আদিবাসী পরিষদ নিয়ামতপুর থানা শাখার উদ্যোগে কর্মসূচি

    0
    295

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৪জানুয়ারীঃ “নওগার নিয়ামতপুরে আদিবাসী লুইস সরেনকে পুড়িয়ে হত্যা ও চঞ্চলা পাহানকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচার ও শাস্তির দাবিতে” জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নিয়ামতপুর থানা শাখার উদ্যোগে আজ ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখ সকাল ১১ টায় নিয়ামতপুর উপজেলা চত্বরে বিক্ষোভ ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে। বিক্ষোভ নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে একই জায়গায় শেষ হয়।

    বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নিয়ামতপুর থানা শাখার আহ্বায়ক আজিত মুন্ডা। সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করেন আদিবাসী যুব পরিষদ নওগাঁ জেলার সভাপতি মার্টিন মুর্মু, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিভূতি ভূষণ মাহাতো, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত মাহাতো, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নকুল পাহান, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ পোরশা থানার সভাপতি আইচন পাহান, নিহত লুইচ সরেনের স্ত্রী যুগিতা হেমব্রম, ছোট ভাই লোকাশ সরেন, বোন সেলেন্তিনা সরেন, আদিবাসী নেতৃ বাসন্তী টপ্য, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নিয়ামতপুর থানার যুগ্ম-আহ্বায়ক বিজয় নিন্দুয়ার। সমাবেশ কর্মসূচির সঞ্চালনা করেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদ নিয়ামতপুর থানা শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক দয়াল রবিদাস।

    উল্লেখ্য গত ১০ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের চাপড়া গ্রামের লুইচ সরেন (৪৫) নামে এক আদিবাসীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। উপজেলার ভাবিচা জাবড়ীপাড়া গ্রামের মাঠে আগুনে পোড়ানো লুইচ সরেনের লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লাশটি উদ্ধার করে। লাশের শরীরে অস্ত্রের আঘাত ছিল। পরিধানের বশনসহ মুখোমন্ডল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রথমে সনাক্ত করা না গেলেও পরে পরিচয়ে জানা গেছে নিহত ব্যক্তির নাম লুইচ সরেন। উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের চাপড়া আদিবাসীপাড়ার মৃত শংকরের ছেলে লুইচ সরেন। লুইচের এ মৃত্যু স্বভাবিক নয়, হত্যাকান্ড বলে দাবী পরিবারের সদস্যদের। পুলিশ ধারনা করছে রাতে লুইচকে কে বা কারা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে আগুনে পুড়িয়ে মাঠের মধ্যে ফেলে রেখে যায়।

    এই ঘটনায় হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন দুই আদিবাসীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের ভাবিচা জাবড়ীপাড়া নিজ বাড়ি থেকে তাদের আটক করা হয়। কিন্ত প্রকৃত আসামীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

    অপরদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে নিয়ামতপুরে চঞ্চলা পাহান (১৬) নামে এক আদিবাসী নারীকে নিজ বাড়িতে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। নিহত চঞ্চলা আহারকান্দার গ্রামের পঞ্চানন পাহানের মেয়ে। নিহতের পরিবারের দাবী তাদের মেয়েকে ধর্ষণ করে পরিকল্পিত ভাবে শ্বাস রোধে হত্যা করা হয়েছে। তবে কি কারণে হত্যা করা হয়েছে তার কারণ জানাতে পারেনি। ব্যাপারে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ কোন আসামী গ্রেফতার করতে পারেনি।

    সমাবেশ থেকে বক্তরা আদিবাসীদেও প্রতি সকল ধরনের নির্যাতন নীপিড়নের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আদিবাসীদেও জান-মাল ও জীবনের নিরাপত্বা দাবি করেন।

    সমাবেশ শেষে নিয়ামতপুরে আদিবাসীদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও উচ্ছেদের প্রতিবাদে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

    বরাবর,

    উপজেলা নির্বাহী আফিসার

    নিয়ামতপুর

    নওগাঁ

    বিষয়: নিয়ামতপুরে আদিবাসীদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও উচ্ছেদের প্রতিবাদে স্মারকলিপি প্রদান।

    জনাব,

    জাতীয় আদিবাসী পরিষদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা গ্রহণ করুণ!

    আপনি অবগত আছেন যে, নিয়ামতপুর থানায় বড় একটা অংশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। এই অঞ্চলের আদিবাসীরা বিভিন্ন সুখ-দুঃখকে সাথে করে বছরের পর বছর বসবাস করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা বিশেষ করে আদিবাসীদের হত্যা, অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন, ধর্ষণের মত ঘটনা আদিবাসী সমাজকে আতংকিত ও নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে।

    এরই ধারাবাহিকতায় গত ১০ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের চাপড়াা গ্রামের লুইচ সরেন (৪৫) নামে এক সাঁওতাল আদিবাসীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। উপজেলার ভাবিচা জাবড়ীপাড়া গ্রামের মাঠে আগুনে পোড়ানো লুইচ সরেনের লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লাশটি উদ্ধার করে। লাশের শরীরে অস্ত্রের আঘাত ছিল। পরিধানের বশনসহ মুখোমন্ডল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রথমে সনাক্ত করা না গেলেও পরে পরিচয়ে জানা গেছে নিহত ব্যক্তির নাম লুইচ সরেন। উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের চাপড়া আদিবাসীপাড়ার মৃত শংকরের ছেলে লুইচ সরেন। লুইচের এ মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, হত্যাকান্ড বলে দাবী পরিবারের সদস্যদের। পুলিশ ধারনা করছে রাতে লুইচকে কে বা কারা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে আগুনে পুড়িয়ে মাঠের মধ্যে ফেলে রেখে যায়। এই ঘটনায় হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন দুই আদিবাসীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের ভাবিচা জাবড়ীপাড়া নিজ বাড়ি থেকে তাদের আটক করা হয়। কিন্ত প্রকৃত আসামীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

    অপরদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে নিয়ামতপুরে চঞ্চলা পাহান (১৬) নামে এক আদিবাসী নারীকে নিজ বাড়িতে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। নিহত চঞ্চলা আহারকান্দার গ্রামের পঞ্চানন পাহানের মেয়ে। নিহতের পরিবারের দাবী তাদের মেয়েকে ধর্ষণ করে পরিকল্পিতভাবে শ্বাস রোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন আসামী গ্রেফতার করতে পারেনি।

    এছাড়াও নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার সাদাপুর গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে আদিবাসী এক গৃহবধূকে জোর করে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে এলাকার চিহ্ণিত সন্ত্রাসীরা। এতে বাধা দেয়ায় প্রতিপক্ষের মারপিটে চার নারীসহ সাতজন আহত হন। এ ঘটনায় এলাকার আদিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনার প্রায় চার মাস পার হলেও পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।

    গত ২৩ জুন ২০১৫ উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নের দাদরইল আমপাড়া গ্রামে ৩ বছরের এক আদিবাসী শিশুকন্যা ধর্ষণের শিকার হন। ঘটনায় মেয়ের বাবা বাদী হয়ে নিয়ামতপুর থানায় একটা ধর্ষন মামলা করেন এবং পুলিশ ধর্ষককে গ্রেপ্তার করলেও ধর্ষকের দীর্ঘমেয়াদী সাজা পাওয়া নিয়ে সঙ্কায় আছে পরিবারটি।

    গত ২৯ জুন ২০১৫ তারিখে উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামে এক আদিবাসী মহিলা (৩০) যৌন নির্যাতনের শিকার হন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিষ্ণপুর গ্রামের লুৎফর রহমানের কাছ থেকে কয়েকটি বাঁশ কেনে ওই আদিবাসী নারী। ২৯ জুন সেই বাঁশ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে একই গ্রামের আব্দুর রশিদ (৪৫) ও বাবু (২২) রাস্তায় মেয়েটির পথ আটকায়। এরপর তারা মেয়েটিকে রাস্তার পাশে একটি ঝোপে নিয়ে ধর্ষনের চেষ্টা করে। মেয়েটি প্রতিবাদ করলে তারা তাকে হাত-পা বেঁধে মারধর করে। একপর্যায়ে মেয়েটির চিৎকারে লোকজন ছুটে আসলে তারা মেয়েটিকে ফেলে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় গত ২৯ জুন মেয়েটির মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত দোষীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

     নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার পাড়ইল ইউপির দাদরইল (আমপাড়া) গ্রামে গত ২৭ জুলাই ২০১৫ তারিখে ৭ম শ্রেণির এক আদিবাসী কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা এলাকার এক যুবক। এ ঘটনায় পুলিশ ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে মামলা দায়ের করলেও প্রবাভশালী মহল মামলা তুলে নেয়ার জন্য কিশোরীর পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।

    ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল নওগাঁর নিয়ামতপুরের বেণীপুর বাজারে মইনুল ইসলামের দোকানে চুরির মিথ্যা অভিযোগে আদিবাসী নিবারণ পাহানকে আটক করে পুলিশ। জাতিতে মুন্ডা নিবারণ পাহান দিনমজুরির কাজ শেষে ক্লান্ত শরীরে তখন বাড়ি ফিরছিলেন।

    এমনকি গত ৪ মে ২০১২ সালে নিয়ামতপুর উপজেলার পুংগি নিবুদা গ্রামের কয়েকজন আদিবাসী জেলার মান্দা উপজেলার চকগোপাল গ্রামে বিরোধীয় জমির ধান কাটতে গেলে ৪জন আদিবাসী নির্মম ভাবে খুন হয়। সেই ঘটনার এখনো সুষ্ঠ বিচার ও পরিবারগুলো ক্ষতিপূরণ পায়নি।

     মহোদয়,

    আপনি জানেন আদিবাসীরা অত্যন্ত নিরীহ ও অধিকারহীন ভাবে নিজভূমে পরবাসীর মত জীবন যাপন করছে। আদিবাসীদের প্রতি এই ধরনের নির্যাতন নিপীড়ন কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ এইসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং নিম্নোক্ত দাবি জানাচ্ছে।

     দাবিসমূহ: লুইচ সরেন এর প্রকৃত হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে;

    আদিবাসীদের উপর চলমান নির্যাতন, নিপীড়ণ, হত্যা, ধর্ষণ, বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ বন্ধ করার জন্য প্রশাসনকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আদিবাসী জীবন-মাল এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে;

    আদিবাসীদের উপর নির্যাতনকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে;

     আদিবাসীদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ বন্ধ ও তাদের ভূমি রক্ষায় ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।