অবশেষে টনক নড়েছে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের !

    0
    333

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১ সেপ্টেম্বর ,আশরাফুল ইসলামঃ  দুইদিনের মধ্যে জেলা থেকে কমিটি ঘোষনা করার প্রতিশ্র“তি দিয়ে বিগত দেড় মাসেও প্রকাশিত হয়নি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চুনারুঘাট উপজেলা ও চুনারুঘাট সরকারী কলেজ কমিটি। কমিটি ঘোষনা বিলম্ব হওয়ায় একাধিক পত্র-পত্রিকায় সংবাদ-প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় অবশেষে টনক নড়েছে জেলা ছাত্রলীগের। ফলে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উক্ত দুই কমিটি ঘোষনার সম্ভাবনার কথা শুনা যাচ্ছে।

    জানা যায়, গত ১১ জুলাই শনিবার সকাল ১১টায় চুনারুঘাট উপজেলা কমপ্লেক্সের মোস্তফা শহীদ মিলনায়নে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চুনারুঘাট উপজেলা ও চুনারুঘাট সরকারী (ডিগ্রি) কলেজ শাখা’র সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা ছাত্রলীগের কাউন্সিলে সভাপতি পদে ১৫ জন ও সাধারন সম্পাদক পদে ১৭ জন প্রার্থী জীবন-বৃত্তান্ত দাখিল করেন।

    কলেজ কমিটির সভাপতি পদে ১০ জন ও সাধারন সম্পাদক পদে ৯ জন প্রার্থী হন। স্থানীয় আন্ত:দলীয় কোন্দল ও সংঘর্ষের আশংকায় জেলা নেতৃবৃন্দ পরবর্তী দুই দিনের মধ্যে জেলা থেকে কমিটি ঘোষনার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর থেকে বিভিন্ন কারনে চুনারুঘাট উপজেলা ও কলেজ কমিটি গঠন এবং ঘোষনার সময় দীর্ঘায়িত হয়েছে।

    এই বিলম্বিত সময়ে, গ্র“পিং-লবিং ও তদ্বিরে ক্লান্ত হওয়ায় গুরুত্বপূর্ন পদ দখলের প্রতিযোগিতাও কমে গেছে। কাউন্সিল অধিবেশনে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী জীবন বৃত্তান্ত দাখিল করলেও পরিচিতি লাভের আশায় অথবা এমনি এমনি প্রার্থী হওয়া ছাত্রনেতাদের উপস্থিতি এরপর থেকে কমতে থাকে।

    শেষ পর্যন্ত, যারা প্রার্থিতা ধরে রেখেছেন তাদের মধ্যে উপজেলা কমিটির সভাপতি পদে সোহেল আরমান ও শফিকুল ইসলাম রুবেল বিবেচনায় রয়েছেন বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। উক্ত পদে, অন্যান্য আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে, একজন ইসলামী ছাত্রসেনা থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল হয়ে কাউন্সিলের পূর্বে পদলাভের আশায় ছাত্রলীগে যোগ দেন।

    যেনতেন প্রকারে সভাপতির পদে অধিষ্ঠিত হতে উক্ত দলছুট নেতার নানামূখী তৎপরতার কথা শুনা গেলেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ন পদলাভের প্রতিযোগিতায় তিনি অনেকটা পিছিয়ে পড়েছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ একজন জানান। আরেকজন আলোচিত প্রার্থী, বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায়িক জটিলতায় জড়িত থাকায় ও বিতর্কিত ইমেজের কারনে তিনিও আর বিবেচনায় আসছেন না বলে জানায় চুনারুঘাটের ছাত্রলীগের সকল স্তরের নেতা-কর্মীরা। অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ও সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নিয়মিত শফিকুল ইসলাম রুবেল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।

    তবে, সাংস্কৃতিক কর্মী সোহেল আরমান সর্বক্ষেত্রে সহজ, সাবলীল ও নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম বলে মন্তব্য করেন উক্ত ছাত্রনেতা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অপরাপর সংগঠনের সাথে সাংগঠনিক যোগাযোগ রক্ষা করে ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব প্রদানে নির্ভরশীল সোহেল আরমানকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদের প্রথম দাবীদার হিসাবে দেখছেন ছাত্রলীগ তথা আওয়ামী পরিবারের সকলে। বিভিন্ন সামাজিক, দাতব্য ও সেবামূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় ব্যাপক পরিচিতির পাশাপাশি দলীয় ও সাধারন মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন সোহেল- এমন মন্তব্য করার সাথে সাথে সোহেলকে সভাপতির দায়িত্ব প্রদানের জন্য জোর দাবী জানান অনেকে।

