আত্রাইয়ে ব্রিজের অভাবে হাজার মানুষের স্বপ্ন থমকে আছে

    0
    213

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২১জানুয়ারী,নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর আত্রাইয়ে ভবানীপুর বাজার সংলগ্নে একটি ব্রিজের অভাবে যুগ যুগ ধরে দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটি মাত্র নৌকার মাধ্যমে পারাপার হয়ে আসছে। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই এ ব্রিজটি নির্মাণের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অনেক আবেদন নিবেদনও করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় আশ্বাসও পাওয়া গেছে। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে এ পথে যাতায়াত করতে শিক্ষার্থীসহ সর্ব স্তরের জনগণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
    সরেজমিনে উপজেলার রায়পুর গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ভবানীপুর বাজার সংলগ্নে রায়পুর গ্রামবাসীর যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা হওয়ায় প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে কৃষক Ñশ্রমিক, কমলমতি স্কুল শিক্ষার্থী সহ হাজার হাজার মানুষ। রায়পুর, ডাঙ্গাপাড়া, ভবানীপুরসহ বেশ কয়েকটা গ্রামের লোকজনকে পারাপার হতে হয় একটি মাত্র নৌকার মাধ্যমে। রায়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভবানীপুর জিএসউচ্চ বিদ্যালয়, ইক্বরা মহিলা মাদ্রাসা ও এতিমখানা এন্ড নুরানী স্কুলের শত শত শিক্ষার্থীদের আসা যাওয়ার জন্য এ পথ ব্যবহার করতে হয় যা কমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
    আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও একটি ব্রিজের অভাবে রায়পুর গ্রামবাসীর স্বপ্ন যেন থমকে আছে। একটি ব্রিজের অভাবে নানা সমস্যায় জর্জরিত এ গ্রামের মানুষের জীবন যাত্রা। সকাল হলে দীর্ঘ লাইন ধরে ঘাটে নৌকার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। হাট-বাজার, অফিস, স্কুল-কলেজে যাওয়া রায়পুরবাসীর কাছে বিড়ম্বনা মনে হয়। এ পথ কৃষিপণ্য পরিবহনের উপযোগী না হওয়ায় এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সহজভাবে বাজারজাত করতে পারে না। ফলে তারা বি ত হয় ন্যাায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে। এলাকা বাসীর দীর্ঘ দিনের দাবী এখানে একটি স্থায়ী ব্রিজ নির্মানের। এখানে ব্রিজ নির্মান হলে এলাকাবাসীর এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটবে। ছাত্র ছাত্রী সহ এলাকার সকল সাধারণ জনগন পাবে যোগাযোগের সুফল।
    এ বিষয়ে রায়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আক্কাছ আলী জানান, রায়পুরসহ আশে পাশের গ্রাবাসীর স্বাধীনতার ৪৫ বছরের একটিই স্বপ্ন একটি ব্রিজের। রায়পুর গ্রামে শুধু একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে গ্রামের ছেলে-মিয়েকে হাইস্কুল-কলেজে পড়তে ও চিকিৎসার জন্য গ্রামবাসীকে আত্রাই সদরে যেতে নদী পার হতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়।
    এ ব্যাপারে ১নং শাহাগোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো: শফিকুল ইসলাম বাবু জানান, এ সমস্যা শুধু কালিকাপুর ইউনিয়নবাসীর নয় এ সমস্যা আমার শাহাগোলা ইউনিয়নের সকল স্তরের জনগনেরও। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার জনগণের দুর্ভোগ লাঘব হবে। নৌকার পরিবর্তে একটি ব্রিজ নির্মাণ রায়পুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। এ গ্রামে পাল, ঘোষ, নমশূদ্রসহ বিভিন্ন দলিত পরিবার রয়েছে। যোগাযোগের সু-ব্যবস্থা না থাকায় তারা আজও বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে শুধু দলিত পরিবার নয় রায়পুর গ্রামবাসীসহ আশেপাশের গ্রামগুলোর সর্বস্তরের লোকজনের লালিত স্বপ্ন পুরণ হবে।
    রায়পুর গ্রামবাসীর যোগাযোগের সমস্যাকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট মহিলা ইউপি সদস্য মোছাঃ সুলতানা পারভিন বলেন, আমাদের এ গ্রামে হাসপাতাল ক্লিনিক এমনকি ভালো মানের কোন ডাক্তারও নেই। গ্রামে মধ্য রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা গর্ভবতীদের নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়, এমনকি দুর্ঘটনাও ঘটে। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবী আমাদের দীর্ঘ দিনের। এ দাবী কেউ বাস্তবায়িত করেনি। যার জন্য এলাকা বাসীকে চরম দূভোগ পোহাতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই জরুরি ভিত্তিতে ব্রিজটি নির্মাণ করা হলে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে।
    এ বিষয়ে কালীকাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ নাজমুল হক নাদিমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, একটি ব্রিজ না থাকায় রায়পুর গ্রামবাসীর শুধু সমস্যায় নয় মহাসমস্যায় পরিণত হয়েছে। ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাটের সমস্যা ছিলো। অনেকটা সমাধান হয়েছে। এখন রায়পুর গ্রামবাসীর একটাই দুঃখ একটি ব্রিজ। সরকারের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছি। খুব শিগগিরিই একটি আনন্দ সংবাদ পাবো বলে আশা করছি।
    এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মোবারক হোসেন জানান, শাহাগোলা ইাউনিয়নের পার্শ্ববর্তী কালিকাপুর ইউনিয়নের রায়পুর ব্রিজটি জনগুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি জুন-জুলাই মাসের দিকে এই ব্রিজের কাজ শুরু হবে।