অর্থমন্ত্রী ও আবু জাহিরকে হত্যার পরিকল্পনায় মামলা

    0
    234

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,৩০আগস্ট,তালুকদার তৌফিকঃ  কারাগারে বসে কিভাবে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় তার চিত্র তুলে ধরেন মামলার বাদী হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই সানা উল্লাহ। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও হবিগঞ্জ সদর- লাখাই আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহিরকে হত্যার পরিকল্পনা করার অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় কারাগারে আটক হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জি কে গউছসহ ৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

    গত ২৮ আগস্ট এ মামলাটি দায়ের করেন হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই সানা উল্লাহ। মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন শায়েস্তাগঞ্জ দাউদনগরের ছালেহ আহম্মদ কনা মিয়ার পুত্র আলোচিত ইলিয়াছ মিয়া ওরফে ছোটন, হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকার গোলাম রহমান ওরফে আলফু মিয়ার পুত্র জেলা ছাত্রদল নেতা গোলাম কাউছার ঝলক ওরফে জি কে ঝলক, একই এলাকার বাসিন্দা জিতু মিয়ার পুত্র পৌর যুবদলের আহ্বায়ক শফিকুর রহমান সিতু ও বাহুবল উপজেলা জামায়াতের আমির আব্দুর রউফ বাহার। জামাত নেতা বাহার শাহাপুর গ্রামের মোজাফফর উল্লাহর পুত্র।

    মামলার বিবরণে বাদী উল্লেখ করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় কারাগারে আটক হবিগঞ্জ পৌরসভার সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জি কে গউছের সাথে কারাগারে মামলার আসামী ইলিয়াছ ওরফে ছোটনের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও হবিগঞ্জ সদর লাখাই আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু জাহিরকে হত্যার পরিকল্পনার আর্থিক লেনদেনের বিষয় নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়।

    এ বিরোধের জের ধরে গত ১৮ জুলাই ঈদের নামাজের পর ইলিয়াছ জি কে গছের উপর আক্রমণ করে। এতে জি কে গউছ আহত হয়। এ প্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ জেলা কারাগারের জেইলার শামীম ইকবাল ইলিয়াছের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। উক্ত অভিযোগে প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে ইলিয়াছ ওরফে ছোটনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ইলিয়াছ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

    এরপর গত ২৭ জুলাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি প্রদান করে ইলিয়াছ।

    উক্ত স্বীকারোক্তির জবানবন্দিতে ইলিয়াছ জানায়, সে দীর্ঘদিন যাবৎ হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে বিভিন্ন হত্যা মামলায় আটক রয়েছে। এর মধ্যে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় কারাগারে যান হবিগঞ্জ পৌরসভার সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জি কে গউছ। এর কিছুদিন পর সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকেও কারাগারে পাঠায়।

    উক্ত দুই মেয়র কারাগারে ডিভিশন প্রাপ্ত হাজতী। এ সময় জি কে গউছ কারাগারে আটক থাকা জি কে ঝলক ও শফিকুর রহমান সিতুকে ইলিয়াছের কাছে পাঠিয়ে জি কে গউছের সাথে দেখা করার কথা বলে। কিন্তু ইলিয়াছ জি কে গউছের সাথে দেখা করেননি। পরবর্তীতে ১ মাস পর পূনরায় জিকে ঝলক শফিকুর রহমান সিতু সেলে গিয়ে ইলিয়াছকে জি কে গউছের সাথে দেখা করার কথা বললে ইলিয়াছ ওরফে ছোটন কারাগারের সাবেক জেল সুপার নুরশেদ আহমেদ ভুইয়ার অনুমতিক্রমে কারাগারের সুবেদার জহির ও সিআইডির (কারারক্ষী) আনোয়ারের সহায়তায় এক সময় জি কে গউছের রুমে গিয়ে তার সাথে দেখা করে।

    এ সময় জি কে গউছ রুমে বসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও হবিগঞ্জ সদর লাখাই আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু জাহিরকে হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করে। ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনায় মেয়র জি কে গউছ ইলিয়াছ ওরফে ছোটনকে জানায় দীর্ঘদিনে কারাগারে থাকায় সে তার জামিনের শর্তে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে হত্যা করলে ১০ কোটি টাকা ও হবিগঞ্জ সদর লাখাই আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু জাহিরকে হত্যা করলে ২ কোটি টাকা দেয়ার মৌখিক চুক্তিবদ্ধ হয়। মেয়র জি কে গউছ ইলিয়াছকে জেলা কারাগারের একাউন্টে (পিসি)তে অগ্রিম ১০ লাখ টাকা দিবে বলে মৌখিক চুক্তি করেন।

    এ সময় মেয়র জি কে গউছ ইলিয়াছকে জানায়, ইলিয়াছ জামিনে মুক্তির সহায়তায় পর তাকে গেইটের বাইরে তার লোক ইউনূছসহ কয়েকজন রিসিভ করে নিয়ে বাকী কাজ বুঝিয়ে দিবেন। এরপর ইলিয়াছ তার সেলে চলে যায়। এর ভিতরে জি কে গউছের কিছু অনুসারী গিয়ে ইলিয়াছের সাথে দেখা করে চুক্তি মোতাবেক কাজ করার জন্য তাগিদ দেয়।

    ঈদুল ফিতরের দিন হাজতী আব্দুর রউফ বাহার ইলিয়াছের সাথে দেখা করে জি কে গউছের কাজ না করায় তাকে গালিগালাজ করে এবং তার রুমে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করে। এক পর্যায়ে ইলিয়াছ মেয়র জি কে গউছের সাথে বাহির হয়ে রুমে যাওয়ার পথে কারাভ্যন্তরের ওয়ার্ড ও সেলের সামনে রাস্তায় পৌছলে গউছের লোকজন তাকে আক্রমণ করতে পারে মর্মে আশঙ্কা করে।

    এ আশঙ্কায় পূর্ব থেকে পকেটে থাকা সূচালো হালকা বাকা স্টিল জাতীয় বালতির হাতল দ্বারা মেয়র জি কে গউছের পিঠের ডান সাইডে আঘাত করে।