আগামীতে অবৈধ জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনঃখালেদা

    0
    218

    আমারসিলেট24ডটকম,১৩এপ্রিলঃ বর্তমান সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেশবাসীকে আহবান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল শনিবার শ্রমিক দলের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছে। দেশে আজ কোনো গণতন্ত্র নেই। অবৈধভাবে তারা ক্ষমতায় বসে আছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না, চলতে দেয়া যায় না। এর বিরুদ্ধে শুধু মুখ বুজে চোখের পানি ফেললে চলবে না। ঐক্যবদ্ধভাবে কঠিন ও শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, জনগণ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। আন্দোলনমুখী নেতৃত্বের মাধ্যমে সংগঠন গুছিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ‘যথা সময়ে’ রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। সময় মতো সরকারের ‘অত্যাচারের’ জবাব দেয়া হবে এবং আন্দোলন হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

    সরকারের প্রতি আবারো আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, এখনো সময় আছে, আলোচনার মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। যেভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছেন, দেরি করলে যেকোনো পরিণতির জন্য আপনারা দায়ী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদকে বেঈমান ও মুনাফেক আখ্যায়িত করে বলেন, তিনি অনেক মানুষ খুন, দুর্নীতি করে এখনো বিচার হয়নি জমা আছে, একদিন হবে।
    রাজধানী ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে মহানগর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের জাতীয় কাউন্সিলের এই অধিবেশন হয়। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এই কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য দেন মহানগর সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম।
    দিনব্যাপী কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বিকালে কর্ম অধিবেশনে মহানগরে নতুন নেতৃত্বে নির্বাচন হয়। মহানগর শ্রমিক দলের এটি ৬ষ্ঠ কাউন্সিল। মহানগরের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিলো ২০০৫ সালে।
    দীর্ঘ বক্তব্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, শুধুমাত্র হাতের তালি কিংবা শ্লোগান দিলে চলবে না। কাজ করতে হবে। যারা আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা রাখতে পারবে, ঝুঁকি নিতে পারবে ও রাজপথে থাকতে পারবে, তাদের দিয়ে নতুন কমিটি করুন। ভাই-বোন কিংবা বন্ধুত্বে সম্পর্কের কথা চিন্তা করে নেতৃত্ব নির্বাচন করলে চলবে না। নইলে ‘কাউন্সিলের উদ্দেশ্য মূল্যহীন’ হবে বলেও জানান তিনি।
    এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের সংসদ নির্বাচন বর্জনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের আন্দোলন অতীতে কখনো ব্যর্থ হয়নি, আগামীতেও হবে না। জনগনের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে আমরা সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ৫ জানুয়ারি ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তও সঠিক ছিলো বলে দাবি করেন তিনি।
    আন্দোলনের প্রস্তুতির বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আগামী ১৯ এপ্রিল শ্রমিক দলের কাউন্সিল হবে। মহানগর বিএনপির শিগগিরই নতুন কমিটি দেয়া হবে। অন্যান্য সংগঠনগুলোও নতুনভাবে সাজানো হবে। ওইসব সংগঠন নতুন নেতৃত্বে গড়ে তোলা হবে। কারণ, পুরণোরাও চান, নতুন নেতাদের সংগঠনে দায়িত্বে নিয়ে আসার। ওই কাজগুলো আমরা এখন করে যাচ্ছি। এসব কমিটি গঠনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বকে নিয়ে আমরা আগামী দিনে অবৈধ ও জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব।
    তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশের মানুষ এসরকারের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তারা অধীর আগ্রহে বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। জনগণ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। আমাদেরকে সংগঠন শক্তিশালী করে মাঠে নামতে হবে। ইনশাল্লাহ আমরা এতে সফল হবো।
