আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করি নাঃশেখ হাসিনা

    0
    318

    ডেস্ক নিউজঃ আ’লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে বা কুটুক্তি করলেই কএই উপমহাদেশে কওমী শিক্ষা ধারাই হলো প্রথম শিক্ষা ব্যবস্থা। তাই দ্বীনি শিক্ষার মানুষেরা এদেশে কোনোদিন অবহেলিত হবেন না। কওমী শিক্ষার্থীদের দাঁড়াতে সরকার সব রকম সহায়তা করবে। আর সত্যিকার ইসঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করি না।

    ৪ নভেম্বর রোববার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাইআতুল উলইয়া আয়োজিত “শুকরানা মাহফিলে” তিনি এসব কথা বলেন।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক অপপ্রচার হয়। কোনও অপপ্রচার বিশ্বাস করবেন না। লামে বিশ্বাসীরা সন্ত্রাসী হয় না। যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে, তারা ইসলামে বিশ্বাস করে না। তাদের কোন ধর্ম নাই।

    কওমি ওলামা-মাশায়েখের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,সামনে নির্বাচন। আল্লাহ যদি আমাকে আবার ক্ষমতায় আনেন, তাহলে দেশের খেদমত করব। ক্ষমতায় না আনলে কোন আফসোস নেই। কারণ আমি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, জনগণের জন্য কাজ করি। আমি একেবারে এতিম। আমরা দু’টি বোন আছি। আমাদের ছেলে মেয়েদের জন্য দোয়া করবেন। যেন আল্লাহ আমাদের ভালো রাখেন। সামনে নির্বাচন। সবাই দোয়া করবেন। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক শুকরানা মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।

