আজ বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী

    0
    453

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৮অক্টোবর,আলী হোসেন রাজন: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে মৃত্যুবরণকারী অসীম সাহসী যোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (২৮ অক্টোবর)। এদিন ধলই সীমান্ত এলাকায় প্রাণপণ লড়াই করে সম্মুখ সমরে দেশের জন্য শহীদ হন সিপাহী মোহাম্মদ হামিদুর রহমান। ১৯৯২ সালে তার স্মৃতি রক্ষায় কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্ত চৌকির পাশে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিফলক নির্মিত হয়, ২০০৬ সালে নির্মিত হয় স্মৃতিস্তম্ভ। প্রতিবছর মৃত্যুবার্ষিকীতে শুধুমাত্র প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে তেমন কোন কার্যক্রম নেই বললেই চলে।

    মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য যে সাতজন শহীদকে দেয়া হয় বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব, তাদের একজন সিপাহী মোহাম্মদ হামিদুর রহমান। মাত্র ১৮ বছর বয়সে দেশমাতৃকার টানে ঝাঁপিয়ে পড়েন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে। বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খোর্দা খালিশপুর গ্রামের এ যুবক ১৯৭১ সনে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে পাকহানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখসমরে প্রাণপন লড়াই করে দেশের জন্য শহীদ হন। সেদিন ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আমবাসায় তাঁকে দাফন করা হয়। ১৯৯২ সালে তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে কমলগঞ্জের ধলই সীমান্ত চৌকির পাশে নির্মিত হয় হামিদুর রহমান স্মৃতিফলক। শুধুমাত্র মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করা ছাড়া মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় কোন কার্যক্রম পরিলক্ষিত না হওয়ায় এলাকাবাসী ও পর্যটকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এছাড়াও পাঠ্যবইয়ে এ স্থানকে শ্রীমঙ্গল উপজেলাধীন উল্লেখ করায় অসন্তোষ রয়েছে কমলগঞ্জবাসীদের মধ্যে।
    ২০০৬ সালে এখানেই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১০ শতাংশ জমির ওপর সাড়ে ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গণপূর্ত বিভাগ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি হামিদুর রহমান স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। সঙ্গে সঙ্গে কমলগঞ্জ পৌরসভার ভানুগাছ-মাধবপুর সড়কটিকে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়।
    পর্যটকদের কাছে স্থানটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার জন্য আকৃষ্ট হলেও শৌচাগার, বিশ্রামাগার এর মতো সুযোগ-সুবিধা না থাকায় অনেকেই আসতে চান না এখানে। আবার অনেকে শ্রীমঙ্গল এলাকা জানতে পারায় অনেক খোঁজাখুঁজি করে পৌঁছতে হয় কমলগঞ্জের ধলই সীমান্তে।
    কমলগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান মিয়া বলেন পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আনতে একাধিকবার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও এখনও পর্যন্ত কোন সংশোধনী আনা হয়নি। তাই শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে জানতে পারছেনা বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান প্রকৃতপক্ষে কোথায় শহীদ হয়েছিলেন।
    কমলগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও কমলপুর সাব শেক্টরের সাবেক কমান্ডার ক্যাম্পটেন সাজ্জাদুর রহমান জানান।মুক্তিযোদ্ধাদের দাবী, হামিদুর রহমানের স্মৃতি শুধুমাত্র ধলই সীমান্তে সীমাবদ্ধ না রেখে মৌলভীবাজার জেলায় ছড়িয়ে দেয়ার জন্য, যাতে করে নতুন প্রজন্মর মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে।
    পাঠ্যবইয়ে কমলগঞ্জের স্থলে শ্রীমঙ্গল উল্লেখ করার বিষয়টি মেনে নেয়ার মতো নয়, তাই এলাকাবাসী আশা করেন- নতুন পাঠ্যবইয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিষয়টি সংশোধন করবেন। পাশাপাশি এ স্মৃতিস্তম্ভকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করলে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে আরও সহায়ক হবে।

    আলী হোসেন রাজন
    মৌলভীবাজার
    ২৮.১০.২০১৫ইং