আমিরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তাবলীগের ২৪কর্মী জেলে

    0
    228

    আমারসিলেট24ডটকম,২০ডিসেম্বরঃ তাবলীগ জামাতের ২৪ কর্মীকে আটক করেছে রমনা থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে কাকরাইল মসজিদ থেকে তাদেরকে আটক হয়। শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এমদাদ।

    এদিকে তাবলিগ জামাতের ২৪ কর্মীকে আটকের প্রতিবাদে শুক্রবার রমনা থানার সামনে অবস্থান নিয়েছে দলের অর্ধশতাধিক কর্মী। তারা আটকদের মুক্তি এবং তাবলীগ জামায়াতের দুর্নীতির বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ এবং তদন্তের দাবি করেন। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর থেকে তারা সেখানে অবস্থান নেয়। প্রায় এক ঘণ্টা পরে পুলিশ তাদের থানার সামনে থেকে সরিয়ে দেয়।

    আটকের কারণ জানতে চাইলে এমদাদ বলেন, ‘তারা কাকরাইল মসজিদ ও তাবলীগ জামাতের আমিরের বিরুদ্ধে লিফলেট বিলি করছিল। তাবলীগ জামাতের মুরুব্বীদের অভিযোগ, তারা আসন্ন বিশ্ব ইজতেমাকে বাধাগ্রস্ত করতে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে।’

    তবে লিফলেট বিতরণকারীদের একজন মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমির ওয়াসিফুল ইসলামের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিলাম। যখনই আমরা তাদের অনিয়ম নিয়ে কথা বলি, তখনই তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়। মিথ্যা অভিযোগ করে পুলিশি হয়রানী করে।’

    তিনি আরো বলেন, ‘গত রাতে মাগরিগের নামাজের পর আমরা ৪০ জনের মতো কর্মী লিফলেট বিলি করছিলাম কাকরাইল মসজিদে। এই লিফলেটগুলোতে ওয়াসিফুল ইসলামের বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ন ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের তথ্য উপাত্ত ছিল। এই লিফলেট বিতরণের সময় ওয়াসিফুল ইসালামের অনুসারীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। মসজিদের ভেতরেই নামাজ শেষে মারধর করে। এসময় ২৪ জনকে দ্বিতীয় তলায় ধরে নিয়ে গিয়ে পুনরায় মারধর করে। সাধারণ মুসল্লিরা বাধা দিলে তারা আরো হিংশ্র হয়ে ওঠে।’ পাশাপাশি তাদেরকে আমিরের অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা না বলার জন্য আর্থিক প্রলোভন দেখানো হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

    একই অভিযোগ করে তাবলিগ জামাতের কর্মী খালেদ বলেন, ‘দলের অন্যতম আমির ইঞ্জিনিয়ার ওয়াছিফুল ইসলামের অর্থ আতœসাতের বিষয়ে আমরা জানতে চাইলে তারা মারধর করে। পরে ২৪ জনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।’

    তদন্ত করলেই সব অন্যায় ও দুর্নীতি বের হয়ে আসবে উল্লেখ করে তাবলীগ কর্মী হারুন বলেন, সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলাম কয়েক বছর ধরে তাবলীগের টাকা মেরে দিচ্ছেন। হিসা চাইলে তাবলীগের নিয়ম অনুযায়ী কোনও মাশোহারা ছাড়াই তিনি সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। টাকা খরচ করছেন নিজের মতো। বরাবরের মতো আমরা প্রতিবাদ জানালে আমাদের মারধর করা হত। গতকালও এভাবে মেরে আমাদের ২৪জন সাথীকে পুলিশের হাতে দেওয়া হয়। বিগত প্রায় তিন বছর ধরে আমিরদের অন্যতম ওয়াসিফ সাহেব সম্পর্কে অর্থ আত্মসাতের শুনে আসছি। অভিযোগও ওঠে আসে তার ছেলে উসামার বিরুদ্ধে। এরপর আমরা পুরাতন সাথীরা একাধিকবার এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়।’

    মারধরের ঘটনার সত্যত্যা নিশ্চিত করে এসআই এমদাদ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে তাদেরকে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

    প্রসঙ্গত, রাজনীতি বর্জিত তাবলীগ জামাতে ঢুকে গেছে কৌটিল্যের প্রেতাত্মা। দীর্ঘ দিন ধরে মতানৈক্যের কারণে বিভক্তি প্রায় প্রকাশ্যে চলে এসেছে। একই সঙ্গে তাবলীগের নাম ভাঙিয়ে আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠছে অনেক মুরব্বীর বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। শুরু হয়েছে ক্ষমতার দ্বন্দ্বও। ভারতের বাসিন্দা মরহুম মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস মেওয়াটি স্বপ্নে প্রাপ্ত হয়ে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ৬ ঊছূলের তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংগঠনে আনুষ্ঠানিকভাবে আর্থিক লেনদেন করার নিয়ম নেই। এমনকি তাবলিগে দিল্লির নিজামুদ্দীনের মুরুব্বীরাও আর্থিক সুবিধা নেয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। এর ফলে তাবলীগ জামাত আরো বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মোসলমানদের কাছে। তবে ব্যক্তি বিশেষ, সরকারের পক্ষ থেকে তাবলীগ উন্নয়ন ও রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার সময় আর্থিক সহায়তা করতে চাইলে দায়িত্বশীলদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে অনুদান নেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম তাবলীগ জামাতের কথা বলে দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন যা ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা রাখেন। সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বাংলাদেশ তাবলীগের একজন প্রবীণ ও গুরুত্বপূর্ণ মজলিসে শূরার সদস্য। একই সঙ্গে তিনি ফায়সাল বা আমির। তাবলীগের সঙ্গে দীর্ঘ দিন সম্পৃক্ত একাধিকব্যক্তি জানিয়েছেন, ওয়াসিফুল রাজনীতিতেও যুক্ত, এছাড়া তাবলীগের মূলনীতি (৬ উসূল) থেকেও তিনি বিচ্যুত। এর ফলে তাবলীগ জামাতে বড় ধরনের বিভক্তিসহ সংগঠনটি বিতর্কিত হতে পারে বলেও মনে করছেন তাবলীগ সংশ্লিষ্টরা । প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে এসব বিষয়ে বিভক্তি বাড়ছে। ফলে একাধিক স্থানে তাবলীগ দুটি দল হয়ে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। তবে সংগঠনের সুনামের কথা বিবেচনা করে ভেতরে গুঞ্জন চললেও অনেকে প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। যারা এসব বিষয়ে কথা বলছেন তাদের জঙ্গি আখ্যা দেয়া হচ্ছে। তাবলীগ জামাতের দায়িত্বশীলদের আর্থিক অনিয়মের তদন্ত করা, কাকরাইল মসজিদের আর্থিক লেনদেনে সরকারের নিয়ন্ত্রণসহ বেশকিছু প্রস্তাব জানিয়ে জাতীয় সংসদে বিল পাসের জন্য ডেপুটি স্পিকারের আছে গত এপ্রিল মাসে আবেদন করেছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপ মন্ত্রী আরিফ খান জয়। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের সভাপতি হাসান হাবিব তালুকদার। একই সঙ্গে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছেন।সুত্রঃঢাকা নিউজ।