এটিএমে জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকগুলোকে তিন নির্দেশনা

    0
    203

    “সিসি ক্যামেরায় বিদেশির মুখের ছবি ধারন”

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৫ফেব্রুয়ারী অটোমেটিক টেলার মেশিন বা এটিএমের মাধ্যমে অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকগুলোকে তিন নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

    রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, জালিয়াতরা ছয়টি বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ ও ভিডিও ক্যামেরা বসিয়ে রেখেছিল, যার মাধ্যমে তারা বুথে ঢোকানো কার্ডের তথ্য ও পিন নম্বর জেনে গেছে। এরপর ডুপ্লিকেট কার্ড তৈরি করে তারা টাকা তোলার কাজটি সেরেছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোকে এন্টি স্কিমিং ডিভাইস স্থাপন, নিয়মিত ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ এবং এটিএম বুথে যেন কোনোভাবে বাইরের কেউ কোনো যন্ত্র বসানো বা মেরামতের কাজ করতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা বলেন, ‘শুক্রবার একটি ঘটনা ঘটেছে। দুদিন বন্ধ থাকায় আমরা তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি। আজ একটি পরিদর্শন টিম ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়া পরিদর্শন দল গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে ব্যাংকের দায়ও চিহ্নিত করবে, যাতে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক খোয়া যাওয়া অর্থ ফেরত পেতে পারে।

    গত শুক্রবার ইস্টার্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ডধারী কয়েকজন গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটে। ডেবিট কার্ডধারী ২১ গ্রাহক এ নিয়ে ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেছেন। টাকা তুলে নেয়ার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।

    ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার গণমাধ্যমকে বলেন, ইস্টার্নসহ সব ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক সুরক্ষিত। জালিয়াতির কোনো সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অব বাংলাদেশ (এনপিএসবি) সুরক্ষিত না হওয়ায় শুধু ইস্টার্ন ব্যাংক নয়, অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথেও জালিয়াতি ঘটেছে।

    এদিকে, গ্রাহকের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড বানিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রে বিদেশি যোগসাজশ রয়েছে বলে সন্দেহের কথা পুলিশকে জানিয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) কর্তৃপক্ষ।

    এই ঘটনায় বনানী থানায় বেসরকারি ব্যাংকটির করা মামলার এজাহারের সঙ্গে একটি এটিএম বুথের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ছবিও তারা জমা দিয়েছে, যাতে একজন ‘বিদেশির মুখাবয়ব’ ধরা পড়েছে বলে তাদের দাবি। এই সন্দেহের কথা জানিয়ে ওই বিদেশির বাংলাদেশ থেকে পালানো ঠেকাতে পুলিশকে বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরগুলোতে নজরদারি চালাতে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে।

    শুক্রবার রাতে ইউসিবি কর্তৃপক্ষ মামলা করে, যার তদন্ত ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।

    তিনি বলেন, “ইউসিবি কর্তৃপক্ষ এজাহারের সঙ্গে বুথের সিসিটিভিতে ধরা পড়া কিছু ভিডিও ফুটেজ দিয়েছে।”

    বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন খান জানান, বনানী এলাকায় ইউসিবির কিছু এটিএম বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ বসিয়ে গ্রাহকের গোপনীয় তথ্য চুরি করা হয়। তদন্তের স্বার্থে এখনই অনেক কিছু বলা যাচ্ছে না। পুলিশ ওই চক্রটিকে ধরতে কাজ করছে।”

    গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার গ্রাহকের অজ্ঞাতসারে কয়েকটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলাসহ নানা ধরনের ‘ভুতুড়ে ট্রানজেকশনের’ ঘটনা ঘটার পর এই জালিয়াতির বিষয়টি বেরিয়ে আসে। তিনটি ব্যাংকের ছয়টি বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ বসিয়ে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির পর কার্ড ক্লোন করে টাকা তুলে নেয়ার তথ্য পাওয়ার কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তকারীরা।

    থানায় মামলাটি করেন ইউসিবি কার্ডের ব্রাঞ্চেস কন্ট্রোল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিভিশনের হেড অব ফ্রড কন্ট্রোল অ্যান্ড ডিসপিউট ম্যানেজমেন্ট মাহবুব উল ইসলাম খান। মামলায় তিনি বলেছেন, তাদের বনানীর একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তা প্রহরীকে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে যান্ত্রিক ত্রুটি সারানোর নাম করে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ঢুকেছিলেন এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তি সকাল ১০টা ৪২ মিনিটসহ বিভিন্ন সময়ে ঢুকে আমাদের বুথে স্থাপিত এটিএম মেশিনের কম্পিউটারের তথ্যাদি সংগ্রহ করার নিমিত্তে কার্ড ডাটা কপি করার যন্ত্র (স্কিমিং ডিভাইস) স্থাপন করে। পরবর্তীতে অজ্ঞাতনামা এই আসামি অবৈধ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটিএম মেশিনের কম্পিউটার সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশের মাধ্যমে কপিকৃত ডাটা দিয়ে ট্রানজেকশন করতে সমর্থ হয়।”

    বুথের মধ্যে থাকা সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা চিত্রে অপরাধীরা ধরা পড়েছে দাবি করে মাহবুবের এজাহারে বলা হয়, পুনরায় ওই আসামিকে দেখলে তিনি ও তাদের বুথের প্রহরী চিনতে পারবেন। আসামির ছবি প্রিন্ট করে এই এজাহারের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিলাম। উক্ত অজ্ঞাতনামা আসামির মুখাবয়ব দেখে বিদেশি মনে হওয়ায় যে যেন পালাতে না পারে, সেজন্য সকল বন্দরে ছবি পাঠানোর অনুরোধ করছি।”

    এজাহারে বলা হয়, অজ্ঞাতনামা ওই আসামি ১১ ফেব্রুয়ারিসহ কয়েকটি দিন ও সময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে অন্তত সোয়া লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার সঙ্গে সংঘবদ্ধ একটি দল জড়িত বলে সন্দেহ হচ্ছে। ইউসিবির মতো ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) গুলশান এলাকার দুটি বুথ থেকে এভাবে গ্রাহকের তথ্য চুরি হয়েছে।ইরনা