    বেগম খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে সরকারের দুর্নীতি, দলীয়করণ, বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগসহ দেশের অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, জনশক্তি হ্রাস পাওয়াসহ সরকারের নানা ব্যর্থতা ও অপশাসনের চিত্র তুলে ধরেন।
    তিনি বলেন, তারা দেশকে নি:শেষ করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতা এসেছে, তারা লুটপাট করেছে। দেশের শেয়ারবাজার ধ্বংস করেছে। ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এবার ক্ষমতাসীনরা ফোকলা করে দিয়েছে। এরপরও দুর্নীতি দমন কমিশন সরকারি দলের এসব দুর্নীতি চোখে দেখে না। তারা বিএনপির নেতাদের হয়রানি করছে।
    সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এর বিরুদ্ধে মুখ বুজে  চোখের পানি ফেললে চলবে না। কঠিন ও শক্তভাবে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এভাবে দেশ চলতে পারে না, চলতে দেয়া যায় না। আওয়ামী লীগের হাতে অনেক অবৈধ অস্ত্র আছে। শিক্ষাঙ্গনগুলোকে তারা অস্ত্রাগারে পরিণত করেছে। বিএনপির অস্ত্র হচ্ছে জনগণ। সেজন্য আওয়ামী লীগ বিএনপিকে এতো ভয় পায়। আমাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি করতে সরকার বাধা দেয়।
    তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছে। দেশে আজ কোনো গণতন্ত্র নেই। অবৈধভাবে তারা ক্ষমতায় বসে আছে।
    সদ্য শেষ হওয়া উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে বিএনপি এগিয়ে দেখে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দফা নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখলে করে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করেছে। উপজেলা নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে,আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
    দেশে মাদকের বিস্তার, চোরাচালানি বৃদ্ধির অভিযোগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদকের বিস্তারের মাধ্যমে সরকার যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সন্ত্রাস, গুম-খুন এখন নিত্য দিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ কথায় কথায় বলে সোনার বাংলা’র কথা। এই দলটির সোনার ছেলেরা এখনো কি করছে। দেশে সোনা চোরাচালানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন এতো সোনা ধরা পড়ছে, অতীতে এরকম সোনা চোরাচালানি দেখা যায়নি। ওইসব সোনা কোথায় যাচ্ছে ?
    জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের কর্মকান্ডের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, এরশাদ একজন বেঈমান, মুনাফেক। তাকে জনগণ বিশ্বাস করে না। সরকার তাকে আবার বিশেষ দূত বানিয়েছে।  বিদেশীদেরও তার প্রতি আস্থা নেই। তাকে দিয়ে আবার কী দূতালী হবে।
    তিনি বলেন, এরশাদ অনেক দুর্নীতি করেছে। অনেক মানুষ খুন করেছে। ওইসব দুর্নীতি ও খুনের বিচার এখনো হয়নি। এগুলো জমা আছে। একদিন দুর্নীতি-খুন-গুমের সব বিচার হবে বলেও জানান তিনি।
    কলকারখানা বন্ধ, পোশাক শিল্পের দুরবস্থাসহ শ্রমিকদের বেকারত্বের জন্য সরকারের ভ্রান্তনীতিকে দায়ী করে খালেদা জিয়া বলেন, কলকারখানায় বিদ্যুৎ দিতে পারে না। গ্যাস নেই, পানি নেই। ব্যাংক ঋণ পাওয়া  যায় না। এজন্য অনেক শিল্প-কারখানা রুগ্ন হয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এজন্য সরকারই দায়ী। গত ৫ বছরে সরকার কোনো নতুন শিল্প গড়ে তুলতে পারেনি বলেও জানান বেগম খালেদা জিয়া।
    কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার তার শাসনামলে ৬ বার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে জনগণের পকেট থেকে অর্থ লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
    মহানগর সভাপতি মো. রেহান আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শ্রমিক দলের সভাপতি নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, শ্রমিক দলের নির্বাহী সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী, সহ-সভাপতি মজিবর রহমান সারওয়ার, সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
    কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল মান্নান, যুব দলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহানগর সদস্য সচিব আবদুস সালাম, মহিলা দলের সভানেত্রী নুরী আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, উলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক, শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।