অভিবাবকহীন সিলেট তামাবিল মহা সড়ক

    0
    325

    ২০কিলো রাস্তায় সহ্রসাধিক ছোট বড় গর্ত, সারিঘাট হতে জাফলং পর্যন্ত ২০কিলো রাস্তা পাড়ি জমাতে সময় লাগে ২ঘন্টা, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায় যাত্রীরা

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২০সেপ্টেম্বর,রেজওয়ান করিম সাব্বিরঃ সিলেট তামাবিল মহাসড়ক যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ভাঙ্গা আর রয়েছে খনাখন্দ ছোট বড় প্রায় সহস্রাধীক গর্ত। পাথর, কয়লা কিংবা পর্যটক ও যাত্রীবাহি যানবাহন চলছে মৃত্যুর ঝুকি নিয়ে। প্রতিনিয়তই আটকা পড়ছে ছোট বড় সব ধরনের যানবাহন। যানবাহন গুলোর যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে রাস্তার গর্তের উপর বিকল হয়ে পড়ে ফলে সড়কটিতে যানচলাচল বন্ধ থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা। দুর্ঘটনায় প্রাণহানী আর পঙ্গুত্বের পরসিংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।

    ২০ কিলো রাস্তা সরজমিন পরিদর্শনকালে ফুটে উঠে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের নানা দুনীতি আর অসঙ্গতি। জেলা সদর হতে জাফলং পর্যন্ত ব্যস্ততম সিলেট তামাবিল মহাসড়কের পরিসীমা প্রায় ৬০ কিলোমিটার। পর্যটন, ব্যবসা, বানিজ্য সহ নানা কারনে দেশে বিদেশিদের কাছে সড়কটি সু-পরিচিতি রয়েছে। সড়ক ও জনপথের হিসাব অনুযায়ী জাফলং হতে সারীঘাট বাজার পর্যন্ত দুরত্ব প্রায় ২০ কিলো। রাস্তাটি ঘুরে দেখা যায় ২০কিলো রাস্তা জুড়ে রয়েছে প্রায় সহ্রস্যাাধীকের অধিক ছোট বড় গর্ত। জাফলং, মামার দোকান, মোহাম্মদপুর, গুচ্ছগ্রাম, তামাবিল স্থলবন্দর, নলজুরী, মোকামবাড়ী, আলুবাগান, মোকামপুঞ্জি, শ্রীপুর, গুচ্ছগ্রাম আদর্শগ্রাম, আসামপাড়া, ৪নং বাংলাবাজার, রাংপানি, বিড়াইমারা, চাংঙ্গীল জৈন্তাপুর বাজার, ফেরীঘাট, সারীঘাট উত্তর ও দক্ষিণপাড়। এছাড়া দরবস্ত বাজার, তেলিজুরী, বাঘের সড়ক, চিকনাগুল, শুক্রবারীবাজার সহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় আর অনেক গর্ত। একেকটি গর্তের গভীরতা নুন্যতম তিন থেকে সাড়ে তিনফিট। বিকল্প ব্যবস্থা কিংবা বাইপাস সড়ক না থাকায় এসব ছোট বড় গর্তের উপর দিয়েই বাধ্য হয়েই চলতে হচ্ছে যাত্রীবাহি বাস, মিনিবাস, মালবাহী ট্রাক, লাইটেস, হাইলাইস, পিকআপ, লেগুনা, হিউম্যান হুলার, টমটম, সিএনজি সহ নানা ধরনের গাড়ী।

    বর্তমান সিলেট-তামাবিল সড়কের সারীঘাট, জৈন্তাপুর বাজার, চাঙ্গীল, বিরাইমারা, রাংপানি, ৪নং বাংলাবাজার,  শ্রীপুর, আলুবাগান, মোকামবাড়ী, নলজুরী, তামাবিলআপ সহ বেশ কিছু এলাকা জুড়ে রয়েছে গর্ত আর গর্ত। এ কারনে প্রায়ই আটকা পড়ছে পাথর ও কয়লাবাহি ট্রাক, যাত্রীবাহি বা পন্যবাহি যানবাহন সমুহ। কয়লা, পাথর, বালিসহ পন্যবাহী ট্রাক সমুহ যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে কিংবা চাকা পাংচার হয়ে গাড়ী রাস্তায় বিকল হলেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। যানবাহনের ত্র“টি সারিয়ে নিতে কোন কোন ক্ষেত্রে ২-১দিন, আবার ৪-৫ঘন্টা সময় লাগে। ফলে জাফলংয়ে ঘুরতে আসা পর্যটক দর্শনার্থী সহ এলাকার সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। বড় বড় এসব গর্তে আর খানা খন্দের কারণে পন্যবাহি ট্রাক কিংবা যাত্রীবাহি বাস, মাইক্রোবাস চলতে হয় ধীর গতিতে। চাঙ্গীল ব্রীজের মুখ, রাংপানি ব্রীজের মুখ, ৪নং বাংলা বাজার ব্রীজের মুখ, নলজুরী লেবারঘাট এলাকার বিশাল বিশাল গর্তের কারণে প্রায়ই যাত্রীবাহি বাস, পাথর, কয়লা ও পন্যবাহি ট্রাক, যাত্রী বাহি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন উল্টে যাওয়ার ঘটনা অহরহ লেগেই আছে।

