‘একটি বাড়ী একটি খামার’ প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

    0
    249

     উপজেলা সমন্বয়কারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ভ্রমন ভাতা সহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৩অক্টোবর ,শাব্বির এলাহী: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পে কর্মরত উপজেলা সমন্বয়কারী জুবায়েদা মরিয়মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ভ্রমন ভাতা সহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্পের মাঠ সুপারভাইজার, মাঠ সহকারী, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সভাপতি ও ম্যানেজারদের সাথে অশালীন আচরন ও সিলেটীদের নিয়ে কটুক্তির অভিযোগ রয়েছে। সরকার নির্ধারিত ভাতা বিতরণ না করে প্রকল্প সমন্বয়কারী বরাদ্দের অর্থের নয়-ছয় করে সীমাহীন লুটপাট করেছেন বলে জানা গেছে। এ নিয়ে পুরো কমলগঞ্জ উপজেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন মহল এসব ঘটনার তদন্ত দাবী করেছেন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে।

    সরকার গ্রামীন জীবন যাত্রার মানউন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্য নিয়ে বিআরডিবি’র আওতায় ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প চালু করলেও কমলগঞ্জ উপজেলায় এ প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার কারণে মুখ থুবরে পড়ার আশংকা করছে সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীরা। এই প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত, নানা অনিয়ম ও সেচ্ছাচারীতায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে প্রকল্পের সমিতি’র সদস্যরা। উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা বিআরডিবি চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা না করে বিভিন্ন বিষয়ে এককভাবে মনগড়া সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মকান্ড পরিচালনা করেন উপজেলা সমন্বয়কারী।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালে কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর, পতনঊষার, শমশেরনগর ও ইসলামপুর ইউনিয়নে এ প্রকল্প চালু করা হয়। নিয়মানুযায়ী প্রত্যেক ইউনিয়নের ৯ টি ওয়ার্ডে ৬০ জন করে সদস্য নিয়ে একটি করে সমিতি গঠন করা হয়। ৪ ইউনিয়নে সমিতি গঠন করা হয় ৩৩ টি। ওইসব সমিতি’র হতদরিদ্র সদস্যরা মাসিক ২০০ টাকা করে স য় করলেই সরকার থেকে স য়ের সম পরিমান টাকা এবং প্রধান মন্ত্রীর তহবিল থেকে প্রাপ্ত টাকা মিলিয়ে সমহারে ঋণ প্রদান করা হবে। সে হিসেবেই উল্লেখিত সকল সমিতি’র সদস্যরা মাসিক ২০০ টাকা করে স য় শুরু করে। বর্তমানে কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে বিআরডিবি’র আওতায় ‘একটি বাড়ী একটি খামার’ প্রকল্পের ৭৩টি সমিতি রয়েছে। প্রতিটি সমিতির একজন সভাপতি ও একজন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছে। এদিকে, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রশান্ত কুমার রায়ের ১৩.০৫.২০১৫ইং তারিখে স্বাক্ষরিত স্মারক- ১১১৮ নং পত্রে জানা যায়, টিফিন ভাতা, ভ্রমন ভাতা, পেট্রোল, ষ্টেশনারী ক্রয়, প্রশিক্ষন, সেমিনার, সম্মানী ভাতা, সার্ভে, কম্পিউটার সামগ্রী ক্রয়, মোটরযানসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ এসেছে। এর মধ্যে অনেক খাতের অর্থ সঠিক খাতে ব্যয় না করে গত জুন ক্লোজিং এর সময়ে ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করে সমস্ত অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।  ফটোকপির মেশিন, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ক্রয়ের অর্থ উত্তোলন করে কম্পিউটার মেরামত না করে আত্মসাৎ করেছেন। অফিস খরচের টাকা খরচ না করে পকেটস্থ করেছে।

