আনিসুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তারই ব্যবসায়িক অংশীদার নূহের লতিফ খান

    0
    427

    গার্মেন্ট ব্যবসা থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে আসা ব্যবসায়ী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে গত সোমবার মামলা করেছেন তারই একজন ব্যবসায়িক অংশীদার সফল তরুণ উদ্যোক্তা নূহের লতিফ খান

    আনিসুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তারই ব্যবসায়িক অংশীদার নূহের লতিফ খান
    আনিসুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তারই ব্যবসায়িক অংশীদার নূহের লতিফ খান

    । বিষয়টি আমলে নিয়ে নোটিশ জারি করতে বলেছে হাই কোর্ট।

    আনিসুল হক ও তার ছেলে নাভিদুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ওই কোম্পানির দুই উদ্যোক্তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন এবং অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কোম্পানিকে আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলেছেন।

    সফল তরুণ উদ্যোক্তা হিসাবে গত বছর ডেইলি স্টারের শিরোনাম হওয়া নূহের লতিফ খান মাত্র ২১ বছর বয়সে ‘দেশ এনার্জি লিমিটেড’ গড়ে তোলেন।

    তার বোন দেশ এনার্জির অপর পরিচালক শাহপার সাবাও এ মামলার একজন বাদী, যিনি আদালতের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন।

    হাই কোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল হাসানের বেঞ্চ মঙ্গলবার মামলাটি গ্রহণ করে এ বিষয়ে নোটিশ জারির নির্দেশ দেয়।

    ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশ এনার্জি লিমিটেডের অধীনে সিলেটের কুমারগাঁও ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে দুটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে, যার মোট উত্পাদন ক্ষমতা ১১০ মেগাওয়াট। আর এ কোম্পানিতে অভিযোগকারী ভাই-বোন নূহের লতিফ খান ও শাহপার সাবার শেয়ারের পরিমাণ ১০ শতাংশ করে।

    আর্জিতে বলা হয়, গত দুই বছর ধরে দেশ এনার্জির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আনিসুল হক এবং তার ছেলে ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনক নাভিদুল হকের সঙ্গে দুই আবেদনকারীর সম্পর্কের অবনতি হয়। দুই উদ্যোক্তা পরিচালকের ‘ন্যায়সঙ্গত প্রত্যাশাকে’ পাশ কাটিয়ে বিবাদিরা ‘অবৈধ ও স্বেচ্ছাচারীমূলকভাবে’ প্রধান প্রধান ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্ত থেকে আবেদনকারীদের বাদ দেন। তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকের দায়িত্ব পালনেও বাধা সৃষ্টি করা হয়। বিবাদীরা কোম্পানির কার্যক্রমকে ‘মারাত্মক অব্যবস্থাপনার’ মধ্যে ঠেলে দেন এবং দুই বাদীকে সরিয়ে দিতে হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও পীড়নের কৌশল গ্রহণ করেন।

    অব্যবস্থাপনার দৃষ্টান্ত হিসাবে মামলায় বলা হয়, ‘অননুমোদিত’ কোম্পানির মাধ্যমে সস্তা যন্ত্রাংশ কেনায় সিদ্ধিরগঞ্জের ১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্রটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

    এছাড়া পরিচালক হিসাবে নূহের বা তার বোনের স্বাক্ষর না নিয়েই দেশ এনার্জি থেকে বড় অংকের টাকা তুলেছেন আনিসুল হক, যার মাধ্যমে নিয়ম ভাঙা হয়েছে।

    অভিযোগে বলা হয়, বোর্ড রেজ্যুলেশন অনুসারে কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দুটি গ্রুপের যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হওয়ার কথা। গ্রুপ-এ তে আছেন আনিসুল হক ও তার ছেলে নাভিদুল হক। আর গ্রুপ-বি তে রয়েছেন নূহের ও তার বোন। এই নিয়মের বিষয়টি ব্যাংককে জানানো থাকলেও দুই বিবাদী অন্য গ্রুপের কারো স্বাক্ষর ছাড়াই ২৮ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন।

    বাদীপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, ‘আনিসুল হক এভাবে কোম্পানির অব্যবস্থাপনা চালিয়ে যেতে থাকলে কোম্পানি ব্যাংকের দায় দেনা পরিশোধের সক্ষমতা হারাবে। অথচ দুই বাদী ব্যাংকের গ্যারান্টার হিসাবে রয়েছেন।`

    নূহের লতিফ খান দেশ এনার্জি লিমিটেডের জন্মলগ্ন থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে এলেও গত ২৩ মার্চ আনিসুল হক ও নাভিদুল হক বোর্ড সভা করে তাকে পদচ্যুত করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলার আর্জিতে।

    প্রতিষ্ঠাতা শেয়ার হোল্ডার ও পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে ২০০৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি এ কোম্পানিতে যোগ দেন মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুল হক, যিনি বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ছিলেন।

    পোশাক প্রস্তত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুল হক ধারাবাহিকতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের কোটায় সার্ক চেম্বারেরও সভাপতি ছিলেন।

    বর্তমানে মোহাম্মদী গ্রুপের কার্যালয়কেই প্রধান কার্যালয় হিসাবে ব্যবহার করছে দেশ এনার্জি। এ প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ছাড়া অন্য সকল কর্মীও এসেছেন মোহাম্মদী গ্রুপ থেকে।

    মোহাম্মদী গ্রুপের হিসাব বিভাগই দেশ এনার্জির হিসাব বিভাগ পরিচালনা করে। আনিসুল হক বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক।

    আনিসুল হকের ছেলে নাভিদুল হক এ কোম্পানির পরিচালক হন ২০০৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি; প্রতিষ্ঠাতা শেয়ার হোল্ডার ও পরিচালক তাসনিম সুলতানার শেয়ার গ্রহণের মাধ্যমে। বর্তমানে দেশ এনার্জিতে নাভিদের শেয়ারের পরিমাণ ৫ শতাংশ।

    নূহের ও তার বোনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আখতার ইমাম। তাকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও ব্যারিস্টার রেশাদ ইমাম।