আজ স্বাধীনতার পতাকা ছিনিয়ে আনার মাস

    0
    229

    আমারসিলেট24ডটকম,০১ডিসেম্বরঃ আবারও বিজয়ের কেতন উড়িয়ে ফিরে এলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বাঙালির সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতার মাস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অভূতপূর্ব নেতৃত্বে সুদীর্ঘ আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মহিমা নিয়ে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লাখো লাখো নিরীহ বাঙালির প্রাণপণ লড়াইয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতার পতাকা ছিনিয়ে আনার গৌরবোজ্জ্বল মাস। দুঃসহ বেদনার পথ পরিক্রমায় ৩০ লাখ শহীদের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ নামের একটি রাষ্ট্র।

    বাংলার আকাশে উদিত হয়েছিল স্বাধীনতার রক্তলাল সূর্য। শক্রমুক্ত হয়েছিল বাংলার মাটি। এক রক্তাক্ত ইতিহাস, গৌরবের স্মৃতি ও প্রেরণা নিয়ে বছর ঘুরে আবার ফিরে এসেছে সেই বিজয়ের মাস।এ মাসে সেই মহান গৌরব গাঁথার ৪২ বছর পূর্ণ হবে ।বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নপূরণ হবার পাশাপাশি বহু তরতাজা প্রাণ বিসর্জন আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই অর্জনের  বেদনাবিধূর এক শোকগাঁথার মাসও এই ডিসেম্বর। এ মাসেই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর আল-শামসদের সহযোগিতায় দেশের মেধা, শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী হত্যার নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। সমগ্র জাতিকে মেধাহীন করে দেয়ার এহেন ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের দ্বিতীয় কোনো নজির বিশ্বের কোথাও নেই।

    ১৯৭১’ইং সালের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ আর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর জল, স্থল আর আকাশপথে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর চারদিক থেকে ভেসে আসতে থাকে।১৯৭১’ইং সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। যেখান থেকে ৭ মার্চ স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,’ বলে স্বাধীনতার ডাক দেন, সেখানেই পরাজয়ের দলিলে স্বাক্ষর করেন পাক জেনারেল নিয়াজী। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। আর জাতি অর্জন করে হাজার বছরের স্বপ্নের স্বাধীনতার স্বাদ।

    ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি জল্লাদ বাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালী জনগণের ওপর অতর্কিতে সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর এক অসম যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হবার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং তার ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৫ মার্চ রাতেই রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সশস্ত্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় পাক হানাদার বাহিনী।দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র জনযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মধ্যদিয়ে ১৬ ডিসেম্বর জাতির চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় এ দেশে।

     এ মাসে ৪২তম বর্ষপূর্তিতে এসে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের উদ্যোগে পাকবাহিনীর দোসর এদেশীয় রাজাকার-আলবদরদের বুদ্ধিজীবীসহ নিরীহ নরনারী হত্যা ও লুন্ঠনের বিচার চলছে। অনেকের বিরুদ্ধেই রায় ঘোষণা হয়েছে। কারো কারো বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা অপেক্ষমান। অচিরেই এই বিচার পুরোপুরি সম্পন্ন করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য আজ দেশের সকলমহলে দাবি উঠেছে। ১৯৭১’র এর ঘাতক-দালাল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে তাদের শাস্তির রায় কার্যকর করা গেলেই মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করবে বলেই মুক্তিযোদ্ধা, সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের জনতার অভিমত। তাই ভিন্নতর প্রেক্ষাপটেই এবার উদযাপিত হবে মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বর।