা আলাদা কিছু নয়। সা¤্রাজ্যবাদের কাজ হলো মৌলবাদের প্রসার ঘটানো। এরা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একেকটি দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যায়। এরা মুক্তচিন্তা, স্বাধীনসত্ত্বা ও প্রগতিশীলদের নিশ্চিহ্ন করতে বিশ^ব্যাপী কাজ করে। এ ক্ষেত্রে তিনি পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, সা¤্রাজ্যবাদীদের প্রত্যক্ষ মদদে এসব দেশে মৌলবাদের উত্থান হয়েছে। সা¤্রাজ্যবাদ কখনো সেনাবাহিনী দিয়ে দেশ দখল করছে, আবার কখনো মৌলবাদের উত্থান ঘটিয়ে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশকে তাদের কব্জায় নিচ্ছে। কখনো অস্ত্র, কখনো অর্থ দিয়ে এরা মৌলবাদীদের সহায়তা করছে।

    ভারতের রাজ্যসভার সদস্য এই নেতা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতে মৌলবাদ এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। তাই সরকারের উচিৎ মানুষের কল্যাণ হবেÑ এমন নীতি নেওয়া। যদিও সা¤্রাজ্যবাদী অর্থনীতির কারণে তা অনেক সময় হয়ে ওঠে না। কিন্তু সুযোগ দিলে জনগণের বিরুদ্ধ শক্তি তথা মৌলবাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

    স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সন্তোষ প্রকাশ করে কমরেড ইয়েচুরি বলেন, সিপিআইএম এবার তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি দেখতে চায়।

    পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইমদাদ কাজী সেমিনারে বলেন, উপমহাদেশে আইএসআইএসের ভয়ংকর উত্থান রুখতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ মৌলবাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এই অ লে মৌলবাদের বিস্তার রুখতে সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার।

    কমরেড ইমদাদ কাজী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, পাকিস্তান সরকারের উচিৎ একাত্তরের গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া।

    সেমিনারে কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি দক্ষিণ এশিয়ায় সা¤্রাজ্যবাদের খবরদারি ও উগ্র ধর্মীয় সশস্ত্র জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্য গড়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এই অ লের কমিউনিস্ট বামপন্থী পার্টিগুলোকেই এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। কমরেড বাদশা এই ঐক্য সংহতি জোরদার করার লক্ষ্যে একটি দক্ষিণ এশীয় আ লিক ফোরাম গঠনের আহ্বান জানান।