“আজ পহেলা ফালগুন বসন্তের আগমন”

    0
    437

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৩ফেব্রুয়ারি,জহিরুল ইসলাম.মৌলভীবাজার: পহেলা ফালগুন বা বসন্ত এলেই বাঙালির মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের সেই পরিচিত গান ‘আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়….।’এ সময়েই শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীরগতিতে বাতাসের সঙ্গে বয়ে চলা জানান দেয় নতুন কিছুর।
    আজ ভুবনের দুয়ার খোলা,রঙ লাগলে বনে বনে,ঢেউ জাগলে সমীরণে,দোল দিয়েছে বনের দোল-আজ পহেলা ফাগ্লুন। আগুন রাঙা বসন্ত আজ। প্রকৃতি আজ খুলে দেবে দখিন দুয়ার।সে দুয়ারে বইবে ফাগুনের হাওয়া।বসন্তের আগমনে কোকিল গাইবে গান ভ্রমরও করবে খেলা।
    গাছে গাছে ছড়িয়ে পড়বে পলাশ আর শিমুলের মেলা। প্রকৃতি সাজবে নতুনরূপে।শীতের খোলসে ঢুকে থাকা কৃষ্ণচূড়া,রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম এখন অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে। মৃদু-মন্দ বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধে বসন্ত জানিয়ে দিচ্ছে,সত্যিই সে ঋতু রাজ বসন্ত।‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত’ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অমীয় বাণীটি ঋতুরাজকে আলিঙ্গনের আহ্বান জানায়। ফুল ফোটার পুলকিত এই দিনে বন-বনান্তে কাননে-কাননে পারিজাতের রঙের কোলাহলে ভরে উঠবে চারদিক।কচিপাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লাগবে দোলা। হৃদয় হবে উচাটন।পাতার আড়ালে-আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহু কুহু ডাক, আকুল ব্যাকুল করে তুলবে অনেক বিরহী অন্তর।সকল কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে,বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে এসেছে বসন্ত।লাল-হলুদের বাসন্তী রঙে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের সাজিয়ে আজ বসন্তের উচ্ছলতা ও উন্মাদনায় ভাসবে প্রতিটি বাঙালি।
    বসন্ত মানেই নতুন সাজে প্রকৃতি মুখরিত হওয়ার দিন।ফুল ফোটার পুলকিত সময়।শীতের জরাগ্রস্ততা কাটিয়ে নতুন পাতায় ঋদ্ধ হয়ে উঠবে রুক্ষ প্রকৃতি।বসন্তকে সামনে রেখে গ্রাম বাংলায় মেলা,সার্কাস সহ নানা বাঙালি আয়োজনের সমারোহ থাকবে। ভালোবাসার মানুষের মন রাঙাবে বাসন্তি রঙ্গেই। ফাগুনের ঝিরঝিরে বাতাসে কোকিলের মিষ্টি কলতানে উন্মাতাল হবে প্রকৃতি।ফুলের বসন্ত যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনে। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসমুখরতায় মন-প্রাণ ভরিয়ে তোলে।শীতের সঙ্গে তুলনা করে চলে বসন্ত কালের পিঠা উৎসবও।
    ফালগুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির আজ এতো বর্ণিল সাজ।বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সাথে তরুণ- তরুণী হৃদয়েও লাগবে বসন্তের দোলা। সকল কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে,নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতি।
    প্রকৃতির মতোই শিল্প-সাহিত্য এমনকি রাজনীতিতেও বসন্ত বাঙালি জীবনে তৎপর্যময়।এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল একাত্তরে।বসন্তেই বাঙ্গালির মুক্তিযোদ্ধের শুরু।বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ ও ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।

    কচি পাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লাগে বসন্তের দোলা।উৎসবে মেতে ওঠে নগরবাসী। ফুলের মঞ্জরিতে মালা গাঁথার দিন বসন্ত শুধু প্রকৃতিকেই রঙিন করেনি, আবহমানকাল ধরে বাঙালি তরুণ-তরুণীর প্রাণও রঙিন করেছে।তাই আজ পহেলা ফাল্গুনের সুরেলা এ দিনে তরুণীরা খোঁপায় গাঁদা-পলাশ ফুলের মালা গুঁজে বাসন্তী রং শাড়ি পরবে আর ছেলেরা পাঞ্জাবি-পায়জামা কিংবা ফতুয়ায় খুঁজে নেবে শাশ্বত বাঙালিপনা। এই দিনে প্রিয়জনের সাথে আড্ডা আর ভালবাসার অনুভূতি গুলো একটু অন্য রকম।
    বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে।বাঙালির নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসবের মাঝে এ উৎসব এখন গোটা বাঙালির কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে।এই উৎসব এখন প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে।মোগল সম্রাট আকবর ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন।নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি।এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন শুরু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। আজ ১লা ফাগুনকে উপলক্ষ্য করে রাজধানীসহ সারা দেশে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। দিনভর চলবে তরুণ-তরুণীদের বসন্তের উচ্ছ্বাস আর আনন্দ।মোবাইল ফোন, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলবে একে অপরের বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়।
    সাংস্কৃতিকর্মী শীলা কর্মকার বলেন,কাজের জন্য আমরা বছরের প্রতিটি দিন থাকি কর্ম ব্যস্ততা নিয়ে,পহেলা বসন্ত,পহেলা বৈশাখ আসলে আমাদের মনে করে দেয় আমাদের গ্রাম বাংলার উৎসব গুলো কথা।এইসব উৎসব আমাদের ঐতিহ্য কৃষ্ঠি বহন করে।

    বসন্তের প্রথম দিনেই অসংখ্য রমণী বাসন্তী রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তোলে। সুশোভিত করে তোলে রাজধানীর রাজপথ, পার্ক, বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরসহ পুরো নগরী।পুরো দেশেই চলে উৎসবের আমেজ।এ পূর্ণতার বসন্তের দোলা ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র এবং সারা পৃথিবীর সব বাঙালির ঘরে ঘরে।তবে বাস্তবতার পাথরচাপা হৃদয়ে সবুজ বিবর্ণ হওয়া চোখে প্রকৃতি দেখার সুযোগ পান না নগরবাসী।কোকিলের ডাক, রঙিন কৃষ্ণ চূড়া আর আমের মুকুলের কথা বইয়ের পাতায় পড়ে থাকলেও একালের তরুণ-তরুণীরা কিন্তু বসে থাকতে রাজি নন।গায়ে হলুদ আর বাসন্তী রঙের শাড়ি জড়িয়ে তরুণী ও পাঞ্জাবি পরা তরুণরাও এদিন নিজেদের রঙিন সাজে সাজাতে কম যান না।বসন্ত তারুণ্যেরই ঋতু,তাই সোনার বাংলার প্রতিটি ঘর আজ বসন্তের দিনের তারুণ্যমাখা রুপে সেজেছে।