ঐশী রহমানসহ তিন জনের বিরুদ্ধেঅভিযোগ গঠন

    1
    396

    আমারসিলেট24ডটকম,০৭মেঃ পুলিশইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রীস্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় তাদের মেয়ে ঐশী রহমানসহ তিন জনের বিরুদ্ধেঅভিযোগ (চার্জ) গঠন করেছেন আদালত। অন্য দুই জন হচ্ছেন ঐশীর বন্ধু জনি ওরনি। গতকাল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হক এ চার্জ গঠন করেন। আগামী ৫জুন সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন ধার্য করা হয়েছে। অপর আসামি গৃহকর্মীসুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার মামলাটি শিশু আদালতে বদলি করা হয়েছে। গত ৯মার্চ ডিবির ইন্সপেক্টর আবুয়াল খায়ের মাতুব্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ঐশীসহ ৪জনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দু’টি চার্জশিট দাখিল করেন। পরে চার্জশিট গ্রহণকরার পর ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতেপাঠানোর নির্দেশ দেন। গতকাল মহানগর দায়রা জজ ঐশীসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে দেওয়াচার্জশিটটি বিচারের জন্য রেখে সুমির বিরুদ্ধে দেওয়া চার্জশিট জুভেনাইলকোর্টে (শিশু আদালত) পাঠান।
    গত বছরের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগেরচামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা)ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশউদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন ঐশী গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে রমনা থানায়আত্মসমর্পণ করে। গত বছরের ২৪ আগস্ট আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে ঐশীজবানবন্দি দেয়। পরে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছিল দাবিকরে ৫ সেপ্টেম্বর স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। আদালত তানথিভুক্ত রাখার নির্দেশ দেন।
    পরে গত ৯ মার্চ ডিবি ইন্সপেক্টর আবুয়ালখায়ের মাতুব্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ঐশীসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দুটিচার্জশিট দাখিল করেন।  একটি চার্জশিটে ঐশী ছাড়াও তার বন্ধু জনি ও রনিকেঅভিযুক্ত করা হয়েছে। অপর চার্জশিটে হতা কাণ্ডের সহযোগিতার অভিযোগে গৃহকর্মীসুমি আক্তারকে অভিযুক্ত করা হয়। বর্তমানে ঐশী কাশিমপুর কারাগারে আটক রয়েছে।চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, ঐশী অত্যন্ত কৌশলী ও সুচতুর মেয়ে। পরিবারেরপ্রথম সন্তান হওয়ায় সে অত্যন্ত আদরের ছিল। এ কারণে সে ইচ্ছামতো চলত।আসাদুজ্জামান জনি এবং মিজানুর রহমান রনির মতো উচ্ছৃঙ্খল বন্ধুদের সঙ্গেমিশে পরিবারের বাইরের পরিবেশের প্রতি মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ওই কারণে পরিবারেরপ্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং বাবা-মায়ের শাসন তার প্রতি অমানবিক আচরণহিসেবে ভাবত। বন্ধু জনি তাকে দুবাইয়ে ড্যান্স করার প্রস্তাব দেয়। দুবাইযাওয়ার জন্য বাবা মাহফুজুর রহমানের কাছে ৩০ হাজার টাকা চায় ঐশী। বাবা দুবাইযেতে নিষেধ করলে সে ঘটনার একমাস আগে চামেলীবাগের বাসা থেকে বনশ্রীতে বন্ধুজনির সহায়তায় ১৫ দিন