আজ ১৪ ডিসেম্বরঃশহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হচ্ছে

    0
    376

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৪ডিসেম্বর,ডেস্ক নিউজঃ আজ ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে একটি চরম বেদনার ও কলঙ্কময় দিন। এই দিনটিতে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের পাশবিক বর্বরতায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

    ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস রক্তগঙ্গা পেরিয়ে গোটা জাতি যখন জয়ের পথে দাঁড়িয়ে, ঠিক সেই সময়ই রাতের আঁধারে পরাজয়ের গ্লানিমাখা পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর, আল শামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা জাতির শ্রেষ্ঠ মেধা দীপ্ত সন্তানদের বেছে বেছে হত্যা করে।
    বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে এইদিনে দেশকে মেধাশূন্য করার পূর্বপরিকল্পনায় ঘর থেকে তুলে নিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বাঙালি জাতির সেরা শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ দেশের বরেণ্য ও কৃতি সন্তানদের। জাতি এই দিনটিতে গভীর শোকাহত মনে সেই শহিদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

    হানাদারদের মূল লক্ষ্য ছিল লড়াকু বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জন করলেও যেন বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু, দুর্বল ও দিকনির্দেশনাহীন হয়ে পড়ে। মেধা ও নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়লে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না, এমন নীলনকশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই হায়েনারা বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল এই দিনে।

    একাত্তরের ডিসেম্বরে হত্যাযজ্ঞের শিকার শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনো নিরূপণ করা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাপিডিয়ায় শহিদ বুদ্ধিজীবীদের যে সংখ্যা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী একাত্তরে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ শিক্ষাবিদ, ১৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিৎসক, ৪২ আইনজীবী এবং ১৬ শিল্পী, সাহিত্যিক ও প্রকৌশলী।

    তাদের মধ্যে রয়েছেন ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক মুনীরুজ্জামান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, ড. গোলাম মোর্তজা, ড. মোহাম্মদ শফি, শহীদুল্লাহ কায়সার, সিরাজউদ্দীন হোসেন, নিজামুদ্দিন আহমেদ লাডু ভাই, খন্দকার আবু তালেব, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, নাজমুল হক, আলতাফ মাহমুদ, নূতন চন্দ্র সিংহ, আর পি সাহা, আবুল খায়ের, রশীদুল হাসান, সিরাজুল হক খান, আবুল বাশার, ড. মুক্তাদির, ফজলুল মাহি, ড. সাদেক, ড. আমিনুদ্দিন, হাবিবুর রহমান, মেহেরুন্নেসা, সেলিনা পারভীন, সায়ীদুল হাসানসহ আরো অনেকে।

    শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আলহাজ্জ মো. আবদুল হামিদ। বৃহস্প‌তিবার (১৪ ডি‌সেম্বর) সকাল ৭টার পরপরই মিরপুর বু‌দ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে হা‌জির হন রাষ্ট্রপ‌তি আবদুল হামিদ।

    শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি শহীদ বেদীর সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। শহীদদের সম্মানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।
    শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদীন শ্রদ্ধা জানান।

    বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বেলা ১১টার দিকে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

    এছাড়া মন্ত্রীপ‌রিষ‌দের সদস্য ও সমা‌জের বি‌শিষ্ট ব্যক্তিরা শহীদ বু‌দ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে।

    শহীদ বেদী প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার পর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

    পরে বিভিন্ন দল, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও শহীদ পরিবারের সদস্য এবং সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগসহ ও বিভিন্ন শাখার পক্ষ থেকে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।