অবশেষে নয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড

    0
    274

    চল্লিশ বছর বাদে লর্ডসের বারান্দায় বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট দল হিসেবে ইংল্যান্ড। এই লর্ডসে ১৯৭৯ বিশ্বকাপে ফাইনাল হেরেছিল ক্রিকেটের জনক দেশটি। চল্লিশ বছরে চার-পাঁচটি ক্রিকেট প্রজন্ম পেরিয়ে গেছে ইংলিশদের। জিওফ বয়কট থেকে ইয়ন মরগানদের কাঁধে চেয়েছে স্বপ্ন ছোঁয়ার ভার। মধ্যে ভিন্ন দেশে মাইক গেটিং থেকে ইয়ান বোথামরা স্বপ্নের কাছে গিয়ে হতাশায় শেষ করেছেন। রোদ পড়া কারুকাজ করা তামাটে লর্ডসের বারান্দায় সেই বিরুদ্ধ ইতিহাস জয় করতে নামেন বাটলার-স্টোকসরা। নক কাঁটা, দম বন্ধ করা ম্যাচ টাই হয়। ফুটবলের সুবাদে বিশ্বকাপ ফাইনালে টাই দেখার ভাগ্য হয়েছে অনেকের। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল প্রথম টাই। আবার সুপার ওভারের দম ফাঁটা উচ্ছ্বাস। তাতেও টাই হয় ম্যাচ। পরে বাউন্ডারি ব্যবধানে এগিয়ে থেকে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। মুকুট ওঠে পোমসদের মাথায়।

    প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। জবাব দিতে নেমে ঠিক ২৪১ রানেই অলআউট হয় ইংলিশরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৫ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। তৃতীয় ও চতুর্থ বল থেকে ১২ রান পেয়ে যায় তারা। শেষ দুই বলে দুই রান নিয়ে রান আউটে দুই উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। নিয়ম অনুযায়ী পরে ব্যাটিং করা দল সুপার ওভারে শুরুতে ব্যাটিং করে। দারুণ ইনিংস খেলা বাটলার এবং স্টোকসকে নামায় ইংল্যান্ড। তারা ট্রেন্ট বোল্টের ওভারে তোলেন ১৫ রান। নিউজিল্যান্ডও তোলে ১৫ রান। তারা ব্যাটিংয়ে নামায় গাপটিল এবং জেমি নিশামকে। আর্চারের বলে নিতে পারে ঠিক ১৫ রান। কিন্তু ম্যাচে ২৪ বাউন্ডারি মারে ইংল্যান্ড। আর কিউইরা মারে ১৯ বাউন্ডারি। তাতেই চ্যাম্পিয়ন হয় ইংলিশরা।

    এ নিয়ে লর্ডসে পাঁচটি বিশ্বকাপের ফাইনাল গড়াল। আগের চারটিতে দেখতে হয়েছে ইংল্যান্ডকে। একবার ফাইনালে হারা দল হিসেবে। বাকিগুলো মাঠে কিংবা টিভিতে বসে দর্শক হিসেবে। কিন্তু এবার ভিন দেশি আইরিশ যুবকের হাত ধরে শিরোপা উচিয়ে ধরল ইংল্যান্ড। আগের তিনবার ফাইনালে গিয়ে হারের ইতিহাস রুদ্ধশ্বাস জয়ে রাঙাল। জোফরা আর্চার নামক ভিন্ন দেশি তারাটাকে দলে নেওয়া নিয়েও হয়েছে অনেক কথা। কিন্তু সুপার ওভারে তিনিই তো ম্যাচটা টাইয়ে আটকে রেখে জয়টা তুলে দিলেন ক্রিকেটের জনক দেশটার হাতে।

    টস জিতে নিউজিল্যান্ড ব্যাট করতে নেমে বড় সংগ্রহ পায়নি। আসরের তুলনায় বড় রান নয়। কিন্তু ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ভারত শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৮৩ রানে আটকে দেয়। ইংল্যান্ডের কথাই ধরুন। অস্ট্রেলিয়া ১৯৮৭ বিশ্বকাপে ২৫৩ রান করেও ইংলিশদের আটকে দেয়। ১৯৯২’র আসরে পাকিস্তান পোমসদের থামায় ২৪৯ রান তুলে। কিউইরাও এবার আড়াইশ’র আশপাশেই রান তোলে। ইতিহাস বলে ফাইনালে এই রান তোলা ছেলে খেলা নয়। কিউইদের হাতে আবার দারুণ বোলিং লাইন আপ। ব্লাক ক্যাপসরা তো বোলিং আক্রমণ দিয়েই ফাইনালে এসেছে। কোন ম্যাচে তিনশ’ রান না করেও খেলছে ফাইনালে। বোলাররা ঠিকই আটকে দেয় ইংল্যান্ডকে। কিন্তু ভাগ্য বলে বাউন্ডারিতে এগিয়ে থেকে শিরোপা উচিয়ে ধরে ইংল্যান্ড।

    ফাইনাল ম্যাচের নায়ক হন বেন স্টোকস। তিনি খেলেন ৮৪ রানের হার না মানা ইনিংস। আবার সুপার ওভারেও রান এনে দেন দলকে। এছাড়া জেসন রয় খেলেন ১৮ রানের ইনিংস। ক্রিজে এসে ধুঁকতে ধুঁকতে ৩০ বলে ৭ রান করে আউট হন জো রুট। এরপর দারুণ খেলা জনি বেয়ারস্টো ৩৬ রানে ফার্গুসনের বলে বোল্ট হন। সেই চাপ জস বাটলার এবং বেন স্টোকস সামাল দেন। তারা গড়েন ১১০ রানের জুটি। কিন্তু লকি ফার্গুসনের বলে বাটলার ফিরলে স্বপ্নে বড় ধাক্কা লাগে। বাটলার খেলেন ৫৯ রানের দারুণ এক ইনিংস।

    তার আগে নিউজিল্যান্ড ২৯ রানে প্রথম উইকেট হারায়। শুরুর ধাক্কা তারা সামাল দেন কেন উইলিয়ামসন এবং হেনরি নিকোলাসের ৭৪ রানের জুটিতে। নিকোলাস খেলেন ৫৫ রানের ইনিংস। উইলিয়ামসন করেন ৩০ রান। এরপর পথ হারায় কিউইরা। টম ল্যাথাম ৪৭ রান করলে পরে মাঝারি রানের ওই পুঁজি পায় কিউইরা। রস টেইলর আম্পায়ারের ভুল লেগ বিফোরের সিদ্ধান্তে ১৫ রান করে আউট হন। জিমি নিশাম করেন ১৯ রান। দলের হয়ে ১৬ রান করেন কলিন ডি গ্রান্ডহোম। ইংল্যান্ডের হয়ে ক্রিস ওকস এবং লিয়াম প্লাঙ্কেট নেন তিনটি করে উইকেট। কিউইদের হয়ে লকি ফার্গুসন এবং জিমি নিশাম তিনটি করে উইকেট নেন। কিন্তু দলকে জেতাতে পারেননি তারা। ইংল্যান্ড, শ্রীলংকার পরে টানা দু’বার বিশ্বকাপের ফাইনাল হারল নিউজিল্যান্ড। ওয়েবসাইট