“আদিবাসী কোটা” বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন

    0
    224

    আমারসিলেট24ডটকম,২৩ফেব্রুয়ারীঃ বাংলাদেশে বাঙ্গালি জাতি ছাড়াও ৪৮ টির অধিক আদিবাসী জাতির বসবাস রয়েছে এবং সংখ্যা আনুমানিক ৩০ লক্ষ যা পৃথিবীর অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি । যে সমস্ত আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী আদিকাল থেকে এই দেশে বসবাস করে আসছে যাদের জীবনধারা এই একবিংশ শতাব্দীর চরম শিখরে ও এখনও পিছিয়ে রয়েছে । অন্যদিকে আদিবাসীরা নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান,জীবনপদ্ধতি , ইতিহাস, ্ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা বজায় রেখে নিজেদের পরিচয় ধরে রাখার প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষরা তথাকথিত সভ্যতার শিকার হয়ে এই স্বাধীন রাষ্ট্রে মূলস্রোতধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হতে সামাজিক, অর্থনেতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরিত হয়েছে ।

    এমনকি বৃহত্তর সমাজের এক শ্রেণী ভূমিদস্যু আদিবাসীদের ভূমি ও সহায়সম্পদ কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব ও ভূমিহীনে পরিণত করেছে । অথচ এই আদিবাসীরাও মহান ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে । বলা যায়  আদিবাসীরা নিজ দেশে পরবাসীর ন্যায় জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে । এই পিছিয়ে পড়া আদিবাসীদের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন- উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখা-পড়ার সুযোগসহ  চাকুরিতে‘ কোটা’ দিয়েছে কিন্তু উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও চাকুরিতে কখনই ‘আদিবাসী কোটা’ কার্যকরি বা বাস্তবায়ন হচ্ছে না । অত্যন্ত ছলছাতুরী অবলম্বন করে আদিবাসীদের বাদ দেওয়া হচ্ছে । তাই আমরা এই মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে সরকারের নিকট নিমোক্ত দাবি পেশ করছি ।

    দাবিসমূহঃ 

    ১. উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আদিবাসী কোটার স্বচ্ছতা ও পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

    ২. যে সব বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনও আদিবাসীদের জন্য কোন কোটা

    সংরক্ষিত আসন রাখা হয়নি সেখানে অবিলম্বে কোটা সংরক্ষণ করতে হবে ।

    ৩. কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আদিবাসীদের জন্য আসন বৃদ্ধি করতে হবে ।

    ৪. জাতীয় বিশ্ববিদ্যায় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়ের অধীন সরকারী কলেজগুলোতে আদিবাসীদের জন্য পৃথক কোটা ব্যবস্থা ও বাস্তবায়ন করতে হবে ।

    ৫.আদিবাসী শিক্ষার্থী সাধারণ মেধা তালিকায় স্থান পেলে তাকে মেধা তালিকায় ভর্তি করতে হবে কোটায় নয়।

    ৬. স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আদিবাসী মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা বেতনে অথবা টিউশন ফি অর্ধেক মওকুফ করে শিক্ষালাভের সুযোগ দিতে হবে । উচ্চ শিক্ষায় আদিবাসীদের জন্য সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান করতে হবে ।

    ৭. আদিবাসী কোটায় যাতে অ-আদিবাসীরা ভর্তির সুযোগ না পায় কর্তৃপক্ষকে সে ব্যাপারে কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।৮. আদিবাসী কোটা সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত নীতিমালা প্রনয়ণ করতে হবে ।

    ৯. শুধুমাত্র জেলা প্রশাসকের বিধান না রেখে ইউএনও, মাঞ্জহি, হেডম্যান, সার্কেল চীফ, গোত্র প্রধান ও আদিবাসী সংগঠন তথা জাতীয় আদিবাসী পরিষদ এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কর্তৃক প্রদত্ত আদিবাসী সনদপত্র গ্রহণ করতে হবে । কোটায় ভর্তি ও চাকুরির জন্য এটিই যথেষ্ঠ বলে স্বীকৃতি দিতে হবে ।

    ১০. সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, পুলিশ, বিজিবি, সশস্ত্র বাহিনী, বিসিএস সহ সকল চাকুরির ক্ষেত্রে কোটা বাস্তবায়ন, কোটা নির্ধারণ ও বৃদ্ধি করতে হবে ।

    ১১. উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও চাকুরির বিজ্ঞপ্তিতেই আদিবাসীদের জন্য শতকরা কতভাগ, কয়টি আসন কোটায় আদিবাসী বিবেচিত হবে তা নির্দিষ্ট ও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে ।

     “উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও চাকুরিতে ‘আদিবাসী কোটা’ বাস্তবায়নের” দাবিতে      মানববন্ধন ও সমাবেশ সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারনে সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুন কুমার উরাও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, উপদেষ্টা দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সুজিত সরকার, ন্যাপ জেলা সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান খান আলম, বাসদের সমন্বয়ক দেবাশীষ রায়, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক শিল্পী সরেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক হেমন্ত মাহাতো, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট রা.বি. সাধারন সম্পাদক সোহরাব হোসেন প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুন কুমার উরাও।