আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ৬৯তম জন্মদিন

    0
    240

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৮সেপ্টেম্বর: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৬৯তম জন্মদিন আজ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার প্রথম সন্তান তিনি।
    ১৯৪৭ সালের এদিনে গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী তীরের প্রত্যন্ত পাড়াগাঁ টুঙ্গিপাড়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
    শেখ হাসিনা বর্তমানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে আট দিনের সরকারি সফরে তিনি নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।

    জাতিসংঘের এই অধিবেশনে শেখ হাসিনা দুটি পুরষ্কারে ভূষিত হন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সক্রিয় ও দৃশ্যমান ভূমিকা এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে যুগান্তকারী উদ্যোগের জন্য ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’।

    শনিবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) কাছ থেকে ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ গ্রহণ করেন। শেখ হাসিনার হাতে ওই পুরস্কার তুলে দেন আইটিইউর মহাসচিব হোউলিন ঝাও। পুরস্কারটি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের তরুণদের উৎসর্গ করেছেন। আজ রোববার রাতে (নিউইর্য়ক সময়) তিনি ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরষ্কার গ্রহণ করবেন।

     এর আগে রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতা, সৃজনশীলতা এবং সাফল্যের জন্য আন্তর্জতিকভাবে তিনি ‘সাউথ সাউথ’ ও ‘সেরেস’ পদকসহ অন্যান্য পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলাদেশে নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য ইউনেস্কো থেকে ‘শান্তির বৃক্ষ (ট্রি অব পিস) অভিধায়ও সিক্ত হন।
    শেখ হাসিনার ডাক নাম হাসু। দাদা শেখ লুৎফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দাদা-দাদির কোলে-পিঠে মধুমতি নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ায়। তারা পাঁচ ভাই-বোন। অপর চারজন হচ্ছেন শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল।

    ভাই-বোনদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে পিতা বঙ্গবন্ধু এবং মাতা ফজিলাতুন্নেছাসহ সবাই ঘাতকদের হাতে নিহত হন।

    পিতাকে খুব একটা কাছে না পেলেও শৈশব-কৈশোর আনন্দেই কেটেছে শেখ হাসিনার। গ্রামবাংলার ধুলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সাথেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। গ্রামের সাথে তাই তার নাড়ির টান।

    শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তখন পুরনো ঢাকার রজনী বোস লেনে ভাড়া বাসায় তারা ওঠেন।

    বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে সপরিবারে ৩ নম্বর মিন্টু রোডের বাসায় তারা বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনাকে ঢাকা শহরে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি করা হয়। এখন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শেরেবাংলা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে খ্যাত। শুরু হয় তার শহর বাসের পালা তথা নগর জীবন।

    শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

    শেখ হাসিনা ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এবং ৬-দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

    ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ৬-দফা দাবিতে পূর্ববাংলায় এক অভূতপূর্ব জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি হয়। শাসকগোষ্ঠী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। শুরু হয় প্রচন্ড দমন-নির্যাতন। আটক থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। তার জীবন ও পরিবারের ওপর নেমে আসে গভীর বিপদাশংকা ও দুঃসহ কষ্ট।

    এই ঝড়ো দিনগুলোতেই বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়।

    ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দী করে রাখা হয়।

    অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দী অবস্থায় তার প্রথম সন্তান ‘জয়’-এর মা হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যা সন্তান পুতুলের জন্ম হয়।

    ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হবার আগে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা ইউরোপ যান। হেগ-এ অবস্থানকালে তিনি সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নিহত হবার খবর পান। তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার কোনো পরিবেশ না থাকায় তিনি ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।

    ১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আর ওই বছরেরই ১৭ মে দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

    ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনটি আসন থেকে নির্বাচিত হন।

    ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের পরে তিনি পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন।

    ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩ জুন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
    ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের নেতা নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও ওই হামলায় ২৪ জন নিহত এবং পাঁচশ’ নেতা-কর্মী আহত হন।
    ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশী আসন নিয়ে বিশাল বিজয় অর্জন করে। এই বিজয়ের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
    পরবর্তিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
    শেখ হাসিনা সাহিত্য চর্চা ও সৃজনশীল লেখায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
    বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জন্মদিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশন উপলক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করে ফুলের তোড়া উপহার দেওয়া হবে।

    এ ছাড়াও বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিকাল ৪টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
    দুপুর ১২টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এবং প্যাগোডা, গির্জাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপসনালয়ে বিশেষ প্রার্থণা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিভিন্ন এতিমখানাসহ দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করবে।
    এ ছাড়াও শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা, আওয়ামী ওলামা লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ।
    আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি রোববার এক বিবৃতিতে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে সভাপতি শেখ হাসিনার ৬৯তম শুভ জন্মদিন পালন করার জন্য দলের সকল শাখা, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।সুত্রঃ বাসস