সাবলেট ছিল। ওইসময়ই জনিকে নিয়ে বাবা-মাকে হত্যারপরিকল্পনা করে। সুচতুর ঐশী বাবা-মাকে হত্যার পর নিজের মোবাইল ফোন ব্যবহারনা করে মা স্বপ্না রহমানের মোবাইল ফোন থেকে বন্ধুর খালার বাড়িতে আশ্রয়চাইতে মিথ্যা কথা বলে বাসা থেকে মালামালসহ পালিয়ে যায়। যে ডেগার জাতীয় ছোরাদিয়ে বাবা-মাকে হত্যা করেছিল এবং যে চায়েরকাপে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে কফি পানকরিয়েছিল তা ধীরস্থিরভাবে ধুয়ে হাতের ছাপ নষ্ট করে ফেলে। এসময় ভাই ওহী যাতেঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী না হতে পারে এ জন্য সে মা-বাবাকে হত্যার সময় তাকেবাথরুমে আটকে রাখে। হত্যার পর আলামত রক্ত মুছে, নিজে গোসল করে এবং ওহীকেবাথরুম থেকে বের করে। খুন করার পর সে অভিজ্ঞ খুনির মতো মায়ের হাতের চুরি ওআংটি খুলে নেয়। গৃহকর্মী সুমিকে দিয়ে আলুর চিপস ভেজে খায়। অভিযোগে বলাহয়েছে, এসব আচরণ ঐশীর মানসিক পরিপক্বতার প্রমাণ দেয়।
    যেভাবে খুন করা হয়
    ২০১৩সালের ১৩ আগস্ট সকালে ঐশী সবার অগোচরে ৬ পাতার ব্রোমাপিজাম ৩ এমজি ঘুমেরওষুধ সংগ্রহ করে। ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাবা-মায়ের জন্য কফি তৈরিকরে ঘুমের ওষুধ মেশায়। ওই সময় গৃহকর্মী সুমি ওষুধ মেশানোর বিষয়টি দেখেফেললে ঐশী বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য তাকে বলে। মাগরিবের নামাজের পর মাস্বপ্না রহমান ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে টিভি দেখার সময় ঐশী তাকে সেই কফি খেতেদেয়। কিছু সময়ের মধ্যে স্বপ্না  অচেতন হয়ে পড়লে তাকে সোফার ওপর একটিবালিশে শুইয়ে দেয়। এরপর সে বাবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। রাত সাড়ে ১০টারদিকে ঐশী বাবাকে বাসায় আসার জন্য ফোনে অনুরোধ করে। মেয়ের ফোন পাওয়ার পরবাবা মাহফুজুর রহমান বাসায় চলে আসেন। আসার পর স্ত্রীকে ড্রয়িংরুমে অচেতনঅবস্থা দেখে তার কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে মাস্টার বেডরুমেশুইয়ে দেন। ওহীও মায়ের পাশে গিয়ে ঘুমায়। এরপর মাহফুজুর রহমান রাতের খাবারখান। ভাত খাওয়ার পর ঐশী বাবাকে কফি পানের প্রস্তাব দেয়। মেয়ের হাতে কফি পানকরে কথা বলতে বলতে মেয়ের খাটের উপরই অচেতন হয়ে পড়ে যান তিনি। এরপর রাত২টার দিকে ঐশী ডেগার জাতীয় ছোরা নিয়ে মায়ের কক্ষে প্রবেশ করে। সে প্রথমেমায়ের পাঁজরের নিচে ছোরা দিয়ে আঘাত করলে স্বপ্না রহমানের ঘুম ভেঙে যায়। ওইসময় মায়ের পাশে ঘুমিয়ে থাকা ওহীও জেগে ওঠে। সে চিৎকার করে উঠলে ঐশী তাকেবাথরুমে নিয়ে আটকে রাখে। এরপর আবার মায়ের কাছে এসে ফের কয়েকবার মাকে ছোরাদিয়ে আঘাত করে। মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য গলায়ও ছোরা দিয়ে আঘাত করে।স্বপ্না রহমান মারা যাওয়ার আগে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে খাট থেকেমেঝেতে পড়ে যান। মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সে বাবাকেও ছোরা দিয়ে আঘাতকরে। কিছুক্ষণের মধ্যে বাবারও মৃত্যু হয়। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর গৃহকর্মীসুমিকে সে জানায়। এরপর সুমির উপস্থিতিতে মায়ের হাত থেকে চুড়ি এবং আংটি খুলেনেয় এবং লাশ সুমির সহায়তায় বাথরুমে নিয়ে লুকিয়ে রাখে।