এ যুগেও সে যুগের ভাবনা বাবাজির আদেশ!

    0
    301

    আমার সিলেট  24 ডটকম,২১অক্টোবর সোনার আশা ক্রমেই ক্ষীণ ডৌড়িয়া খেড়ায়৷ টিকির দেখা মিলছে না স্বপ্নদর্শী বাবাজিরও৷ শিষ্য মারফত তিনি অবশ্য এখন বলছেন, এক হাজার নয়, উন্নাও, ফতেপুর, উদমপুর ও কানপুর মিলিয়ে অন্তত ২১ হাজার টন সোনে কি খজানা পাওয়া যেতে পারে। সরকার যদি তাঁর কথামতো চলে, তা হলে সেই সোনা তিনি তুলে দিতে পারেন রাষ্ট্রের হাতে৷ তবে কীভাবে? বাবা বলেন, সেনা দিয়ে এলাকা ঘিরে পে-লোডারের সাহায্যে রাতারাতি খুঁড়তে হবে৷ কিন্তু সরকারি হস্তক্ষেপ চলবে না ৷

    গত শুক্রবার রাতে ফতেপুরে এবং গত শনিবার দিনভর ডৌড়িয়া খেড়ায় মাটি কুপিয়ে কিছু না পাওয়া গেলেও, সাধুবাবার চেলাচামুণ্ডাদের অবশ্য দাবি, “সরকার আর মিডিয়ার বাড়াবাড়িতে বাবা অখুশি হয়েছেন”! এ দিন সন্ধায় উন্নাওয়ের জেলাশাসক ভিকে আনন্দ জানিয়েছেন, শনিবার পর্যন্ত ৭০ সেন্টিমিটার মাটি খুঁড়েও কিছু মেলেনি৷ ভিড়ও তাই কমছে ৷ সাধু বাবার শিষ্যরা অবশ্য স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, হাজার টন তো দূরের কথা, এভাবে কাজ এগোলে সোনার সিকি-আধুলি মেলাও মুশকিল৷ স্থানীয় গ্রামবাসীরা এখনও অবশ্য তাকিয়ে সাধুবাবার দিব্যদৃষ্টির দিকে৷ তাদের কথা হল, যেভাবে বাবার স্বপ্নের চুলচেরা নেতিবাচক বিশ্লেষণ চলছে, তাতে ঢের অপমান হয়েছে বাবাজির ৷ তাই সোনা না মিললে, তাকে সাধুবাবার পরাজয় না-ভেবে বরং “বাবাজির অমর্যাদার ফল” হিসেবেই দেখবেন তারা ৷ সরকারি অফিসাররা কিন্তু শনিবার দুপুর থেকেই নিজেদের মধ্যে বলাবলি শুরু করে দিয়েছেন, এভাবে “প্রেস্টিজ আভি দাঁও-পে লাগ চুকা হ্যায় ব্রজলাল তিওয়ারিজিকা”৷

    কে এই স্বপ্নদর্শী বাবাজি ব্রজলাল তিওয়ারি ?

    এই ব্যক্তিই সেই যোগীপুরুষ, যাকে গোটা দেশ আজ একডাকে চেনে “শোভন সরকার” নামে ৷ ফেসবুকে এই নামে অন্তত শ খানেক বাঙালি প্রোফাইল মিললেও, একে বাঙালি সাধু ভাবলে মস্তবড় ভুল হবে ৷ চন্দ্রিকাদেবী আশ্রমের ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, ব্রজলালজি আদতে কানপুর দেহাতের (কানপুরের শহরতলিতে একটি মফস্বল এলাকা) ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান৷ কোনও ব্যক্তি নয়, ডৌড়িয়া খেড়া থেকে চার কিলোমিটার দূরে বক্সারের গঙ্গা ধারের যে চন্দ্রিকাদেবীর মন্দির আর সংলগ্ন আশ্রম, সেখানকার প্রধান পদটির নাম আসলে শোভন সরকার৷ কালক্রমে সত্তরোর্ধ্ব ব্রজলালজিই উন্নাও, কানপুর, ফতেপুর, ফৈজাবাদ, বারাবাঁকি অঞ্চলে সরকারজি নামে সমাদৃত৷ প্রৌঢ় আশ্রমিক মোহনলাল প্যাটেলের কথায়, আমার বয়স যখন নয়, তখন থেকেই বাবাজি সরকারজির পদে আসীন৷

    কিন্তু এহেন প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক ব্যক্তি আচমকা গেলেন কোথায়? এ দিন দুপুরে তাঁর সবচেয়ে কাছের মন্ত্রশিষ্য স্বামী ওমজি বললেন, আশ্রম থেকে চলে গিয়েছেন সরকারজি৷ তাহলে কি লোকলজ্জার ভয়ে বাবা গায়েব ? তা কেন ? উনি কানপুর দেহাতের শোভনাশ্রমে রয়েছেন এখন, ঝাঁঝালো জবাব ওমজির৷ দেখা মিলবে কী ? ওমজির চাঁচাছোলা জবাব, উনি মিডিয়ার সঙ্গে দেখা করেন না।

    চন্দ্রিকাদেবী আশ্রমের ভিতর আম, জাম আর ইউক্যালিপটাসে মোড়া বাগান চত্বরে বাঘছাল আসনের ওপর বসে ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন সরকারজির ডান হাত, বাবাজি বলেছেন, ওরা যেভাবে চার ইঞ্চি ছ  ইঞ্চি করে খুঁড়ছে, তাতে কিছু মিলবে না ৷ এতে মাস কাবার হয়ে যাবে, সরকারি টাকার শ্রাদ্ধ হবে৷ অথচ কাজের কাজ কিছু হবে না ৷ মাটি খুঁড়তে হবে বড় যন্ত্র দিয়ে চটজলদি ৷

    বাড়াবাড়ির কথা উপলব্ধি করেছেন শোভন সরকারের শিষ্যরাও৷ স্বামী ওমজি হোক কিংবা আশ্রমিক শৈলেন্দর বাজপেয়ী অথবা বাবলু ভাইয়া- সকলের মুখেই এখন এক রা, বাবাজি সিদ্ধপুরুষ ৷ তাঁর একটাই স্বপ্ন, আর্থিক সঙ্কটমোচন হোক দেশের৷ উনি জানেন, কোথায় কোথায় সোনা আছে৷ সে জন্যই সরকারকে চিঠি লিখেছিলেন৷ আর রাজাসাহাবের সঙ্গে স্বপ্নসাক্ষাৎ? কে বলল স্বপ্নে দেখা মিলেছে ? সরকারকে লেখা চিঠিতে তো স্বপ্নের কথা উল্লেখ করা হয়নি৷ বাবা তো আমাদের বলেছেন, রাজামশাইয়ের সঙ্গে এমনিই দেখা হয়েছিল তাঁর৷ এক্কেবারে সামনাসামনি, বললেন স্বামী ওমজি ৷ সূত্র-ইন্টারনেট