চা শ্রমিকদের “মুল্লুকে চলো” দিবসঃ২০ মে

    0
    238

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৯মে,আলী হোসেন রাজন:ঐতিহাসিক ২০ মে,বুধবার। ১৯২১ সালের এই দিনে বৃটিশ গোর্খা সৈন্যরা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে নিজ মুল্লুকে অর্থাৎ আবাসভুমিতে ফেরার দাবীতে চাঁদপুরে আন্দোলনরত অসংখ্য চা-শ্রমিককে। চায়ের রাজধানী সিলেট অঞ্চলসহ দেশের অবহেলিত চা-শ্রমিক ইতিহাসের মর্মস্পর্শী এই দিনটিকে বেদনাভরে চা শ্রমিকরা স্মরন করে অপ্রাপ্তির আক্ষেপে। ইতিহাসের এই চেতনাকে ধারন করে দিনটিকে ‘চা-শ্রমিক দিবস’ ঘোষনা এবং সরকারি ছুটির দাবী চা শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টদের।

    বৃটিশ  কোম্পানী সিলেটের মালনীছড়া চা-বাগান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের আবাদ শুরু করলে  প্রয়োজন হয় শ্রমিক সংগ্রহের। বাগান মালিকরা তখন ‘গিরমিট প্রথা’ অর্থাৎ একরকম দাসত্বের শর্তে দক্ষিণ ও মধ্য ভারতের অনুর্বর উড়িষ্যা, মাদ্রাজ, বিহার, মধ্য প্রদেশসহ বেশকিছু অঞ্চলের অভাবী মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে এখানে নিয়ে আসে।

    এদের নামমাত্র মজুরীতে আসাম-সিলেট অঞ্চলের গহীন জঙ্গলে ক্রীতদাসের মতো কঠোর প্ররিশ্রমে বাধ্য করে। তার উপর ছিল মালিকের নির্মম নির্যাতন। নির্যতিত শ্রমিকরা তখন তৎকালীন চা শ্রমিক নেতা পন্ডিত দেওশারন ও গঙ্গাঁ দীতির নেতৃত্বে সংগঠিত হয়ে নিজ আবাসভুমিতে ফিরে যেতে ডাক দেয় ‘মুল্লুকে চলো’ আন্দোলনের।

    এ অবস্থায় শ্রমিকদের স্ত্রী, পুত্র ও পরিজন নিয়ে রেলপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে শত কষ্ট করে জমায়েত হয় চাঁদপুর ষ্টিমারঘাটে। সেখান থেকে ২০ মে কলকাতা যাওয়ার উদ্দেশে চা শ্রমিকরা জাহাজে উঠতে চাইলে তাদের ওপর শুরু হয় গোর্খা রেজিমেন্ট ও গোর্খা সৈন্যদের গুলিবর্ষণ ও পৈশাচিক নির্যাতন। চাঁদপুর রেলস্টেশনে ও ষ্টিমারঘাটে অসংখ্য অসহায় চা-শ্রমিককে হত্যা করে। লাশ ডুবে যাওয়ার জন্য নিহত চা শ্রমিকদের পেট কেটে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয় মেঘনায়।ঘটনার পর একে একে ৯২টি বছর কেটেছে।

    কিন্তু নির্মম হত্যাযজ্ঞের বিষাদময় স্মৃতি বংশ পরস্পরায় আজো বয়ে বেড়াচ্ছেন প্রায় দেশের কয়েক  লক্ষ  চা শ্রমিক। তাদের দাবী, সহ¯্রাধিক শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছিলো সেদিন। আজও এই দিনটির কোন জাতীয় স্বীকৃতি তারা পায়নি। সময়ের সাথে পাল্লাদিয়ে নুন্যতম মাত্রায় বাড়েনি তাদের জীবনযাত্রার মান। তারা জানায় বাবুজি এখনো আমরা  চা বাগানের চার দেওয়ালেই এখন বন্দী ।

    ৬৯ টাকায় দৈনিক মুজুরিতে তাদের সারাদিন শক্ত খাটুনি । তারপরও তাদের  দুবেলা দু মুটো ভাতের নিশ্চতা নেই তাদের জীবনে। বলতে গেলে মৌলিক অধিকারের কোনটিই তাদের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন হয়না । চা বাগানের শ্রমিকরা  তাই আজও এ স্মৃতিময় দিনটি  নানা অনুষ্টানের মধ্যে দিয়ে পালন করেন। চা শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন  ঐতিহাসিক এ দিনটি আজও  তাদের কাছে শ্রদ্ধা, ভালবাসা আর সংগ্রামের হত্যাকান্ডের সঠিক ইতিহাস অন্ধকারে রেখে দিয়েছে মালিকপক্ষ।

    বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক  রাম ভজন কৈরী জানান  আজও সেই ঐতিহাসিক দিনটি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে মালিক পক্ষ। তিনি জানান অন্যান্য দিবসের মতো এই দিনটির যথাযোগ্য স¦ীকৃতি দেবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা চা-শ্রমিকদের।