আন্দোলনের নামে নাশকতা হিসাবের দুই মাস

    2
    561

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৫মার্চঃ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ৬০ দিন বা দুই মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ। অবরোধের সাথে সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে জোট আহূত হরতালও চলছে প্রায় সোয়া এক মাস ধরে। হরতাল-অবরোধ চলাকালে এই পর্যন্ত সারাদেশে অন্তত ১১৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এরমধ্যে দুই তৃতীয়াংশই নিরীহ মানুষ। নিহতদের মধ্যে পেট্রোল বোমা ও আগুনে পুড়ে মারা গেছেন ৬৫ জন। তাদের মধ্যে বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রী ৩০ এবং শ্রমিক ২১ জন। এ সময় অগ্নিদগ্ধ হয়ে পুলিশের একজন সদস্য প্রাণ হারান। আর দুই মাসে সংঘর্ষ, গুলি, বন্দুকযুদ্ধ, গণপিটুনি ও গাড়িচাপায় নিহত হয়েছে ৫১ জন। আহতের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার।

    এছাড়া অবরোধের সময় নাশকতায় প্রায় ২ হাজার যানবাহন ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ করে আট শতাধিক গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। চলমান সহিংসতায় শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিসহ সাতটি প্রধান খাতে প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অবশ্য ২৫ ফেব্রুয়ারি সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, হরতালের নামে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবসা-বাণিজ্য, রপ্তানিসহ বিভিন্ন খাতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।

    হরতাল-অবরোধ এখনও অব্যাহত রয়েছে। এতে দেশের ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ নাগরিকরা উদ্বিগ্ন। চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সময়ও হরতাল অব্যাহত রাখা হচ্ছে। সহিংসতায় জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সম্প্রতি চিঠি দেন। চিঠিতে সহিংসতা বন্ধের তাগিদ দিয়ে উভয় পক্ষকে সংলাপে বসার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে চিঠির জবাব দিয়েছেন।
    জবাবে তিনি মুনকে জানান, বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলনের নামে সারাদেশে সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এমন কোনো দলের সঙ্গে তার সরকার সংলাপে বসবে না। তিনি বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট দেশের সাধারণ মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা হামলা বন্ধ, হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে দেশের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনবে, এটাই সরকারের প্রত্যাশা।
    অপরদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট জাতিসংঘ মহাসচিবের চিঠির এখন পর্যন্ত কোনো জবাব দেয়নি।
    এ অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ নয়টি দেশের কূটনীতিকরা মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশানের কার্যালয়ে বৈঠক করেন। প্রায় দুই ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে নিরাপত্তা, শান্তি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সহিংসতা বন্ধ করতে কূটনীতিকরা আহ্বান জানান। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার সম্পর্ক বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তারা।
    এর আগে এই কূটনীতিকরা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীসহ প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টার সঙ্গেও বৈঠক করেন। সে বৈঠকেও তারা একই আহ্বান জানান। কিন্তু কূটনীতিকদের আহ্বানে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া নেই। বিএনপির পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবারও অনমনীয় মনোভাব পোষণ করা হয়েছে। দলের যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ গতকাল ই-মেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সরকার তাদের দাবি মেনে না নিলে আগামী রবিবার থেকে আবারও হরতালসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
    অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়কারী মোহাম্মদ নাসিম গতকাল বলেছেন, বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, তারা সন্ত্রাসী এবং জঙ্গি সংগঠন। তারা ওসামা বিন লাদেনের মতো অজ্ঞাত স্থান থেকে ই-মেইল বার্তা পাঠিয়ে আন্দোলনের নামে সহিংস কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তাদের হুমকি-ধামকিতে সরকার ভিত নয়।
    বিএনপি-জামায়াত জোটের দেশবিরোধী চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, পেট্রোল বোমা হামলা, নাশকতা, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল সারাদেশে আগামী ৯, ১০ ও ১১ মার্চ পদযাত্রা ও জনসভার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব পদযাত্রা-জনসভায় ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অংশ নেবেন।ইত্তেফাক