আওযামিলীগ,ছাত্রলীগ আমাদের ভাইঃআহমদ শফী

    1
    488

    বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কেউ কটূক্তি করলে বরদাশত করা হয় নাখুব দ্রুতই তাকে বিচার ও শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়কিন্তু আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে আজ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হলো না? একজন নামাজী ও হিজাবী প্রধানমন্ত্রীর কাছে জনগণ এটি আশা করেনিমানুষ আপনাদের ভূমিকায় হতাশ হয়েছে

    আমারসিলেট24ডটকম,১৩এপ্রিলঃসর্বস্তরের হেফাজত পন্থী  মানুষের অংশগ্রহণে গতকাল শনিবার বাদ যোহর থেকে রাত অবধি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আয়োজিত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত শানে রেসালত(দঃ) সম্মেলনের নামে দ্বিতীয় ও শেষ দিনে অরাজনৈতিক সংগঠনের আড়ালে তাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের (বেফাক) চেয়ারম্যান শাহ্ আহমদ শফী বলেছেন, নাস্তিকদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আল্লাহ-রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কটূক্তিকারীদের বাংলাদেশে ঠাঁই নেই। দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা থাকবে তাদেরকে  ঈমানের দাবি  মানতে হবে। শেখ হাসিনা সরকার, আওযামিলীগ,ছাত্র লীগ আমাদের দুশমন নই আমরা তাদের দুশমন নই, আগে যে ভুল ত্রুটি হয়েছে আসুন আমরা সবাই তওবা করে আল্লাহর কাছে মাফ চাই। তিনি আরও বলেন আমরা সকলে ভাইভাই।যারা ১৩ দফা মানবে তারা আমাদের বন্ধু। যারা মানবে না তারা ইসলামের দুশমন। নাস্তিকতা ও ধর্মদ্রোহিতার বিরুদ্ধে বিশ্বনবীর প্রিয় সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে জিহাদ-লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে।

