ইয়াসির আরাফাতকে বিষ প্রয়োগেই হত্যা করা হয়

    0
    233

    আমার সিলেট  24 ডটকম,০৭নভেম্বরঃ মুসলিম বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা ফিলিস্তিনের  ইয়াসির আরাফাতকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ২০০৪ সালে মৃত্যুর সুইস ও রাশিয়ার ফরেনসিক তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার স্ত্রী জানিয়েছেন, তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছিল। সুইস তদন্ত দলের প্রতিবেদনেও এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর ফলে ইয়াসির আরাফাতকে বিষ প্রয়োগে হত্যার সন্দেহ যারা করছিলেন এতদিন ধরে, এখন তার ভিত্তি পাওয়ার দাবি করতে পারেন তারা। গতকাল বুধবার একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ তথ্য  গুরুত্ব সহকারে জানানো হয়।
    গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের ব্যাপারে গঠিত ফিলিস্তিন তদন্ত দলের প্রধান তওফিক তিরাবি বলেন, সুইস ল্যাবরেটরি তাদের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করে। আরাফাতের স্ত্রী সুহা আরাফাত জানিয়েছেন, আরাফাতের শরীরে তেজস্ক্রিয় পদার্থ পোলোনিয়াম বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সত্যিকারের একটি অপরাধকে প্রকাশ করছি এবং এটা একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। তিনি আরো বলেন, আমাদের সন্দেহ সম্পূর্ণভাবে সত্যি এবং সেটাই প্রমাণ হয়েছে। তিনি গত মঙ্গলবার সুইস ল্যাবের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সুহা বলেন, এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, আরাফাতের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। তবে তিনি এজন্য কোনো দেশ কিংবা কোনো ব্যক্তিকে দায়ী করেননি।প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, আরাফাতের শরীরে অস্বাভাবিকভাবে পোলোনিয়ামের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। যোগাযোগ করা হলে সুইস ল্যাব এ ব্যাপারে কোন ধরনের মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।
    এদিকে গণমাধ্যমগুলো জানায় আরাফাতের দেহাবশেষ এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত সব নথি পরীক্ষার পর সুইজারল্যান্ডের গবেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনি মুসলিম এই নেতার দেহে উচ্চ মাত্রার তেজষ্ক্রিয় পদার্থ পোলোনিয়ামের অস্তিত্ব ছিল। সুইস গবেষকদের প্রতিবেদন হাতে পেয়ে গতকাল বুধবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বের জনপ্রিয় প্রায় সব গণমাধ্যমগুলো। গণমাধ্যমগুলো জানায় ইয়াসির আরাফাতের দেহে পাওয়া পোলোনিয়াম-২১০ সাধারণ খাবারের মধ্যে স্বল্পমাত্রায় থাকে, মানবদেহেও প্রাকৃতিকভাবে এর অস্তিত্ব থাকতে পারে। তবে অতিমাত্রায় দেহে প্রবেশ করালে তা মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত ২০০৮ সালে ফ্রান্স মিলিটারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। স্ট্রোকের সঙ্গে রক্ত সঞ্চালনে জটিলতাকে তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছিল। তবে শুরু থেকেই অনেক ফিলিস্তিনিদের সন্দেহ ছিল, তাদের নেতাকে  বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয় এবং এর পেছনে ইসরায়েলের হাত রয়েছে। তবে এর আগে হত্যার কয়েকটি ষড়যন্ত্রের তথ্য ছাড়া এই সন্দেহের পক্ষে কোনো জোরালো প্রমাণ ছিল না। আর ইসরায়েলও এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল। তবে আরাফাতকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে বলে একটি টেলিভিশন গণমাধ্যমে এক প্রামাণ্যচিত্রে দাবি করা হলে নতুন করে তা নিয়ে আলোচনা ওঠে আসে ।
    এরই  রেশ ধরে গত বছর ফিলিস্তিন ও আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ইয়াসিরের দেহাবশেষ কবর থেকে তুলে আবার পরীক্ষা চালানোর কাজ শুরু হয়। এই পরীক্ষায় অংশ নেয়া সুইস বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদনে বলা হয়, তার শবদেহে অপ্রত্যাশিতভাবে উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় পোলোনিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা প্রকারান্তরে বিষপ্রয়োগের ইঙ্গিত দেয়।তবে মৃত্যুর প্রায় আট বছর পর অনুসন্ধান কাজ শুরু করার কারণে অনেক আলামত চিহ্নিত করা দুরূহ ছিল- তা স্বীকার করে সঠিক চিত্র তুলে ধরতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন বলেও জানান গবেষকরা। ইয়াসিরের দেহাবশেষ তোলার পর রাশিয়া ও ফ্রান্স এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালায়। তবে রুশ গবেষক দল গত মাসে জানান, তারা পোলোনিয়ামের কোনো অস্তিত্ব পাননি।
    সুহা আরাফাত সুইস গবেষকদের প্রতিবেদন পেয়ে আরো বলেন, এটি একটি সাচ্চা অপরাধ, একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। এই প্রতিবেদন আমাদের সব সন্দেহ দূর করেছে। বৈজ্ঞানিকভাবে এটা প্রমাণ হয়েছে যে, তার মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। তাকে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা ছিল- সেই বিষয়ে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠির নাম সরাসরি উল্লেখ করেননি সুহা। তবে বলেছেন, তার স্বামীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে অনেক শত্র“ ছিল। আরাফাত ৩৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় দলগুলোর মূল সংগঠন ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলওর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন তিনি, এসেছিলেন বাংলাদেশেও। ১৯৯৬ সালে ঢাকায় বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি দিয়েছিলেন তিনি, সেটাই ছিল তার সর্বশেষ বাংলাদেশে আসা।
    উল্লেখ্য,২০০৪ সালে পশ্চিমতীরে নিজের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৭৫ বছর বয়সি আরাফাত। এর দুই সপ্তাহের মাথায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফ্রান্স নেয়া হয়। ওই বছর ১১ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়েছিল।