অবৈধ শ্রমিকদের দুঃসময় এখন মালয়েশিয়ায়,চলছে হয়রানী

    0
    447

    ডেস্ক নিউজঃ মালয়েশিয়ায় এখন অবৈধ বাংলাদেশিসহ শ্রমিকদের দুঃসময় চলছে। কোনোভাবেই অবৈধ শ্রমিকরা আর সেদেশে থাকতে পারবেন না। আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে অবৈধ শ্রমিকদের নিজ নিজ দেশে ফিরতে হবে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশি অবৈধ শ্রমিকদেরও দেশে ফিরে আসতে হবে। আর যারা ফিরবেন না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে দেশটির সরকার।

    মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে থাকা বিদেশি শ্রমিকদের বৈধ করতে ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে রি-হায়ারিং প্রকল্প হাতে নেয় দেশটি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নিবন্ধন করে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়। দফায় দফায় এ প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছিল। সর্বশেষ ৩০ জুন এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে অনেক অবৈধ বাংলাদেশি এ প্রকল্পের সুযোগ নিতে পারেননি।

    মালয়েশিয়ায় বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় দুই লাখ কর্মীই অবৈধ। যাদের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দিতেই রি-হায়ারিং প্রকল্প গ্রহণ করেছিলে দেশটির সরকার। রি-হায়ারিং প্রকল্পে নিবন্ধন শেষ ধাপে অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দেবে বলেও জানিয়েছিল দেশটি। তবে অনেক বাংলাদেশির পাসপোর্ট ও কাগজপত্র না থাকায় তারা এ সুযোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

    মালয়েশিয়ায় রি-হায়ারিং প্রকল্প প্রায় আড়াই বছর ধরে চলেছে। আর এ সময়ের মধ্যে অবৈধ শ্রমিকদের ধরতে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছে দেশটির সরকার। এসব অভিযানে ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের নাগরিকদেরও গ্রেফতার করা হয়। গত আড়াই বছরে প্রায় তিন হাজার অবৈধ বাংলাদেশিকে গ্রেফতারও করে মালয় সরকার।

    অবৈধ কর্মীদের ফেরাতে দেশটির সরকার থ্রি-প্লাস ওয়ান স্কিম চালু করেছে। এ স্কিমের আওতায় একজন অবৈধ কর্মী মালয়েশিয়া এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশনে চারশ’ রিঙ্গিত জমা দিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন।

    তবে অনেক বাংলাদেশি অভিযোগ করেছেন, এয়ারপোর্টে গেলে চারশ’ রিঙ্গিতের জায়গায় আটশ’, হাজার বা বারশ’ রিঙ্গিত নেয়া হচ্ছে। আবার অনেককে হয়রানি করা হচ্ছে। সে কারণে অনেকেই এয়ারপোর্টে গিয়ে এ সুবিধা নিতে পারছেন না।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুয়ালালামপুর থেকে এক বাংলাদেশি কর্মী জানান, অনেক অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফিরতে চায়। তবে এয়ারপোর্টে বেশি রিঙ্গিত দেয়া আর হয়রানির জন্য ফিরতে পারছেন না। চারশ’ রিঙ্গিত দিয়ে ফিরতে বলা হলেও হাজার রিঙ্গিত নেয়া হচ্ছে। আবার অনেকের কাছে এ রিঙ্গিত দেয়ার ক্ষমতাও নেই বলেও জানান তিনি।

    এদিকে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সেরি মুস্তাফার আলী জানিয়েছেন, আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে এখান থেকে সব অবৈধ শ্রমিককে থ্রি-প্লাস ওয়ান পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। যারা ওই তারিখের মধ্যে দেশে ফিরবেন না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

    তিনি আরো বলেছেন, বৈধকরণ প্রকল্পে যারা নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের আটক করা হবে। দেশের নিরাপত্তা রক্ষার তাগিদে কোনো পক্ষের সঙ্গে আপসে যাবে না মালয়েশিয়ার অভিবাসন প্রশাসন।

    অপরদিকে সম্প্রতি মালয়েশিয়ার স্থানীয় পত্রিকা স্টার অনলাইন সে দেশের সরকারের বরাত দিয়ে জিটুজিতে ফেরার কথা প্রকাশ করেছে। গত ২৯ জুলাই মালয়েশিয়ার স্থানীয় পত্রিকা স্টার অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারান বলেন, ‘মালয়েশিয়ার সরকার শ্রমিক নিয়োগে আবারও পুরনো ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাচ্ছে। আমরা জিটুজি প্লাস আর চাচ্ছি না। যদি আবার কিছু হয় তাহলে জিটুজিতেই হবে। জিটুজিতে শ্রমিক নিয়োগ করলে মধ্যসত্ত্বভোগীদের আর কোনও ভূমিকা থাকবে না এবং দুর্নীতি হওয়ারও সুযোগ কম থাকবে।’

    সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ রফতানির ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার জিটুজি প্লাস পদ্ধতির কারণে নেপাল নড়েচড়ে বসেছে। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ রেখেছে দেশটি। নেপাল সরকার বর্তমান ব্যবস্থায় মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি প্রক্রিয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে।

    নেপালের লেবার এটাশে সুত্রে জানা গেছে, সেদেশের সরকার মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানিতে অনেক অনিয়ম খুঁজে পায়। নেপাল সরকারের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে— বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রেখে একচেটিয়া ব্যবসা ধরে রাখতে চাচ্ছে মালয়েশিয়া।

    মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে মালয়েশিয়ার মানব সম্পদমন্ত্রী আরও বলেন, ‘শ্রমিকরা কখন দাস নয়। বিদেশি শ্রমিকদের সম্মান দিতে হবে। আগে জিটুজিতে কোনও সমস্যা ছিল না, তাই আমরা আবার জিটুজিতে ফেরত যেতে চাই।’