অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন বিদেশী কূটনৈতিক

    0
    203

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৭মার্চঃ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন কূটনৈতিক বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকরা নন, অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন কূটনৈতিক দায়িত্বে নিযুক্ত বিদেশি ব্যক্তি ও কূটনীতিকরা। গতকাল ঢাকার উত্তর কোরিয়ার এক কূটনীতিকের ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয়েছে ২৭ কেজি সোনা। এর আগে জানুয়ারিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা আটক হয়েছিলেন জাল মুদ্রাসহ। বর্তমানে পাকিস্তান হাইকমিশনে কর্মরত আরও দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে মানি লন্ডারিংয়ের সুস্পষ্ট অভিযোগ।

    এ ছাড়া ভিসা ট্রেডিং ও ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের একটি ও এশীয় একটি দূতাবাসে কর্মরতসহ ছয়জনের সম্পৃক্ততার তথ্যও আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। তাদের বিরুদ্ধে সন্দেহ থেকে ছায়া তদন্ত চললেও নেওয়া যাচ্ছে না ব্যবস্থা। আবার যারা ধরা পড়ছেন তাদের কূটনৈতিক দায়মুক্তির কারণে বাংলাদেশের আইনের আওতায় বিচারের সম্মুখীন করা যাচ্ছে না। অবশ্য কূটনৈতিক নীতি-নৈতিকতা ভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যেমন আজ বা আগামীকাল বহিষ্কার হতে যাচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার ঢাকা দূতাবাসের প্রথম সচিব (কমার্শিয়াল) সন ইয়াং।

    জানা যায়, গতকাল রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সোনা উদ্ধার প্রক্রিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার ঢাকার রাষ্ট্রদূতসহ পাঁচ কূটনীতিকের জড়িত থাকার তথ্য পায় ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে সেখানে পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তা উপস্থিত হয়ে জানতে পারেন, সিঙ্গাপুর থেকে আসা দূতাবাসের প্রথম সচিব (কমার্শিয়াল) সন ইয়াংকে রিসিভ করতে বিমানবন্দরে উপস্থিত হন অন্য কূটনীতিকরা। আর সন ইয়াংয়ের ব্যাগে পাওয়া যায় ২৭ কেজি সোনা। নড়েচড়ে বসে মন্ত্রণালয়।

    কিন্তু ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে কূটনীতিকদের মুক্ত করে পররাষ্ট্র দফতর। তবে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসের ওই কূটনীতিককে মুক্ত করা হলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। কারণ তিনি কূটনৈতিক দায়িত্বের নীতি-নৈতিকতার বরখেলাপ করেছেন। তাকে ঢাকা থেকে বরখাস্ত করা হবে।

    সূত্রমতে, বরখাস্ত হলে উত্তর কোরিয়া ফিরে যাবেন ওই কূটনীতিক। তখন উত্তর কোরিয়া তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।এর আগে, ১২ জানুয়ারি রাতে ঢাকার বনানীর মৈত্রী মার্কেট এলাকায় মজিবুর রহমান নামে এক বাংলাদেশি ও পাকিস্তান দূতাবাসের ভিসা কর্মকর্তা মাযহার খানকে গোপন বৈঠকের সময় আটক করে পুলিশ। এরপরই গোয়েন্দারা মজিবুর ও মাযহারকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বনানী থানায় নিয়ে যান। খবর পেয়ে সেদিনই রাত ১০টার দিকে ঢাকার পাকিস্তান দূতাবাসের প্রথম সচিব সামিনা মাহতাব বনানী থানায় উপস্থিত হয়ে মাযহার খানকে নিজের হেফাজতে নিয়ে যান।

    অন্যদিকে মজিবুর রহমানকে পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু দেশে ফিরে যান মাযহার খান। তাকে ঢাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মাযহার খান দূতাবাসের দায়িত্বে থাকাকালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জাল মুদ্রার নেটওয়ার্ক গড়েছিলেন। এ ঘটনায় এখনো তদন্তের আওতায় রয়েছেন পাকিস্তান হাইকমিশনের অন্য কর্মকর্তারা। তদন্ত চলছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকেও।

    এ কারণে গত মাসে মুহাম্মদ মাযহার খান ও অন্য ভিসা কর্মকর্তা শাহনাজ কাওসারের ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।এর বাইরে ঢাকা মহানগর পুলিশের সূত্রানুসারে, ভিনদেশি বিভিন্ন অপরাধী ঢাকায় সক্রিয় থেকে অপরাধ পরিচালনা করার সময় দূতাবাস কর্মকর্তাদের প্রশ্রয়ও পান। পুলিশের বিশেষ শাখার কাছে এমনই একটি অভিযোগ আসে গত বছরের শেষার্ধে।

    অভিযোগ পাওয়া যায়, মধ্যপ্রাচ্যের এক কূটনীতিকের ছোট ভাই পরিচয়ে একটি গ্রুপ ভিসা ট্রেডিংয়ের ব্যবসা করছে। কিন্তু জানাজানি হওয়ার পর এক কূটনীতিকের বাসায় আশ্রয় নেন ওই গ্রুপের সদস্য। পরে সেই কূটনীতিকের ছোট ভাইকে বিশেষ কায়দায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিদেশে। এ কারণে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি পুলিশ।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সব কূটনীতিক যে দায়মুক্তির আওতায় থাকেন তা নয়। ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় দুই ধরনের ধারা রয়েছে। ‘ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশন্স-১৯৬১’ অনুসারে দূতাবাস বা হাইকমিশন অর্থাৎ কূটনৈতিক মিশনে দায়িত্বরত কূটনীতিকরা পুরোপুরি সুরক্ষিত থাকেন।

    সরকার তাদের কর্মস্থল এবং বাসাবাড়ি ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, অতি গুরুতর কারণ ছাড়া তাদের গ্রেফতার করা যাবে না, তাদের সম্মান সমুন্নত রাখতে হবে। তবে যারা কনস্যুলেটে কাজ করেন তারা কূটনীতিক ঠিকই, কিন্তু তারা কূটনৈতিক মিশনে কর্মরত কূটনীতিকদের মতো এত সুযোগ-সুবিধা পান না। দায়মুক্তি, মামলা-মোকদ্দমা থেকে অব্যাহতি এসব সুযোগ-সুবিধা তারা পুরোপুরি পান না।

    এই শ্রেণির কূটনীতিকদের অধিকার, সুযোগ-সুুবিধা বর্ণনা করা হয়েছে ‘ভিয়েনা কনভেনশন অন কনস্যুলার রিলেশন-১৯৬৩’তে। বাংলাদেশ এ দুই ধারায় স্বাক্ষর করেছে ১৯৭২ সালে। প্রথম কনভেনশনটিতে ৫৩টি ধারা। এখন পর্যন্ত ১৮৯টি দেশ এ কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে। দ্বিতীয়টির ধারা সংখ্যা ৭৯। ১৭৬টি দেশ স্বাক্ষর করেছে।বাংলাদেশ প্রতিদিন।