আলোচিত গ্রেনেড হামলার আজ ”৯ বছর” মামলার কার্যক্রম কবে শেষ হবে

    0
    281

    আমার সিলেট ডেস্ক,২১ আগস্ট : আজ বুধবার বিভীষিকাময় রক্তাক্ত ২১ আগস্ট, বারুদ আর রক্তমাখা বীভৎস হত্যাযজ্ঞের দিন। সভ্যজগতের অকল্পনীয় এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় এ দিনে। গ্রেনেডের হিংস্র দানবীয় সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতাকে। দেশবাসীর আজ প্রত্যাশা এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সত্য উৎঘাটন হোক। প্রকৃত পরিকল্পনাকারী, হত্যাকারীদের বিচার নিরাপত্তা ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে জরুরি। তাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রকৃত অপরাধী এবং পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারীদের যথোপযুক্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এ নির্মম ট্র্যাজেডির সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বিচার হোক, সত্যের আলোয় বেরিয়ে আসুক অপরাধীদের যাবতীয় কর্মকান্ড। এটাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন,যেন অপরাধীরা বিচার এড়াতে না পারে।

    ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর পিপি আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া আশাবাদ প্রকাশ করেন যেভাবে সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হচ্ছে, তাতে দ্রুত মামলারবিচারকাজ শেষ হবে।নয় বছর আগের এই হামলার ঘটনাটিকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টার অভিযোগ ওঠার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শুরু হয় বিচার।তত্ত্বাবধায়ক আমলে শুরু হওয়া বিচারের মধ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অধিকতর তদন্ত হয়,দেয়া হয় সম্পূরক অভিযোগপত্র।আর এর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার এই মামলায় আসামির তালিকায় যোগ হন ৩০ জন, যার মধ্যে রয়েছেন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান।

    তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে নতুন ৩০ জন যোগ হয়ে আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে।দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা এই দুই মামলা দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হলেও নির্ধারিত ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার শেষ না হওয়ায় তা জজ আদালতে ফেরত যায়।নতুন আসামি যোগ হওয়ার পর পুনরায় মামলাটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়, এখন মামলার বিচারকাজ চলছে ঢাকার রোডে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে মামলার ৭২তম সাক্ষী র‌্যাবের সাবেক গোয়েন্দা উপ-পরিচালকমোহাম্মদ আতিকুর রহমানের সাক্ষ্য নিয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৬ অগাস্ট তারিখ ঠিক করেছেন এই বিচারক।

    আতিকের আগে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন বিএনপি আমলের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর বডিগার্ড পুলিশ কনস্টেবল আহসান হাবিব। মামলার অন্যতম আসামি পিন্টু কারাগারে রয়েছেন।এই মামলায় সাক্ষ্যে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মিজানুর রহমান বলেছিলেন, ২০০৪ সালের ১৮ও ১৯ অগাস্ট উপমন্ত্রী পিন্টুর বাসায় ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি নেতা মুফতি হান্নান, আবু তাহের।

    তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরও ওই বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন বলে মুফতি হান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানান ওই সময়কার ডিজিএফআই কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ অন্তত ২৩ জন নিহত এবং বহু আহত হন।বিএনপি আমলে এই হামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ভবঘুরে জজ মিয়াকে আসামি সাজিয়ে‘নাটকের’ চেষ্টা হয়েছিল বলে আওয়ামী লীগের অভিযোগ।তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালের ১১ জুন সিআইডি কর্মকর্তা ফজলুল কবীর ২২ জনকে আসামি করে দুই মামলার অভিযোগপত্র দেন। ২১ অগাস্টের মামলায় ৪৯১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৭১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে ।

     

    আজ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
    ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদের স্মরণ ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ বুধবার সকল ১১টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও অনুরূপ কর্মসূচিতে যোগদান করবেন। এ সময় শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও আহতদের সাথে সাক্ষাৎ এবং আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করবেন।
    আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন, সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আজ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে দিবসটি পালন করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল স্তরের নেতা কর্মী সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল জেলা, মহানগর উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সমস্ত শাখার নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি স্মরণ ও পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
    ২০০৪ সালের এইদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা এবং নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত মিছিলপূর্ব সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সমাবেশে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে পরিকল্পিতভাবে মানবতার শত্রু সন্ত্রাসী ঘাতকচক্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা এবং গুলিবর্ষণ করে। যুদ্ধে ব্যবহৃত হয় এমন তেরটি গ্রেনেড বিস্ফোরণে এক নারকীয় তান্ডবের সৃষ্টি হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ। সেদিন গ্রেনেড হামলার প্রচন্ডতায় মুহূর্তেই ওই স্থানটি পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে।
    বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ হিংস্র সাপদের ভয়াল ছোবলে তথা নৃশংস বর্বরোচিত হামলায় নেতা কর্মীদের মানব ঢাল ও পরম করুনাময় আল্লাহতায়ালার রহমতে প্রাণে বেঁচে গেলেও এ নিষ্ঠুর আক্রমণে শহীদ হন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নারী নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী। আহত হন অগনিত আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী সমর্থক ও সাধারণ মানুষ। তাদের অনেকেই আজীনের জন্য পঙ্গু হয়ে আজ ও মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। প্রকৃত অর্থে সুপরিকল্পিত এ হামলার উদ্দেশ্য ছিল দেশের প্রধান দল আওয়ামী লীগ, যারা এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক আদর্শের পতাকা বহন করে তাকে নেতৃত্বহীন এবং বিনাশ করে দেয়া।