আজ ওয়াশিংটনে টিকফা চুক্তি

    0
    220

    আমারসিলেট24ডটকম,২৫নভেম্বরঃ আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ইনভেস্টম্যান্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট (টিকফা) সই হতে যাচ্ছে। আজ সোমবার ওয়াশিংটনে এ চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশের পে বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ এবং আমেরিকার পে সে দেশের উপ-বাণিজ্য প্রতিনিধি ওয়েন্ডি কাটলার চুক্তিতে সই করবেন।গত ১৭ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে টিকফা সইয়ের ব্যাপারে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল হলে এ চুক্তি সইয়ের বিষয়টি অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তবে দীর্ঘ আলোচনা এবং দর কষাকষির পর সরকারের মেয়াদের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে এই চুক্তি সই  হতে যাচ্ছে বলে জানা যায়।  সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এই চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ব্যাপারে মুক্ত ও টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি টিকফা সইয়ের মাধ্যমে বেশ কিছু ইস্যুতে বাংলাদেশের দায়বদ্ধতা তৈরি হবে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, আমেরিকার সমর্থন পেতেই সরকার টিকফা চুক্তি সই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
    এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, নির্বাচনের আগে আমেরিকার প্রসন্ন চেহারা পাওয়ার জন্যই টিকফা চুক্তি করার জন্য তাড়াহুড়া করছে সরকার। এ চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানোর মতো ব্যাপার। বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি করার অধিকার কোনো সরকারের নেই। আর বর্তমান নির্বাচনকালীন সরকারের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।  তাই কোনো চুক্তি করার অধিকারও তাদের নেই। এই সরকার যদি টিকফা চুক্তি করে তবে তা হবে অবৈধ চুক্তি।
    এদিকে কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, জিএসপি বাতিল, ড. ইউনূসের বিষয়ে বিতর্ক- সব মিলিয়ে আমেরিকার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্কের একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে এই দূরত্ব কমাতে চায় সরকার। তাই  ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের প্রভাবশালী এই দেশটির সমর্থন পেতেই আমেরিকার ডাকে এবার সাড়া দিয়েছে সরকার। তাছাড়া টিকফা চুক্তির ফলে জিএসপি ফিরে পাওয়া সহজ হবে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কারণ, টিকফা সই হলেই বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যে দ্বিপক্ষিয় বাণিজ্যের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ফোরাম গঠিত হবে। জিএসপি সুবিধা নিয়ে দর-কষাকষির সুযোগ পাবে  বাংলাদেশ। এর আগে আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) বলেছিলেন, জিএসপি ফিরে পেতে টিকফা অন্যতম বাহন হিসেবে কাজ করবে।
    এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী  কাদের বলেন, এ চুক্তি দুই দেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। তাতে সবচেয়ে লাভবান হবে বাংলাদেশ। বর্তমানে আমেরিকায় আমরা প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো পণ্য রফতানি করছি। টিকফার ফলে ব্যবসাসংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে তাদের সাথে।
    মন্ত্রী আরো বলেন,  নিজ নিজ  দেশের আইন ও পদ্ধতি অনুসরণ করে এ চুক্তি বাস্তবায়িত হবে। বিশ্বের ৪২টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের এবং ৯২টি দেশের সঙ্গে আমেরিকার এ ধরনের চুক্তি রয়েছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শুধু ভুটান ছাড়া সবার সঙ্গে আমেরিকার এই চুক্তি আছে। টিকফা চুক্তির পরপরই ফোরামের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই  ফোরামে দুই দেশের প থেকেই দুটি করে এজেন্ডা উপস্থাপন করা হবে। বাংলাদেশের প থেকে  প্রস্তাব তোলা হবে জিএসপি ফেরত চাওয়া এবং পোশাকশিল্প ছাড়া অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্যেও জিএসপি দেয়া। আর আমেরিকার প থেকে বাংলাদেশে সহজ শর্তে তুলা রফতানি করার বিষয়টি। এছাড়া বাংলাদেশে ইনসুলিন রফতানি করার বিষয়টিও তুলবে আমেরিকা।
    উল্লেখ্য, ২০০২’ইং সালে বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি   (টিফা) স্বাক্ষরের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়। মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ, শ্রম অধিকার, ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়ে দুই দেশের মতৈক্য না হওয়ায় আলোচনা আর এগুতে পারেনি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েক দফা আলোচনা শেষে ২০১০ সালে এ বিষয়ে একটা আবেদনপত্র পাঠায় বাংলাদেশ। তখন চুক্তির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় টিকফা বলে।