    চুনারুঘাটের প্রগতিশীল ছাত্রসমাজ ও রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, সভাপতি পদে বিবেচনাযোগ্য শফিকুল ইসলাম রুবেল ও সোহেল আরমান এর নাম আলোচনায় থাকলেও বাছাই করার জন্য সোহেল আরমানকে নির্দ্বিধায় সমর্থন দিয়ে আসছেন সর্বস্তরের মানুষ। অন্যদিকে, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক পদে শেষ পর্যন্ত ইফতেখারুল আলম রিপনকেই মনোনীত করবেন জেলা কমিটি, বলে আশা প্রকাশ করেন চুনারুঘাট পৌর ছাত্রলীগের একজন।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে উক্ত পৌর ছাত্রলীগ নেতা বলেন, অনেকের ধারনা রিপনের, চাচা মো. আবু তাহের স্থানীয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হওয়ায় রিপনের পক্ষে উনি জেলা কমিটির উপর চাপ সৃষ্টি করেছেন। এবং উক্ত আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক অযৌক্তিকভাবে জেলা নেতৃবৃন্দের নিকট ভাতিজার জন্য কোন প্রকার তদ্বির করা বা চাপ সৃষ্টি করার কোন নজীর দেখেননি বলেও তিনি জানান।

    প্রকৃতপক্ষে, চুনারুঘাট সরকারী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সদ্যবিদায়ী সভাপতি ইফতেখারুল আলম রিপন, সংগঠক হিসাবে ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র স্থান দখল করেছেন, বলে মত প্রকাশের সাথে সাথে রিপন ও তার চাচা সম্পর্কে মনগড়া ও ভুলধারনা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান উক্ত ছাত্রলীগ নেতা।

    তবে, চুনারুঘাট উপজেলায় ছাত্রলীগের কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতা রক্ষা ও সাংগঠনিক ভিত্তি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এই মূহুর্তে রিপন এর বিকল্প হতে পারে না বলে একবাক্যে স্বীকার করেন চুনারুঘাটের অভিজ্ঞমহল। পাশাপাশি, সাধারন সম্পাদক পদের আরেকজন দাবীদার শাহজাহান সামী সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি, তবে উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিকট থেকে তার প্রার্থিতা সম্পর্কে জানা যায়।

    এছাড়া, চুনারুঘাট সরকারী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পদের জন্য এখনও হাল ধরে আছেন তোফায়েল আহমেদ তালুকদার সায়েম ও মোহাম্মদ রাসেল। কলেজ কমিটির সাধারন সম্পাদক পদে অন্তত ৯ জন প্রার্থী হয়ে থাকলেও সকল পদের সকল প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত, গ্রহনযোগ্যতা ও রাজনীতিক কর্মকান্ড বিবেচনা করে কমিটি গঠন করা হবে বলে জানা যায়।

    এদিকে, গত দেড় মাসে বিভিন্ন কারনে চুনারুঘাটে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে মনোযোগ দিতে পারেননি বলে জেলা নেতৃবৃন্দ। তবে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কমিটি চুড়ান্ত করার পাশাপাশি পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের উপর জোর দিবে জেলা কমিটি। জেলা’র দায়িত্বশীল একজন ছাত্রলীগ নেতা জানান, আগামী ১০ সেপ্টেম্বরকে আমরা ডেটলাইন হিসাবে ধরে নিয়েছি এবং এসময়ের মধ্যে আলোচিত দুই কমিটি ঘোষনা করে দুইমাস পূর্তির হাত থেকে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারব বলে আশা করি। কমিটি ঘোষনায় এমন সম্ভাবনার কথা জানান আরো অনেকে।

    উল্লেখ্য, চুনারুঘাট উপজেলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০০৩ সালে এবং ২০০৯ সালে চুনারুঘাট সরকারী কলেজ কমিটি গঠনের পর এবছর সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলের পর থেকে পদ লাভের আশায় ছাত্রনেতৃত্বকামী যুবকদের সকল প্রকার অপ্রত্যাশিত আচরনে নতুন কমিটি গঠন অনিশ্চিত হওয়ার ফলে ঝুলে আছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের স্থানীয় কর্মকান্ড।

    বিতর্কিত ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি, প্রাথমিক যোগ্যতা না থাকলেও বা যোগ্যতা হারিয়ে ফেললেও সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের পদ ঘিরে এমন অনেকের নাম আলোচনায় আসছে যা ছাত্ররাজনীতির জন্য অশনি সংকেত এবং অযোগ্য কাউকে মনোনীত করা হলে অত্র উপজেলার নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতির প্রতি স্থানীয় ছাত্রসমাজ বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন সাবেক ছাত্রনেতারা।

    বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষের প্রধান শক্তি ও একমাত্র ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের তৃনমূলে স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠতে চুনারুঘাট উপজেলা ও চুনারুঘাট সরকারী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন ও যথাশীঘ্র সম্ভব সময়ে কমিটি প্রকাশের জন্য ছাত্রলীগের জেলা নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান সংশ্লিষ্ট সকলে।