আবারো বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার !

    0
    343

    কুষ্টিয়ায় ডিবি পরিচয়ে ব্যবসায়ীকে ধরে এনে পোল্ট্রী ফিড ইন্ডাষ্ট্রীজের ভিতরে নির্যাতন
    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২২সেপ্টেম্বরঃ কুষ্টিয়া ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ॥ কুষ্টিয়ায় পোল্ট্রী ফিড উৎপাদনকারী কেএনবি এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রীজ লিমিটেডের ভিতর ওমর ফারুক (৩৪) নামে এক ব্যবসায়ীকে হাত-পা বেধে নির্যাতন করা হয়েছে। সোমবার বিকালে ওই ব্যবসায়ীকে বটতৈল মোড় থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে শর্টগানের দুই রাউন্ড গুলি ছুড়ে অপহরণ করা হয়। এরপর তাকে কেএনবি’র ভিতরে এনে হাত পা বেধে বেধড়ক পেটানো হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ব্যবসায়ীকে উদ্ধার ও অস্ত্রসহ তিন জনকে আটক করে। উদ্ধার ব্যবসায়ী ওমর ফারুক কুমারখালী উপজেলার দয়ারামপুর গ্রামের ছমির হোসেনের ছেলে।
    স্থানীয়রা জানায়, সোমবার বিকালে প্রকাশ্য বটতৈল মোড় থেকে সাদা মাইক্রোবাস (যার নং ঢাকা মেট্্েরা চ-৫৩৯২১৬) থেকে শর্টগান হাতে নেমে কেএনবি এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রীজ লিমিটেডের মালিক কামরুজ্জামান ও তার ক্যাডার বাহিনী অস্ত্রের মুখে ব্যবসায়ী ওমর ফারুককে অপহরন করার সময় এলাকাবাসী তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে ডিবি পরিচয় দেন। এসময় কামরুজ্জামান দুই রাউন্ড গুলি ছুড়ে ফারুককে তুলে নিয়ে যান। পরে ব্যবসায়ী অপহরণের খবরটি কুষ্টিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিকরা গেলে ঐ ফ্যাক্টরীর গেট খোলা হয়নি। পরে গণমাধ্যমকর্মীরা এবং এলাকাবাসী খবর দিলে ঘটনাস্থলে যেয়ে হাত পা মুখ বাঁধা অবস্থায় ব্যবসায়ী ওমর ফারককে উদ্ধার করে পুলিশ। সেসময় পুলিশ অপহরণের কাজে ব্যবহৃত অগ্নেয়াস্ত্র শর্টগানটি জব্দ করে।
    জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার ব্যবসায়ী ওমর ফারুক কয়েক বছর আগে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার পাতরাইল দিঘির পার এলাকার খালেক মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসানের কাছ থেকে সুদে ৪০ লাখ টাকা নেন। শর্তানুযায়ী টাকা ফেরৎ দিতে না পারায় কেএনবি মালিকের মাধ্যমে মেহেদী হাসান তাকে তুলে এনে নির্যাতন করে। এ ঘটনায় পুলিশ অস্ত্রসহ কেএনবি মালিক ও আরো দুজনকে আটক করে। এরপর শুরু হয় দেন দরবার। চলে মধ্য রাত পর্যন্ত। দেন দরবার শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
    এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল ইসলাম বলেন, কেএনবি কারখানার ভেতর থেকে আহত অবস্থায় ওমর ফারুককে উদ্ধার করে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছিল। রাতেই উভয় পক্ষের লোকজন এসে মীমাংসা করে নিয়েছে। যেহেতু তাদের উভয় পক্ষের কোন অভিযোগ নায় সেহেতু তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
    দফারফার পর রাতেই কুষ্টিয়া মডেল থানায় আসেন কামরুজ্জামান। ওসির রুমে আতিথেয়তা শেষে জব্দকৃত শর্টগানটি নিয়ে বাড়ি ফেরেন কেএনবি মালিক কামরুজ্জামান নাসির। এব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, এসপি অফিস থেকে ছাড়া পেয়ে সে থানায় এসেছিল। এসপি অফিসের নির্দেশ মানতে আমি বাধ্য।
    অভিযোগের ব্যাপারে কেএনবি এগ্রো ফুড লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আকাম উদ্দীন বলেন, ওমর ফারুকের কাছ থেকে কোটি টাকা পাওনা আছে। এজন্যে একটু ঝামেলা হয়েছিল। দড়ি দিয়ে বেধে মারধরের ব্যাপারে তিনি জানান, ‘মারধর করা হয়েছে। তবে আইনের আশ্রয় নেওয়া উচিত ছিল।’
    এই ব্যবস্থাপক আরও জানান, মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজন কুষ্টিয়া চেম্বার অব কর্মাস ইন্ডাষ্ট্রিজে বৈঠকে বসেছে।
    উলেখ্য, এক সময়ের অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী বর্তমানে কেএনবি নামের একটি মুরগীর খাবার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক কামরুজ্জামান। বটতৈল অবস্থিত তার ফ্যাক্টরীর মধ্যে রয়েছে টর্চার সেল। বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষকে ধরে এনে তাদের অমানবিক টর্চার করা হয়। আবার টাকার বিনিময়ে ভাড়ায় তুলে আনা হয় অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে। এছাড়াও ডিবি পরিচয়ে মানুষ অপহরন করে হাত পা মুখ বেঁধে আনা হয় তার ফ্যাক্টরীর গোপন কামরায়। এই তালিকায় স্বনামধন্য ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, সম্পাদক এমনকি আদিবাসী পর্যন্ত রয়েছে। নিয়মিত টর্চার সেলের সোমবারের শিকার ছিলেন ব্যবসায়ী ফারুক।
    সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় ১১ জনের ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন। সুত্রের দাবী, বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারে নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ায় তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কামরুজ্জামানের বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের পরও অস্ত্র ফেরত দেয়ায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।