আওয়ামীলীগ এলে সাংবাদিকরা পূর্ণ স্বাধীনতা পায়

    0
    218

    আমার সিলেট  24 ডটকম,০৪নভেম্বরঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সাংবাদিকরা পূর্ণ স্বাধীনতা পায়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরাই সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিই। আমরাই মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করি। আজ সোমবার রাজধানীর বেইলি রোডে পিআইবির নবনির্মিত আটতলা ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মুর্তজা আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও হাবিবুর রহমান মিলন, প্রেস ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক শাহ আলমগীর প্রমুখ। এর আগে আজ সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে  বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট চত্বরে পৌঁছেই  নতুন  আটতলা ভবনের উদ্বোধন করেন সরকার প্রধান।
    অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ ফান্ড গঠন করেছি।দেশে এখন অনলাইন মিডিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা তথ্য অধিকার আইন করেছি। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার পর গ্রেপ্তার না করে সমন জারির বিধান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের গতিশীল, উদ্যোগী ও আন্তর্জাতিকমানের করে গড়ে তুলতে পিআইবি কাজ করবে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে আমরা জনগণের সহযোগিতা চাই। জনগণের স্বার্থেই আমরা এ সাফল্য অর্জন করবো।
    শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা থাকলে আপনারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন। এছাড়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এজন্য আপনাদের সাহায্য-সহযোগিতা চাই।
    শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিরোধীদলীয় নেত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি উদ্বোধন করেছিলাম বলে তিনি পিআইবির ভবন নির্মাণ করেন নাই। আমি উদ্বোধন করবো বলে তিনি বদান্যতা দেখিয়েছেন। এজন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।পত্রিকায় লেখার সময় ও পত্রিকায় এটা থাকবে কি না জানি না।কারণ সবচেয়ে বেশি আক্রমণের শিকার তো আমিই হই।
    প্রধানন্ত্রী বলেন, আমি চাই, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া যেন অব্যাহত থাকে। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। রায় আসছে। আন্দোলন ঠেকাচ্ছি। আবার ক্রিকেটেও জয় পাচ্ছি। ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে জীবন চলবে। তার মধ্যেও আমাদের অর্জন চলবে।প্রচার মাধ্যমকে রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ, সমাজের দর্পণ, উন্নয়নের সহায়ক শক্তে এবং সাংবাদিকদের প্রচার মাধ্যমের প্রাণ । পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর সামরিক সরকার শুধু সাংবাদিকদের উন্নয়ন প্রকল্পই বন্ধ করেনি। তখন সংবাদপত্র চলতো সামরিক ফরমান বলে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছিল না।
    তিনি বলেন, গণতন্ত্রের একটা নীতিমালা আছে। সাংবাদিকতারও একটা নীতিমালা আছে। এ দুটো মনে রাখলে আমরা অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারব- ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভায় বঙ্গবন্ধু এই কথা বলেছিলেন।এটা মানা হয় না। অনেকে সংবিধানও মানতে চায় না। সংবাদ মাধ্যমের সংবিধান ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে। আশাকরি, তারা তা মেনে চলবে।
    বিভিন্ন বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে টক শো নামে পরিচিত মধ্যরাতের আলোচনা অনুষ্ঠানের আলাপচারিতায় অনেকে সংবিধানের ব্যাখ্যা যেভাবে দেয় তাতে যারা গণতন্ত্র থাকুক চায় না তারা উৎসাহিত হবে। এর প্রভাব সমাজের ওপর কিভাবে পড়বে তা তারা ভাবেন না। তারা জ্ঞানীগুণী মানুষ।আমাদের সংসদে, জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। মধ্যরাতের টক শোতে জ্ঞানীগুণী মানুষকে তো জবাবদিহি করতে হয় না। সত্য কথায় আমাদের আপত্তি নেই। মনের মাধুরী মিশিয়ে যদি কোনো কথা বিকৃত করা হয়- সেটা আপত্তিকর।
    সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শুধু এটুকুই চাচ্ছি- যারা পরবর্তী প্রজন্ম, যারা আগামী দিনের কর্ণধার হবে তাদের জন্য এমন ব্যবস্থা রেখে যাওয়া, যা হবে সংবিধান মোতাবেক। কোথাও না কোথাও থেকে শুরু করতে হবে। জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন থেকে শুরু করে বর্তমান সরকার আমলে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার পর্যায়ের পাঁচ হাজার ৮০৩টি নির্বাচনের মাধ্যমে ৬৪ হাজার ২৩ জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার কথা  তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
    প্রচার মাধ্যমের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা কিন্তু কোনো বৈরী কথা লিখতে পারেন নাই। কারণ কেউ সিল দিয়ে বাক্স ভরে নাই। কেউ ব্যালট বাক্স নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে নাই।
    অনলাইনে অসামাজিক কর্মকাণ্ড ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বন্ধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সাংবাদিকদের আরো উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।সম্প্রতি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রচার মাধ্যমের যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করে এর বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সোচ্চার হতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
    শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজনীতি না করলে সাংবাদিকই হতেন। তিনি কোলকাতায় যখন পড়তেন তখন ইত্তেহাদের প্রতিনিধি ছিলেন। ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠার সাথেও জড়িত ছিলেন। রাজনীতিবিদ না হলে সাংবাদিকতাকেও পেশা হিসাবে বেছে নিতে পারতেন। সাংবাদিকরা তাকে অনেক সহায়তা করেছেন। অনেক সাংবাদিক বন্ধুও ছিলো তার।
    তথ্যমন্ত্রী ইনু বক্তব্যে জানান, দেশে এখন ৬১৪টি দৈনিক, ১০১টি সাপ্তাহিক, ৩৬টি মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। আর বিটিভিসহ ২২টি টিভি চ্যানেল, ১০টি এফএম রেডিও স্টেশন এবং হাজার খানেক অনলাইন সংবাদপত্র রয়েছে।
    বাংলাদেশের রাজনীতির পালাবদলের সমালোচনা করে জাসদ প্রধান বলেন, উড়ে এসে জুড়ে বসা খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমান ভূতের মতো উল্টো দিকে হেঁটেছিল। এখন তথ্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। সকল কিছু এখন স্বচ্ছ। বাংলাদেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো রক্তাত্ব জনপদে পরিণত করার চক্রান্ত চলছে। নিরপেক্ষতার নামে রাজাকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের এক পাল্লায় মাপবেন না। খালেদা জিয়াকে অশান্তির রাণী বলে কোনো সাংবাদিক এক কলম লেখেন- তাহলে কী নিরপেক্ষতা হরণ হবে?
    সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন সংবাদ মাধ্যমের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, অনেক গণমাধ্যম ব্যক্তিও হামলার পক্ষে  সুর মেলাচ্ছে- এটা খুবই দুঃখজনক। পিআইবি প্রকাশিত “বঙ্গবন্ধু ও গণমাধ্যম” নামের একটি গ্রন্থ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান মিলন।
    প্রসঙ্গত, সাংবাদিকতার বিকাশ এবং সাংবাদিকদের সুষ্ঠু প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতীয় প্রেস ইনস্টিটিউট প্রকল্প অনুমোদন করেন। ডরমিটরি, ক্যাফেটেরিয়া, বক্তৃতা কক্ষ ও পাঠাগারসহ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাজেটে ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। ২০০০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। নবনির্মিত ভবনে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সুবিধা আরো বাড়ানো হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য আবাসন সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে। একটি আইটি ল্যাব ও স্থাপন করা হয়েছে।