    অভিযোগ রয়েছে, কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প সমন্বয়কারী জুবায়েদা মরিয়মের ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত ভ্রমন ভাতা, টেলেক্স, পেট্রোল, অফিস ষ্টেশনারী, প্রশিক্ষণ, সেমিনার, সার্ভে, কম্পিউটার সামগ্রী ক্রয় ও মেরামত, মোটর সাইকেল মেরামত সহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগই আতœসাত করেছেন। অতিসম্প্রতি শ্রেষ্ঠ সমিতির সভাপতি-ম্যানেজার পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠান শুধুমাত্র পুরু®কৃতদের নিয়ে ঘরোয়াভাবে সম্পন্ন করেন। যার বাজেট ছিল ১০ হাজার ৫ শত টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই অনুষ্ঠানে উপজেলা বিআরডিবি চেয়ারম্যান, সাংবাদিক ও গ্রাম উন্নয়ন সমিতি’র অন্যান্য সভাপতি-ম্যানেজারকে না জানিয়ে উপজেলা সমন্বয়কারী জুবায়েদা মরিয়ম মাত্র ১৮ শত টাকা খরচ করে পুরো টাকাই আত্মসাত করেছেন। মোটর সাইকেল মেরামত বাবদ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও সাইকেল মেরামত না করেই ভূঁয়া বিল ভাউচার দিয়ে পুরো টাকা আত্মসাত করেছেন। মোটর সাইকেলটি বর্তমানে অকেজো অবস্থায় অফিসেই আছে। ভ্রমন ভাতায় ৬৬ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও ২ জন মাঠ সুপারভাইজারকে ৬ হাজার ৩ শত করে ও ৮ জন মাঠ সহকারীকে ৩৮ শত টাকা করে দিয়ে বাকী টাকা আত্মসাত করেন। জ্বালানী খরচ বাবদ ১০ হাজার ৫ শত টাকা বরাদ্দ থাকলেও এর সিংহ ভাগই আত্মসাত করেছেন। অফিস ষ্টেশনারী বাবদ ১৩ হাজার ৫ শত টাকা বরাদ্দ থাকলেও ভূঁয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে সামান্য টাকা খরচ করে বাকীগুলো আত্মসাত করেন। কম্পিউটার সমাগ্রী ক্রয় ও মেরামত বাবদ ৯ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও শুধুমাত্র কম্পিউটারের কালি কিনে এর পুরো টাকাই আত্মসাত করেছেন। ৯ জন মাঠ সহকারীর জন্য ১০ হাজার টাকা মূল্যের ৯টি বাইসাইকেল ক্রয় করার কথা থাকলেও প্রত্যেকটি ৭ হাজার টাকা করে ক্রয় করে বাকী টাকা আত্মসাত করেন।

    এছাড়া উপজেলা সমন্বয়কারী মাঠ সুপারভাইজার, মাঠ সহকারী, গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সভাপতি-ম্যানেজারদের সাথে কারণে অকারণে অশালীন আচরণ করেন। এমনকি সিলেটীদের নিয়ে নানা কটুক্তি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। উপজেলা সমন্বয়কারী জুবায়েদা মরিয়ম কমলগঞ্জে কর্মরত থাকলেও তিনি শ্রীমঙ্গল শহরে থাকেন। যার ফলে সকাল ১১টার আগে অফিসে আসেননা।

    এ ব্যাপারে বিআরডিবি’র উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা (ইউআরডিও) দেবাশীষ চৌধুরী জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী জুবেয়দা মরিয়ম ভালো বলতে পারবে।

    এ বিষয়ে বিআরডিবি’র কার্যালয়ে প্রকল্প সমন্বয়কারী জুবায়েদা মরিয়মের কাছে জানতে চাইলে বলেন, এ অফিসে কোন সমস্যা নেই, যদি কিছু জানতে হয় তাহলে আমার অফিসে আসেন, তাহলে তথ্য দেব। তার বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগের সত্যতা কতোটুকু জানতে চাইলে তিনি দম্ভোক্তি করে বলেন, এসব অভিযোগ দিয়ে কেউ আমার কিছু করতে পারবেনা।

    এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা সমন্বয়কারীর বিরুদ্ধে আমার কাছে কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।