ঈদ:মুসলিম মিল্লাতের মিলন উৎসব

    0
    229

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৫জুলাই,লুৎফুর রহমান তোফায়েলঃ ঈদ। মুসলিম হৃদয়ে আনন্দের ঢেউ তোলা এক আবেগময়ী শব্দ, এক জান্নাতি উৎসব। এর সাথে জড়িয়ে আছে মিল্লাতের মিলন-সম্মিলনের এক চিরন্তন উপলক্ষ। আনন্দ আর উল্লাসের সাথে জীবনের মর্মকথা, মমত্ববোধ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করার এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করে উপলক্ষটি। প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের সুর এক হয়ে অনুরণিত হয় এই উৎসবকে ঘিরে। জেগে ওঠে মানবতার জয়গান। মানব হৃদয়ে বেজে ওঠে পারস্পরিক ভ্রাতত্বের শাশ্বত আহ্বান। বিশ্ব মানবকুল উদ্ভাসিত হয় মহামিলনের মহোৎসবে। ধরীত্রীর সকল মায়া-মমতা একীভূত হয়ে যায় এ দিনটির জন্যে। মুমিন জাতির মননে জেগে ওঠে জাতীয়তাবোধ ও স্বকীয়তার চেতনা।

    ঈদ আসে আমাদের সমাজ ও জাতীয় জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি, ন্যায় ও সাম্যের বার্তা নিয়ে। আসে পরস্পরিক সৌহার্দ্য ও মমত্ববোধের মহান শিক্ষা নিয়ে। তাই-তো এদিনে ধনী-গরীব, উঁচু-নীচু, সাদা-কালো, ইতর-ভদ্র, রাজা-প্রজা, বিভেদ-বৈষম্য ছাড়া সবাই একীভূত হয় এক লক্ষ্য নিয়ে। একে অপরকে আলিঙ্গন করে ভালোবাসার নজরানা স্বরূপ। সহজ-সরল মানসিকতা প্রকাশে গায়ে পরে সাদা জামা। হাতে হাত রেখে নবায়ন করে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের প্রতিশ্রুতির। কাঁধে কাঁধ রেখে ঈদের সালাত আদায়ের মাধ্যমে মহান প্রভূর দরবারে আত্মসমর্পন  করে সম্মিলিতভাবে। প্রার্থনা করে দেশ-জাতি, সমাজ-সভ্যতার কল্যাণের। এমনই এক মিলন মুহূর্তে মহান আল্লাহ পৃথিবীজুড়ে বর্ষণ করেন অনাবিল রহমত। সর্বত্র বিরাজ করে জান্নাতি পরিবেশ। আনন্দঘন এ মূহূর্তটি উপভোগ করে মালিকের অনুগত সব বান্দারা।

    জান্নাতি এই পরিবেশে আমাদের মাঝে জন্ম নেয় মানবিক গুণাবলী। নতুন করে স্মরণ হয় আত্মপরিচয়। সবাই অনুভব করে ঐক্য-সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব-প্রয়োজনীয়তা। সমাজে চলমান সকল অন্যায়, অবিচার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়ানোর সুযোগ আসে। ঈদকে উপলক্ষ করে ফিরে তাকানো যায় সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির দিকে। মানুষে-মানুষে বিদ্যমান সকল বিভেদ-বৈষম্য দূর করতে সাধ্য মতো সহযোগিতার হাত প্রসারিত হয় তাদের দিকে। এখানে যাকাত এবং ফিতরা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যাকাত হচ্ছে, নেসাব (সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার দামের সমপরিমাণ সম্পদ) পরিমাণ যার কাছে থাকে এবং নিজের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সব খরচ ও ঋণ মুক্তভাবে এক বছর অতিক্রম করে, তখন তার শতকরা ২.৫ ভাগ যাকাত গ্রহণের উপযোগী (৭ শ্রেণির মানুষকে যাকাত দেয়া যায়) ব্যক্তিদের দান করা। তেমনি সামর্থবান ব্যক্তিদের ঈদুল ফিতরের সালাতের আগেই সাদাকাতুল ফিতর (ফিতরা) আদায় করতে হয়। এছাড়াও সবাই চারপাশের সুবিধাবি ত মানুষগুলোকে সহযোগিতা করে নিজের সামর্থ অনুযায়ী। একটি সমৃদ্ধ সমাজ ও কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে এটি ইসলামের এক মহান শিক্ষা।

    ঈদ উৎসবে মানুষের মাঝে জাগ্রত হয় পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের। সমবায় সমাজ গঠনের তাগিদ আসে হৃদয়ের গভীর থেকে। ঈদ মুসলমানদের মনে করিয়ে দেয় নিজেদের হারানো ঐতিহ্যের কথা। একসময় অর্ধ পৃথিবীর শাসক ছিল এই জাতি। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিল্প, বিজ্ঞানসহ সব ক্ষেত্রেই মুসলমানদের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। একটি সমৃদ্ধ ও সুন্দর ঐতিহ্য ছিল আজকের নির্যাতিত মুসলমানদের, যারা নিজেদের পূর্বসুরীদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ঈমানি চেতনা ভুলে গেছে। মিথ্যে মরিচিকার মতো পিছু ছুটছে মেকি সভ্যতার। তাই তাদের উপর নেমে এসেছে এই অপমানজনক পরিস্থিতির। ঈদ উৎসবটি মুসলমানদের সেই চেতনা ফিরিয়ে আনুক, জাগ্রত হোক ঘুমন্ত স্বত্ত্বা, হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হোক মুসলিম জাতি। তবেই সার্থক হবে ঈদের খুশি।“লেখক:কলামিস্ট”