    উপস্থিতদের একাংশ

    ‘আল-হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এই শুকরানা মাহফিলের আয়োজন করে। কওমি মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তরের স্বীকৃতি দেওয়ায় এই মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ ঘিরে ব্যপক প্রস্তুতি এবং প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে ব্যপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। ইসলাম ও আলেম সমাজের জন্য বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করি। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিশ্ব ইজতেমার জন্য টঙ্গীতে জায়গা দিয়েছিলেন। আজকের কওমি আলেমরা সবচেয়ে বড় কাজ করেন। তারা এতিমকে আশ্রয় দেন, গরীবের ছেলে মেয়েদের আশ্রয় দেন। এর চেয়ে বড় কাজ আর কি হতে পারে। এতিমরা যেন আশ্রয় পায়, তারা পড়ালেখা করে যেন কোথাও দাঁড়াতে পারে আপনারা এই বড় কাজটা করছেন। কিন্তু জাতির জনক সেটা করতে পারেননি। ১৯৭৫ সালে আমি পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি। ১৯৭৭ সালে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা কওমির স্বীকৃতি দেওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি অবাক হয়েছিলাম।
    সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অপপ্রচার হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই অপপ্রচার রোধ করার জন্য আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছি। কেউ অপপ্রচার চালালে এই আইনের মাধ্যমে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। উপস্থিত আলেম ও কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সামাজিক মাধ্যমে নানারকম অপপ্রচার হয় এ সব অপপ্রচারে আপনারা কান দেবেন না। যারা অপপ্রচার করবে তাদের আমরা উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেব। আমাদের ধর্ম ইসলাম ধর্ম এবং নবী করিম (সা.) সম্পর্কে কেউ কোনো অবমাননাকর কথা বললে, আইন দ্বারাই তার বিচার হবে। আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেব না। আইনের মাধ্যমে তাদের বিচার করে উচিত শিক্ষা দিয়ে দেব, যাতে তারা কোনোভাবে এ ধরণের অপপ্রচার চালাতে না পারে। তিনি বলেন, যারা দ্বীন ইসলামের খেদমত করছেন, তাদের মধ্যে উপস্থিত হতে পারা একটা সৌভাগ্যের বিষয়। আমাকে যখন আল্লামা শফী সাহেব জানালেন, এই বিল পার্লামেন্টে পাস হওয়ায় তিনি সংবর্ধনার আয়োজন করবেন। আমি বললাম, সংবর্ধনা আমার জন্য না, এটা হবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা। আমরা এইটুকু যে করতে পেরেছি, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া আদায় করতে চাই।
    ইসলাম শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ইসলাম ধর্ম হচ্ছে শান্তি আর ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। ইসলাম ধর্ম মানুষকে শান্তির পথ দেখায়। আর সেই দ্বীন শিক্ষা যারা দেয় তারা কেন অবহেলিত থাকবে। কাজেই আলেমদের কখনো অবহেলিত থাকতে দেওয়া যায় না।
    বঙ্গবন্ধু ইসলামী শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করেছেন উল্লেখ করে স্বাধীনতার পর ইসলাম শিক্ষার উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাবার কাছ থেকে সব সময় এটাই শিখেছি। আমার পিতা আমাদের এই শিক্ষাই দিয়েছেন, মানুষের সেবা করো। আর সাধারণভাবে জীবনযাপন করো। আমরা সেই শিক্ষাই পেয়েছি। তিনি বলেন, পাক-ভারত উপমহাদেশে মুসলমানদের শিক্ষা গ্রহণ করবার একমাত্র প্রথম উপায়ই ছিল কওমি মাদরাসা। কওমি মাদরাসার মধ্য দিয়েই মুসলমানরা শিক্ষা গ্রহণ শুরু করে। পাশাপাশি কওমি মাদরাসা যারা সৃষ্টি করেছিলেন তারা ওই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিলেন। কাজেই তাদের সব সময় আমরা সস্মান করি।
    ‘আমি সব সময় আল্লাহকে বিশ্বাস করি’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাসিত জীবনের পর যখন বাংলাদেশে ফিরে এসেছি, তখন খুনিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি বিচার চাইতে পারি না। আমার বিচার চাওয়ার অধিকারও ছিল না। কারণ আইন করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বন্ধ করা হয়েছিল। তারপরও আমি বাংলাদেশের জনগণ এবং উপরে আল্লাহর উপর ভরসা করে আমাদের দল আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত করলে দেশের মাটিতে ফিরে আসি। আমি শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করেই চলে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম, আল্লাহ হয়তো একটা পথ করে দেবেনই। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে কষ্ট করে কোনমতে থেকেছি। আর দেশের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি। কারণ আমার বাবা এই এদেশ স্বাধীন করেছেন। তিনি বলেন, আমার বাবার কাছ থেকে শিখেছি, একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করবে না এবং তিনিও করতেন না। আমিও তা করি না। শুধু আল্লাহর কাছে ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করি না। আল্লাহ ছাড়া কাউকে আমি ভয়ও করি না। শুধু আল্লাহর কাছে এইটুকু চাই, যেন মান-সম্মানের সাথে যেতে পারি এবং মানুষের সেবা করে যেতে পারি।