    এসময়ই যাত্রী সাধারণের মনে আতঙ্ক লেগেই থাকে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে সারীঘাট হতে জাফলং পর্যন্ত ২০কিলো সড়ক পাড়ী দিতে সময় লাগে প্রায় ২ঘন্টা।

    এবিষয়ে তামাবিল স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী সহ ভুক্তভোগী যাত্রী সাধারনের সাথে কথা হয়। নুরুল, রুমেল, নজির, কামাল, হুমায়ুন নামের কয়েকজন পাথর ব্যবসায়ী বলেন- ভাই এটা সড়ক নয় যেন মরণ ফাঁদ, একটি মহাসড়কে এরকম অবস্থা আমরা জীবনে কখনো দেখি নাই। আমরা অপেক্ষায় থাকি কখনো বাস মিনিবাস, মালবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে পড়বে। শুধু হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌছে দেওয়ার জন্য।

    জাফলং বল্লাঘাটের ক্ষুধা রেস্টুরেন্টের স্বতাধিকারী সফিকুল ইসলাম বিক্রমপুরী জানান- স্থানীয় দ্বায়িত্বশীলদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারনে সিলেট তামাবিল মহাসড়কের এই অবস্থা হয়েছে।

    বাস ও মিনিবাস যাত্রীরা বলেন- বর্তমান সরকারকে সাধারণ মৃত্যুর গ্যারান্টি দিতে হবে। তারা এসি রুমে বসে বিভিন্ন ট্যাক্স, ভ্যাট, বিদ্যুত, তেল ইত্যাদির জ্বালানীর দাম ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করছে। এছাড়া লক্ষ লক্ষ টাকা তামাবিল স্থল বন্দর ও জাফলং পাথর কোয়ারী হতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হলেও রাস্তাটির সংস্কার করার বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করছে না। বিশেষ করে স্থানীয়রা বলছে সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ এর অবহেলাকে দায়ী করে বলেন আমাদের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি সরকারকে দিতে হবে।

    এবিষয়ে সচেতন মহল বলে- রস্তার এমন অবস্থার জন্যই সড়ক ও জনপথের দূর্নিতিবাজ কর্মকর্তারাই দায়ী। তাদের প্রতিষ্টানের নিযুক্ত লেবার জামালগং সিন্ডিকেটের দুর্নীতির কারনে সিলেট-তামাবিল মহা সড়কের এমন অবস্থা। সিন্ডিকেট যদি সওজ কর্মকর্তাদের নামে চাঁদাবাজির জন্য তামাবিলের অসাধু ব্যবসায়ীদের নিকট মহাসড়কের তামাবিল হতে জৈন্তাপুর পর্যন্ত মহা সড়কের দুই পাশ্বের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভরাট করে পাথর ডাম্পিংয়ের ইয়ার্ড নির্মানের একসানা বন্দোবস্থ সুযোগ না দিত তাহলে সওজের ভুমি ও ড্রেন সমুহ ভরাট হত না। করে ভাড়া না দিত তাহলে সড়কের এমন করুন দশা হতোনা। দুর্নীতিবাজ লেবার সিন্ডিকেটের কারণেই সড়কটির এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

    জাফলংয়ের পাথর ব্যবসায়ী ফজলুল হক জানান- প্রতিদিন ব্যস্ততম এ সড়ক দিয়ে সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সরকারী আমলা, সামরিক, বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ রাষ্ট্রের জনগুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিদের পদচারনা ঘটে। সদিচ্ছার অভাবে সড়কটির দুরবস্থা তাদের কাহারো হৃদয়কে স্পর্শ করেছে না।

    এবিষয়ে জানতে স্থানীয় সংসদ সদস্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি, সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ এর মোবাইল (০১৭১১-৩২৭৬৮৯) ফোনে একাধিক বার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।