আবদুস সুবহানের ফাঁসির আদেশঃ৬ অভিযোগ প্রমাণিত

    0
    209

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৮ফেব্রুয়ারী:একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির  আবদুস সুবহানের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

    চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন। অপর দুই বিচারপতি হলেন- বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম।
    তার বিরুদ্ধে আনা নয়টি অভিযোগের ছয়টি প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে ১, ৩ ও ৬ নং অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

    সুবহানের বিরুদ্ধে ১৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সংক্ষিপ্ত আকারে পাঠ করা হয়।জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল-১ এর এজলাস কক্ষে আবদুস সুবহানের রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল-২।

    রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনালে সুবহানের পক্ষে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, শাহজাহান কবির, শিশির মনির, আসাদ উদ্দিন এবং সুবহানের ছেলে নেছার আহমদ নান্নু ও মুজাহিদুল উপস্থিত ছিলেন।

    অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু, জেয়াদ আল মালুম, সুলতান মাহমুদ সীমন, তুরিন আফরোজ, মোহাম্মদ আলী ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নী উপস্থিত ছিলেন।

    এর আগে সকাল ১১টা ১৮ মিনিটে রায় পাঠ শুরু করেন। ১৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সংক্ষিপ্ত আকারে পাঠ করছেন তিনি। সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে আনার পর তাকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় রাখা হয়েছে।

    গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন শেষে চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রেখে দেন।

    আড়াই মাস অপেক্ষমাণ থাকার পর মামলাটির রায়ের দিন ধার্য হলো।ট্রাইব্যুনালে-১ এ এখন একটি মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষায় থাকলো।

    এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করেন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রসিকিউশন।

    অন্যদিকে আসামিপক্ষ দাবি করেন রাষ্ট্রপক্ষ তাদের অভিযোগ সমূহ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। একটি অভিযোগও তারা প্রমাণ করতে পারেননি। তিনি স্ব সম্মানে খালাস পাবেন বলে আশা করেন তারা।

    গত ১৭ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৮ কার্যদিবসে মাওলানা সুবহানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী।

    এর আগে গত ৫ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ও বৃহস্পতিবার আট কার্যদিবসে সুবহানের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন।

    গত ৭ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুবহানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন দুই তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও মো. নূর হোসাইনসহ রাষ্ট্রপক্ষের ৩১ জন সাক্ষী। তাদের মধ্যে অভিযোগভিত্তিক ঘটনার ২৭ সাক্ষী হলেন- সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী আ ত ম শাহিদুজ্জামান নাসিম, শহীদপুত্র মুক্তিযোদ্ধা তহুরুল আলম মোল্লা, মো: আবু আসাদ, রুস্তম আলী, মো. ইসরাইল, কোরবান আলী, শহীদ জায়া জাহানারা বেগম, আশরাফ উদ্দিন মিয়া, মো: রিয়াজ উদ্দিন মন্ডল, সানোয়ারা খাতুন, মো: ফজলুর রহমান ফান্টু, আব্দুর রহমান সরদার, শহীদ পরিবারের সদস্য মো. আব্দুল মতিন, মোঃ আজিজুল সরদার, মমতাজ উদ্দিন মন্টু, আক্কাছ শেখ, শহীদপুত্র আলী রানা শেখ, আব্দুল আজিজ, নিজাম উদ্দিন খান, হোসেন সরদার, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদপুত্র মো: শহিদুল্লাহ শহিদ, এসএম সামছুল আলম, মো: খোরশেদ আলম, শহীদপুত্র মো. সামছুল আলম, আবদুল বাতেন, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুল হক এবং এস কে শহীদুল্লাহ।

    জব্দ তালিকার দুই সাক্ষী হচ্ছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার গ্রন্থাগারিক আনিসুর রহমান ও বাংলা একাডেমির সহকারী গ্রন্থাগারিক এজাবউদ্দিন মিয়া।

    অন্যদিকে মাওলানা আবদুস সুবহানের পক্ষে তিন জন সাক্ষী সাফাই সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ট্রাইব্যুনাল নির্ধারণ করে দিলেও কোনো সাফাই সাক্ষী হাজির করেননি আসামিপক্ষ।গত ২৭ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-১ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করেন।

    গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ষড়যন্ত্রসহ ৮ ধরনের ৯টি মানবতাবিরোধী অপরাধে সুবহানের বিরুদ্ধে  অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।

    গত বছরের ২৩ অক্টোবর ও ২৪ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আসামিপক্ষে শুনানি করেন সুবহানের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান।

    অন্যদিকে ৯ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন।

    গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সুবহানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।১৫ সেপ্টেম্বর সুবহানের বিরুদ্ধে ৮৬ পৃষ্ঠার ওই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা দেন প্রসিকিউশন।

    ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সকালে টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে আবদুস সুবহানকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই রাতেই তাকে পাবনা কারাগারে নেওয়া হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর পাবনা কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয় আবদুস সুবহানকে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর প্রসিকিউশনের আবেদন আমলে নিয়ে আবদুস সুবহানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

    উল্লেখ্য তিনি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা সুবহান নামে পরিচিত।