    কওমি মাদরাসার স্বীকৃতির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আজকে কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি এটা শুধু স্বীকৃতি না। আমি যেটা মনে করি, আমাদের দেশের লাখ লাখ ছেলেমেয়ে এই মাদরাসায় শিক্ষাগ্রহণ করছে। শুধু তাই না, সব থেকে বড় কাজ আপনারা করছেন। যখন যারা এতিম হয়ে যাচ্ছে, যারা একেবারে হতদরিদ্র, যাদের কোথাও থাকার-যাওয়ার জায়গা নাই। আপনারা তাদেরকে আশ্রয় দেন। তাদেরকে খাদ্য দেন শিক্ষা দেন। অত্যন্ত তারা তো একটা আশ্রয় পায়। এতিমকে আশ্রয় দিচ্ছেন, এর থেকে বড় কাজ কিছু হতে পারে না। কাজেই যেখানে আপনাদের স্বীকৃতি দেব না কেন? এটা তো হতে পারে না। তাই আমি যখনই আমি সরকারে এসেছি, আমরা চেষ্টা করেছি।
    দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে শিক্ষার নীতিমালা ঘোষণা করেছি সেই নীতিমালায় ধমীয় শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। কারণ আমি মনে করি একটা শিক্ষা তখনই পূর্ণাঙ্গ হয় যখন ধর্মীয় শিক্ষাও সেই সাথে গ্রহণ করা যায়। তখনই একটা শিক্ষা পূর্ণ হতে পারে। লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। অথচ তাদের সেই ডিগ্রীর যদি স্বীকৃতি না থাকে তবে তারা কোথায় যাবে কি করবে? কি করে তারা চলবে? এ লক্ষ্যেই সংসদে আইন পাস করা হয়েছে। আজকে আমরা করে দিলাম হয়তো কালকে আর কেউ ক্ষমতায় এলে সেটা আবার ওই ১৯৭৭ সালের মতো বন্ধ করে দিতে পারে। সেটা যাতে বন্ধ করতে না পারে তার জন্যই আমরা এটা করেছি। আপনারা সকলে এমনভাবে কাজ করবেন, এই মাদরাসা থেকে যারা শিক্ষা নেয় তারা দেশ ও জাতির জন্য যেন কাজ করতে পারেন। এই দেশকে যেন আমরা আরও উন্নত করতে পারি। বাংলাদেশে একটা মানুষ যেন গরীব না থাকে। একটা মানুষও যেন ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট না পায়। আমরা মানুষের সেবা করে যেতে পারি।
    মসদিরে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জীবনমান উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছি। এই কল্যাণ ট্রাস্টের মধ্য দিয়ে ইমাম-মুয়াজ্জিনরা যে কোনো সময় যে কোনো কাজে ভাতা নিতে পারেন সে বিষয়টি তুলে ধরে সারাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণে সউদী আরব সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনাদের কাছে দোয়া চাই দোয়া করবেন। এই দুনিয়া আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের পাতাটাও নড়ে না। আসলে যা কিছু সৃষ্টি ভালো মন্দ যা কিছুই আছে আল্লাহ করে দিয়েছেন। নবী করিম (সা.) আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছেন, সেই শিক্ষা নিয়েই আমরা পথ চলবো। আমরা কারো প্রতি বিদ্বেষ না, কারো প্রতি ঘৃণা না। কারো প্রতি কোনো খারাপ চিন্তা না। আমরা সব সময় মনে করি মানুষের কল্যাণ, মানুষের উন্নতি, মানুষের মঙ্গল। মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে এবং শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে।
    প্রধানমন্ত্রীকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দিলেন আলেমরা
    বহুল কাঙ্খিত কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়ন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে আলেমরা প্রধানমন্ত্রীকে ‘কওমি জননী’ উপাধিতে ভূষিত করেন। প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানাতে ‘শুকরিয়া মাহফিল’র শুরুর বক্তৃতায় গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি রুহুল আমিন ইসলামের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অবদানের কথা তুলে ধরে ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দেন।
    আল্লামা শফীকে স্বাধীনতা পদক দেয়ার দাবি
    কওমি সনদকে মাস্টার্সের মান দেয়ায় শুকরানা মাহফিল থেকে হেফাজতে ইসলামীর আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে স্বাধীনতা পদক দেয়ার দাবি করেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের প্রধান ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো আলেমকে স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়নি। আমরা চাই আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শাহ আহম্মদ শফীকে আপনি স্বাধীনতা পদক প্রদান করবেন।
    আল্লামা আহমদ শফীর সভাপতিত্বে শোকরানা মাহফিলের অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, বোর্ডের সদস্য মাওলানা আনোয়ার শাহ আজহারী, মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ, মাওলানা রুহুল আমীন, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নুল আবেদীন, বেফাক মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন বেফাকসহ অন্যান্য বোর্ডের মাওলানা আবদুল বসির, মাওলানা আশরাফ রহমানি, মাওলানা আবু তাহের নদভী প্রমুখ। আল্লামা আহমদ শফীর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাওলানা নুরুল আমীন। মাহফিল পরিচালনা করেন মাওলানা মাহফুজুল হক ও মাওলানা মাকসুদুল হক। বক্তব্য শেষে উলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে শুকরানা স্মারক তুলে দেন আল্লামা আহমদ শফী। প্রধানমন্ত্রী সনদের স্বীকৃতির আইন আহমদ শফীর হাতে তুলে দেন।