ঐতিহাসিক বালিশিরা দিবসঃগ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদ

    0
    189

    আমারসিলেট24ডটকম,২০ফেব্রুয়ারীঃ ঐতিহাসিক বালিশিরা দিবসের ৫১-তম বার্ষিকীতে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শমসেরনগরস্থ কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়। কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিকের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, ধ্রবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, এনডিএফ কমলগঞ্জ উপজেলা কমিটির সদস্য মৃগেন চক্রবর্তী, কৃষক সংগ্রাম সমিতি জেলা কমিটির অন্যতম সদস্য ডা. অবনী শর্মা, কমলগঞ্জ উপজেলা সহ-সভাপতি প্রবীণ কৃষকনেতা আজর আলী, রহিমপুর ইউনিয়ন কমিটির আহবায়ক মোঃ তাহির মিয়া ও যুগ্ম-আহবায়ক আব্দুল কুদ্দুস, সৈয়দ আমির উদ্দিন, নাইওর মিয়া, মোঃ ছনু মিয়া, মোঃ ইউসুফ আলী প্রমুখ। সভায় বক্তারা বলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার বালিশিরার কৃষকরা পাহাড়ে অধিকার রক্ষার দাবিতে ১৯৬৩ সালের ১৯ ফেব্রম্নয়ারি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বাড়ি ফেরার পথে কালিঘাট চা বাগানের সামনে ‘টি ডেভেলাপমেন্ট কমিটির’ মদদে পুলিশ অতর্কিত গুলিবর্ষণ করলে টগবগে যুবক ছালিক ও বৃদ্ধ গণু মিয়া ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। নিহতদের লাশও পুলিশ গুম করে ফেলে, শুরু হয় সমস্ত এলাকায় ব্যাপক পুলিশী নির্যাতন। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে ২৭ ফেব্রুয়ারি শিববাড়ি মাঠের এক জনসভায় গণু মিয়া ও ছালিককে শহীদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ একবছর বালিশিরা পাহাড়ে কৃষকদের আন্দোলন চলে।

    আলোচনা সভায় বক্তারা আরও বলেন দেশে গৃহহীন, ভূমিহীন ও গরীব কৃষকের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলছে আর অন্যদিকে লুটেরা শ্রেণীর সম্পদ ফুলে-ফেপে উঠছে। সার, ডিজেল, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের মাত্রাতিরিক্ত মূল্যের কারণে কৃষি উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ কৃষক উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য পাচ্ছেন না। আবার এই ফসল ফড়িয়া, আড়তদার, মজুতদার তথা মধ্যসত্ত্বভোগীরা লুটপাট করে মূল্য বাড়াচ্ছে। চলতি মৌসুমে কৃষক ধার-দেনা করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আলু চাষ করে উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না। প্রতি কেজির উৎপাদন খরচ যেখানে ৭/৮ টাকা সেখানে আজ কৃষকরা ১ টাকার কমে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ মধ্যসত্ত্বভোগীরা সেই আলু খুচরো বাজারে প্রতি কেজি ৮/১০ টাকায় বিক্রি করে মুনাফা লুটে নিচ্ছে। কৃষকরা আলু রাস্তায় ফেলে বিক্ষোভ করেছেন। এবারই প্রথম নয় কৃষকরা এর আগেও টমেটো রাস্তায় ফেলে, দুধ রাস্তায় ঢেলে, পাটে আগুন দিয়ে মনের জ্বালা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কোন কিছুতেই প্রতিকার হচ্ছে না। সরকার “উন্নয়নের জোয়ারের” কথা বললেও কৃষকের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে কৃষক তথা আপামর জনসাধারণকে বাঁচাতে হলে কৃষক জনগণের জরুরী দাবি-দাওয়া এবং জাতীয় জীবনের জরুরী সমস্যা নিয়ে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গড়ে তুলতে হবে আপোষহীন দূর্বার কৃষক আন্দোলন। বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি ভূমিহীনদের মধ্যে খাস জমি বিতরণ, গরীব কৃষকদের সারা বছর কাজ, কৃষি উপকরণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, নদ-নদী, খাল-বিল খনন, ভেজাল সার ও বীজ বিক্রি বন্ধ, সর্বস্তরে সল্পমূল্যে রেশনিং চালুসহ ৭ দফা দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করে চলছে। বালিশিরা আন্দোলনের ঐতিহাসিক শিক্ষা- সংগঠিত আন্দোলন ছাড়া বিজয় অর্জন করা যায় না। কৃষকদের স্বার্থে আদর্শ ভিত্তিক সংগঠন গড়ে তুলে পরিকল্পিত আন্দোলন সংগ্রামের পথে অগ্রসর হয়ে বিজয় অর্জন করতে হবে। সভায় এক প্রস্তাবে বর্তমান সরকারের হানিমুন প্রিয়ডের মধ্যেই গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।