উপবৃত্তি থেকে নাম বাদ পড়ায় কমলগঞ্জে শিক্ষকের উপর হামলা

    0
    190

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৪জানুয়ারীঃ উপবৃত্তির তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের এক উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষককে মারধর করে অবরুদ্ধ করে রাখেন কতিপয় বিক্ষুব্ধ অভিভাবক। ইউএনও এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা সুপারভাইজারকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রোববার (২৪ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় ইসলামপুর ইউনিয়নের ভান্ডারীগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনাটি ঘটে। প্রধান শিক্ষকের উপর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ।

    ভান্ডারীগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন শ্রেণির এ বছরের উপবৃত্তির তালিকা থেকে কিছু শিক্ষার্থীর নাম বাদ পড়াকে কেন্দ্রে করে রোববার সকালে শতাধিক অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যরা বিদ্যালয়ে জড়ো হয়েছিলেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সুলেমান মিয়ার উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ স্বরে বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে কতিপয় বিক্ষুব্ধ অভিভাবক ভান্ডারীগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: খোরশেদ আলীকে অফিসকক্ষ থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে মারধর করেন এবং ইট পাটকেল দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে অফিস কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। ঘটনার খবর পেয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাৎক্ষনিক বৈঠক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জিপ গাড়িতে করে আহত প্রধান শিক্ষককে স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকে পাঠিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে তাঁর বাসায় পৌছে দেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভান্ডারী গাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা চলতি বছরে এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা গ্রহনেরও অভিযোগ তুলেন।

    বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান সুলেমান মিয়া বলেন, প্রধান শিক্ষক কখনই পরিচালনা কমিটির সদস্যদের মূল্যায়ন করেননি। উপবৃত্তির নামের তালিকা প্রেরণ নিয়ে আগে থেকেই অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন। তাতে প্রধান শিক্ষক কোন সমাধান না করায় রোববার এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আহত প্রধান শিক্ষক মো: খোরশেদ আলী বলেন, সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা উপবৃত্তির জন্য পাঠানো হয়েছে। সরকারী শর্তে যারা উপবৃত্তির অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি তাদের নামের তালিকা পাঠানো হয়নি। এখন আবার ফরম পূরণকালে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন। ফরম পূরণে বোর্ডের নির্ধিারিত ফির বাইরে কোন টাকা নিতে হলে পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিতে হয়েছে।

    কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম, বিক্ষুব্ধ অভিভাবকদের হাতে প্রধান শিক্ষক লাঞ্চিত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আপাতত পরিস্থিতি শান্ত আছে। আর এ ঘটনার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা সুপারভাইজার মৌসুমী পালকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, তদন্তক্রমে উপবৃত্তির নামের তালিকা তৈরীতে ও ফরম পূরণে কোন অনিয়ম ধরা পড়লে দায়ী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

    তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক ও এলাকাবাসী এ প্রতিনিধিকে বলেন, আসলে পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান সুলেমান মিয়া ও তাঁর ভাই সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নানের দ্বন্ধে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও দুই ভাগে বিভক্ত। এই বিভক্তিতে কতিপয় অভিভাবক বিক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যানের সামনেই প্রধান শিক্ষককে মারধর করেছেন।

    এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি রনেন্দ্র কুমার দেব ও সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন ভান্ডারীগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খুরশেদ আলীর উপর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক উপবৃত্তির নামের তালিকা থেকে বাদ পড়ায় একজন সম্মানিত শিক্ষকের উপর এ ধরণের সন্ত্রাসী হামলা কোনভাবেই কাম্য নয়।