    শেষ দিনের শানে রেসালত(দঃ) সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে নূর হোসাইন কাসেমী, সালাউদ্দিন নানুপুরী ও  লোকমান হাকিম। সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী।
    সম্মেলনে শাহ্ আহমদ শফী বলেন, যারা অদৃশ্য আল্লাহকে না দেখার অজুহাতে বিশ্বাস করে না, তারা জারজ সন্তান। বাংলাদেশে তাদের স্থান নেই। কারণ তারা তাদের যে পিতার ঔরসজাত সন্তান এটি তো তারা দেখেনি। অদেখা বিষয় যদি তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য না হয়, তাদের পিতৃত্বও অদেখা বিষয়। সুতরাং তাদের তত্ত্ব অনুযায়ী জন্ম-পরিচয় নিয়ে সংশয়ের অবকাশ আছে।শাহ্ আহমদ শফী বলেন, পৃথিবীতে অনেক কিছু অদৃশ্য। দেহের মাঝে সক্রিয়-সচল প্রাণটিও অদৃশ্য কিন্তু কেউ তো এটিকে না দেখার অজুহাতে অস্বীকার করে না। কেবল আল্লাহকে না দেখে বিশ্বাস করতে আপত্তি কেন? তোমরা নাস্তিকরাও আল্লাহর সৃষ্ট পৃথিবীতে তাঁর দেয়া জীবিকা ভোগ করো, আলো-বাতাসে জীবন ধারণ করছো; সুতরাং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং বিভ্রান্তি ও মিথ্যার অন্ধকার ছেড়ে সত্যের আলোয়, ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করো। শান্তি ও মুক্তির পথ একটাই- বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শ অনুসরণ।
    বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী শানে রেসালত(দঃ) সম্মেলন থেকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি ওয়াক্কাস ও মুফতি হারুন ইজহারসহ সকল ওলামায়ে কেরামের মুক্তি ও দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান। তিনি বলেন, একতরফা নির্বাচনে হিন্দু ভাইদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার করতে হবে। তিনি বলেন, শাহবাগী কতিপয় নাস্তিক পরিষ্কার বলেছে, ‘আল্লাহকে ফাঁসি দেয়া হবে’। বিশ্বের বিভিন্ন জনপদে মুসলমানদের অস্তিত্ব, ঈমান-আকিদা ও সভ্যতা-সংস্কৃতির ওপর নানামুখী হামলা অব্যাহত রয়েছে। কোথাও মুসলিম নিধন, কোথাও জেল-জুলম আবার কোন কোন দেশে মুসলমানদের ঈমান-আমল-আখলাক ধ্বংস করার জন্য সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রযুক্তির হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মিডিয়া বা গণমাধ্যম বর্তমান সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র; যেখানে কিছু লোক পরিকল্পিতভাবে  ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে অনবরত মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। নাস্তিক্যবাদী গোষ্ঠী কখনো স্বরূপে কখনো আড়ালে-আবডালে থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে একের পর এক চিন্তা-জগতের সন্ত্রাস চালাচ্ছে। এটা বাংলাদেশ কিংবা অন্য কোনো দেশের বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মুসলমানদের দলমত নির্বিশেষে তাদের কর্মকানডের ব্যাপারে সর্বদা সজাগ-সচেতন থাকতে হবে। নতুন প্রজন্মকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষায় গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় আমাদের অজান্তে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধর ধর্মহীন ও সমাজের বিষবৃক্ষ হয়ে উঠবে। এ জন্যে আল্লাহর কাছে আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে।
    সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সমাজে আজ যে অনাচার, পাপাচার, অন্যায় ও দুর্বৃত্তপনা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এর ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়া ও পরিণতি থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চায় কিন্তু এর সঠিক পথ নির্বাচনে আমরা বার বার ভুল করছি। সমাজে কুরআন-সুন্নাহ তথা বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন ছাড়া এ অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে না। রাসুলের আদর্শে গড়া সোনালি যুগের আলোকিত প্রজন্ম সাহাবায়ে কেরামের মতো সুনাগরিক তৈরির মিশনের অংশ হিসেবেই হেফাজতে ইসলামের এই শানে রেসালত(দঃ) সম্মেলন।
    তারা আরও বলেন, অতীত কিংবা বর্তমানের কোন সময়ে দেশের কোথাও সন্ত্রাস, রক্তপাত কিংবা কোনো ধরনের নাশকতামূলক তৎপরতায় আলেম-ওলামা ও মাদরাসা শিক্ষিতরা সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ নেই। যারা মাদরাসাকে জঙ্গিবাদের আস্তানা ইত্যাদি বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে থাকে প্রকৃতপক্ষে তারা আসল জঙ্গীদের পৃষ্ঠপোষক। সত্যকে আড়াল করার জন্য সবসময়ই তারা মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়। বক্তারা বলেন, আজ শিক্ষাঙ্গনে, কর্মস্থলে, পথেঘাটে যেভাবে মেয়েদের ইজ্জতহরণ করা হচ্ছে, সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হচ্ছে, পারিবারিক বন্ধনে ফাটল ধরছে এসবের প্রধান কারণ হচ্ছে শালীনতা বর্জন ও অশালীন জীবনাচার। সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে যারা শালীন পোশাক পরিধান করে, যারা ইসলামী শরীয়তের ফরজ বিধান পর্দা পালন করছে তাদেরকে নাজেহাল করা হচ্ছে, পর্দাকে নিরুৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন রকম সুপারিশ ও আইন পাস করা হচ্ছে। এটি বস্তুত মুসলমানদের সমাজে সর্বগ্রাসী নৈতিক অবক্ষয় ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বিজাতীয় চক্রান্তের অংশ। পর্দা মেনে চলেন এমন মেয়েরা সাধারণত কোথাও অপমাণিত হওয়ার ঘটনা দেখা যায় না। পর্দা বিধান বিলুপ্ত হলে সমাজ থেকে শালীনতা, শান্তি-শৃঙ্খলা ও নারীর সম্ভ্রম-মর্যাদা হারিয়ে যাবে।
    সম্মেলনে বিভিন্ন আলেমগন আরও বলেন, লাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কেউ কটূক্তি করলে বরদাশত করা হয় না। খুব দ্রুতই তাকে বিচার ও শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে আজও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হলো না? একজন নামাজী ও হিজাবী প্রধানমন্ত্রীর কাছে জনগণ এটি আশা করেনি। মানুষ আপনাদের ভূমিকায় হতাশ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত বছর হেফাজতে ইসলামের ডাকে ৬ এপ্রিলের লংমার্চ বানচাল করার জন্য কিছু বানরের বাচ্চা হরতাল ডেকেছিল। কিন্তু আল্লাহ লংমার্চকে ঐতিহাসিক সফলতা দিয়েছেন।
    আলেম গন আরও বলেন, যারা মাদরাসা ছাত্রদের ওপর গুলি করার জন্য পুলিশকে উস্কানি ও নির্দেশ দিয়েছিল, যারা শাপলা চত্বরে নবীপ্রেমিক জনতার উপর হামলা করেছিল, বায়তুল মুকাররমে কুরআন পোড়ানোর জঘন্য কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা একেকজন একটি করুণ অপঘাতে প্রাণ দিয়েছে। কেউ অগ্নিকা-ে পুড়ে ছাই হয়েছে, কাউকে জীবন দিতে হয়েছে আপন সন্তানের হাতে; কেউ নিজ দলীয় প্রতিপক্ষ কিংবা র‌্যাব-পুলিশের গুলিতে মরেছে। আমরা কারো উপর প্রতিশোধ নেইনি আমাদের এটা করতে হয় না। আল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে মোক্ষম ফায়সালা করেছেন। এখন আমরা শাহবাগী ইমরান এইচ সরকারের ধারাবাহিক পরিণতি দেখতে পাচ্ছি।
    শানে রেসালাত(দঃ) সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মুফতি আহমদুল্লাহ পটিয়া, শাহ্ মুহাম্মদ তৈয়্যব, সুলতান যওক নদভী, নূর হোসাইন কাসেমী, ড. এ.বি.এম. হিজবুল্লাহ কুষ্টিয়া, মুফতি মাহমুদুল হাসান, শেখ আহমদ, সালাহুদ্দিন নানুপুরী, মুহাম্মদ সলিমুল্লাহ, মুফতি জসিমুদ্দিন, অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব,জাফরুল্লাহ্ খান,আবদুল রব ইউসুফী, মনজুরুল ইসলাম,ফজলুল করিম কাসেমী,নাজমুল হাসান,মুজিবুর রহমান হামিদী,মুফতি ফখরুল ইসলাম,মুনির আহমদ,  আবদুল রহিম ইসলামাবাদী প্রমুখ।